লাইফস্টাইল ডেস্ক: করোনার প্রথম ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় টিকা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে নিজে যেমন সুরক্ষিত হবেন তেমনি আপনার পরিবার, সমাজ তথা দেশেরও মঙ্গল হবে। যদি প্রথম ডোজে কারো পার্শ্বপতিক্রিয়া হয়েও থাকে তারপরেও দ্বিতীয় ডোজ নিতেই হবে যদি না স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক বিশেষ কোনো কারণে না নেওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রথমবার টিকা নেওয়ার পর টিকা দেওয়া স্থানে কিছুটা ব্যথা, জ্বর বা রাতে কাঁপুনি, বমি বমি ভাব, শরীর ব্যথা, অবসাদ এবং ক্লান্তির মতো উপসর্গ ছাড়া তেমন বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। যেকোনো টিকা নিলেই এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। মারাত্মক কোনো অ্যালার্জি না থাকলে এবং বড় ধরনের কোনো জটিলতা না থাকলে ভয়ের কিছু নেই। তাই, প্রথম টিকা নিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে দ্বিধা বা দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়। মনে রাখবেন, দ্বিতীয় টিকা না নেওয়া পর্যন্ত ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকর হবে না।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ইউনিসেফ করোনার টিকা নেওয়ার আগে, টিকা নেওয়ার সময় ও টিকা নেওয়ার পর করণীয় সম্পর্কিত বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে।
নেওয়ার আগে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে-
১.করোনার বিভিন্ন ধরনের টিকা ও সেগুলোর কার্যক্ষমতা সম্পর্কে চাইলে জেনে নিতে পারেন। দক্ষিণ এশিয়ায় কীভাবে টিকা দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা ভালো।
২.আপনি যে টিকা নিচ্ছেন তা বিশ্বস্ত কোন উৎস, যেমন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ইউনিসেফ থেকে এসেছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হোন। সন্দেহ হলে নিকটস্ত স্বাস্থ্যসেবা অথবা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
৩.টিকা নিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই কিছু বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। যেমন, নাক, মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখে এমন মাস্ক ব্যবহার করুন। সঙ্গে স্যানিটাইজার নিন। যে মোবাইল নম্বরে টিকা গ্রহণের তথ্য সম্মলিত বার্তা এসেছে, আপনার পরিচয়পত্র এবং প্রথম টিকা দেওয়ার পর দ্বিতীয় টিকা দেওয়ার তারিখ লেখা টিকা কার্ডটি সঙ্গে রাখুন।
করোনার টিকা নেওয়ার আগে আলাদা তেমন প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। এই টিকা অনেক নিরাপদ। এরপরও কিছু বিষয় মেনে চললে ভালো।
টিকা নেওয়ার সময় কী কী করা উচিত জেনে নেওয়া যাক-
১.ঢিলেঢালা কাপড় পড়ুন যাতে করে স্বাস্থ্য্যকর্মীরা খুব সহজেই আপনার বাহুতে টিকা দিতে পারেন।
২.আপনার কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা বা সে সময়ে কোন ওষুধ সেবন করে থাকলে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর্মীকে তা জানান। মানে, নিবন্ধনপত্রে সঠিক মেডিক্যাল হিস্ট্রি দিতে হবে।
৩.কোনো খাবারে অ্যালার্জি থাকলে সে ধরনের খাবার টিকা নেওয়ার আগে থেকেই পরিহার করা ভালো।
৪.টিকা নেওয়ার আগে থেকে বেশি করে পানি পান করতে হবে।
৫.যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা ডায়াবেটিসের খাদ্যতালিকা মেনে চলুন। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের যে ওষুধগুলো আছে সেগুলো যেন বাদ না যায়। এছাড়া অন্যান্য যে ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন সবই খাবেন।
৬.টিকা নেওয়ার দিন বা তার আগে যদি জ্বর, কাশি বা করোনার অন্য কোনো লক্ষণ আপনার শরীরে প্রকাশ পায় তাহলে টিকা নিতে যাবেন না। কারণ করোনা আক্রান্ত হলে আপনি টিকাকেন্দ্রে এই ভাইরাস ছড়াতে পারেন। সেক্ষেত্রে টিকাকেন্দ্রে ফোন দিয়ে আপনার করোনার লক্ষণের বিষয়ে জানাতে পারেন। করোনার লক্ষণ শেষ হওয়ার ১৪ দিন পর আপনি টিকা নিতে পারেন।
৭.যারা টিকা নিতে ভয় পান, তারা টিকাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় সঙ্গে কাউকে নিয়ে যেতে পারেন। কোনো স্বজন পাশে থাকলে মনে সাহসের পাবেন।
