নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচার্স এন্ড ইমপোর্টার্স অব বাংলাদেশ এর মধ্যে মিডিয়া ফেলোশিপ প্রদান বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
(২২ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার সকাল ১০:০০ টায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের নতুন সভাকক্ষে স্বচ্ছ, বস্তুনিষ্ঠ, ভারসাম্যপূর্ণ ও দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার স্বীকৃতি ও সাংবাদিকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে মিডিয়া ফেলোশিপ প্রদান বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অব বাংলাদেশ (এএসবিএমইবি) এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সমঝোতা স্মারকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান এবং এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচার্স এন্ড ইমপোর্টার্স অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করেন এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আশরাফুল আম্বিয়া।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, এসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দীনসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, এসোসিয়েশনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অব বাংলাদেশ এর যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, নকল-ভেজাল কসমেটিকস বিষয়ে ভোক্তাদের সচেতন করার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে গৃহীত কর্মসূচির সার্বিক সফলতা কামনা করেন। সাংবাদিকদের মাধ্যমে ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়াতে এসোসিয়েশন এই কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, তিন মাস ব্যাপী এই ফেলোশিপের আওতায় দেশের টেলিভিশন, প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ফেলোশিপের আওতায় থাকবেন মোট ৩০ জন প্রতিবেদক। যারা এই তিন মাস সময়ে বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং কেইস স্টাডিতে অংশ নেবেন এবং এসবের ভিত্তিতে জনসচেতনতা বাড়তে প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। প্রকাশিত এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তীতে সেরা প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেন তিনি। ফেলোশিপে আবেদন (https://asbmeb.com/fellowship/) এসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক(কার্যক্রম) আতিয়া সুলতানা বলেন, পূর্বে এসোসিয়েশন এর সাথে অধিদপ্তর কর্তৃক স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের অংশ হিসেবে আজ মিডিয়া ফেলোশিপ প্রদানের লক্ষ্যে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মিডিয়া প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ভোক্তাদের নকল-ভেজাল প্রসাধনী বিষয়ে সচেতন করতে এই সমঝোতা স্মারক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচার্স এন্ড ইমপোর্টার্স অব বাংলাদেশের আহ্বায়ক আশরাফুল আম্বিয়া সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ। তিনি আরও বলেন, মানসম্মত প্রসাধনী প্রস্তুতকরণ ও বাজারজাতকরণে দেশীয় উদ্যোক্তাদের এসোসিয়েশন উদ্ভুদ্ধ করবে। তিনি ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে নিয়ে অধিদপ্তরের প্রচারণামূলক কাজে সহযোগিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
অধিদপ্তরের পরিচালক(কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যের শুরুতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, অধিদপ্তর ও এসোসিয়েশন কর্তৃক গৃহীত এই সমঝোতা স্মারক অভিনন্দন পাওয়ার মতো একটি উদ্যোগ।তিনি আরও বলেন, ভোক্তা স্বার্থ সমুন্নত রাখতে অধিদপ্তর কর্তৃক নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মিডিয়া ফেলোশিপ প্রদানের লক্ষ্যে আজ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার যে কার্যক্রমের সূচনা হলো তাতে সকলের সহযোগিতা কামনা করে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আয়োজন করা হয়েছে । তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে।
আলোচনায় মহাপরিচালক অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে কসমেটিকস পণ্যের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অসঙ্গতি যথা কসমেটিকস পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য এবং সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উপাদান, পরিমাণ, ব্যবহারবিধি, উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ না থাকা, প্রাইসগান মেশিনের সাহায্যে খুচরা বিক্রেতা নিজেই সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রদান করা, আমদানিকারক কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য কেটে অধিক মূল্য লেখা, বিদেশী পণ্য নকল করে দেশের অভ্যন্তরে তৈরি করে বিদেশী পণ্য হিসেবে বিক্রয় করা হয়, নকল কসমেটিকস পণ্যের ক্ষেত্রে সঠিক মানদন্ড না থাকা এবং বিএসটিআই কর্তৃক নিষিদ্ধ/অনুমোদনহীন Face Cream, Whitening Cream সহ অন্যান্য কসমেটিকস বিক্রয় ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন।
সভায় মহাপরিচালক বলেন, সকল কসমেটিকস প্যাকেটজাত। সেক্ষেত্রে মোড়কজাতকরণ বিধিমালা অনুসরণ করে পণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিদেশি কসমেটিকস এর ক্ষেত্রে আমদানীকারকের তথ্য থাকে না এবং আমদানীকারক কর্তৃক এমআরপি প্রদান করা হয় না। এছাড়াও কসমেটিকস পণ্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যা ভোক্তার ত্বকের ক্ষতি করছে।
তিনি বলেন, অধিদপ্তর ভোক্তার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সুরক্ষা প্রদান করেন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, দেশীয়ভাবে প্রসাধনী প্রস্তুতকরণ ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগকে আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। কেননা এর মাধ্যমে দেশের বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় জনসচেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের সম্পৃক্ত করার জন্য অধিদপ্তর ও এসোসিয়েশনের এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, অধিদপ্তরের প্রচারনা কার্যক্রমের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় আমরা এসসোসিয়েশনকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। আজকের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে অধিদপ্তরের সাথে এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচার্স এন্ড ইম্পোর্টার্স অব বাংলাদেশ এর যে পথ চলা শুরু হলো আগামী দিনে তা আরও মসৃণ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
আলোচনা শেষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভোক্তাদের প্রসাধনী বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করার এক নব দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হলো।
এমআই