টিকাকেন্দ্রে ও টিকা নেওয়ার সময় যা করণীয়-
১.সবসময় মাস্ক পরে থাকুন। এসময় অবশ্যই মাস্কে বা মুখে হাত দিবেন না।
২.অন্যদের কাছ থেকে অন্তত ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন।
৩.টিকাকেন্দ্রের দরজা, টেবিল, চেয়ার বা যেকোনো কিছু ধরার পর অবশ্যই হাত ভালোভাবে স্যানিটাইজ করুন।
৪.করোনার টিকা হাতের ওপরের অংশে মাংসপেশীতে দেওয়া হয়। এটি দিতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে এবং মৃদু ব্যাথা অনুভব হতে পারে।
৫.টিকা দেওয়ার সময়টাতে অবশ্যই মুখে মাস্ক রাখবেন এবং স্বাস্থ্যকর্মী থেকে আপনার মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখবেন। এতে দুজনই নিরাপদ থাকবেন।
৬.বড় করে নিঃশ্বাস নিন এবং সিরিঞ্জের দিকে তাকাবেন না।
টিকা নেওয়ার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক। এ থেকে বোঝা যায় যে টিকা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা শুরু করেছে।
টিকা নেওয়ার পর সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় এবং এগুলো কয়েক দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়-
১.যে হাতে টিকা নিয়েছেন সেখানে ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং লালচে ভাব হতে পারে।
২.সর্দি ও মৃদু জ্বর। অবসাদ ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। মাথাব্যথা, জয়েন্ট অথবা পেশীতে ব্যথা হতে পারে।
৩.টিকা নেওয়ার পর ১৫-৩০ মিনিট টিকাকেন্দ্রেই অবস্থান করুন। তাৎক্ষনিক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না সেটা পর্যবেক্ষণের জন্য এটি অবশ্যই করতে হবে।
৪.করোনার টিকায় বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম দেখা যায়, যার মধ্যে আছে চুলকানি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া, বড় ধরনের অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া, শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীকে জানান। সাধারণত, টিকা নেওয়ার প্রথম ৩০ মিনিটেই এসব লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই এই সময়টাতে টিকাকেন্দ্রে থাকলে যেকোনো সমস্যায় প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারবেন।
বাড়িতে আসার পর যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তাহলে কয়েকদিন দৈনন্দিক কাজে এর প্রভাব পড়তে পারে।
সে সময় কী কী করা উচিত জেনে নিন-
১.পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। এসময় বেশি করে তরল খাবার খান। কোনো ধরনের ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
২.অনেক বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে এবং তা যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় স্থায়ী হয়, তাহলে যে স্বাস্থ্যকর্মী আপনাকে টিকা দিয়েছেন তাকে বিষয়টি জানান।
৩.টিকা দেওয়ার স্থানে ব্যথা হলে একটি পরিষ্কার ঠান্ডা বা ভেজা কাপড় দিয়ে ব্যথা কমাতে পারেন।
৪.বমি দেখা দিলে অমিডন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন।
৫.সুষম খাবার খান, রাতের ঘুম যেন পর্যাপ্ত হয় সেটি নিশ্চিত করুন। দৈনন্দিন রুটিনে কোনো ওষুধ থাকলে চালিয়ে যান। যেমন-ডায়াবেটিসের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, কিডনি রোগের ওষুধ ইত্যাদি।
৬.চা পানের অভ্যাস থাকলে চা পান করুন। স্বাভাবিক সব কাজকর্ম করুন।
করোনার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে বলা যায় যে আপনি ভাইরাস থেকে নিরাপদ। কারণ ভ্যাকসিন এসময়টাতে আপনার শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। টিকা নেওয়ার পরও করোনার প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো মেনে চলুন। নিজেকে ও অন্যকে নিরাপদ রাখতে ২০সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করুন। অন্যের কাছ থেকে অন্তত ১ মিটার দূরত্বে অবস্থান করুন। ভালোভাবে বাতাস চলাচল করে বা বাইরে খোলা পরিবেশে মানুষের সঙ্গে দেখা করুন। জনসমাগম বা যেখানে আপনি অন্যদের কাছ থেকে দূরত্ব মানতে পারছেন না তখন অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
সময় জার্নাল/এমআই