জেলা প্রতিনিধি:
মিয়ানমার থেকে ভেসে আসা মর্টার শেলের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকায়। আজ সোমবার সন্ধ্যার পরে শব্দ ভেসে আসছে বলে জানান নাফ নদী সীমান্তের উংচিপ্রাং ও কাঞ্জরপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। এতে তাদের ভেতর আতঙ্ক কাজ করছে।
জানা গেছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলছে। হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের পূর্বে মিয়ানমারের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরা গ্রামে চলছে সংঘর্ষ। সংঘর্ষের প্রভাব সীমান্ত এলাকা টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এসে পড়ছে।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে থেমে থেমে খারাংখালী সীমান্তে গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এখন আমি সীমান্তে এলাকায় রয়েছি, লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’
হোয়াইক্যং উত্তরপাড়ার এক জেলে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেমে থেমে মর্টার শেলের শব্দ হয়, ভয়ে আছি। নাফ নদীতে মাছ শিকারে যেতে পারছি না। কষ্টে আছি। পরিবার কেমনে চালাব সেটি নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি। গত সপ্তাহ মিয়ানমারের গোলাগুলি বন্ধ ছিল। কয়েকদিন ধরে আবারও শুরু হয়েছে মর্টার শেলের শব্দ।’
সন্ধ্যা থেকে মিয়ানমারের থেকে ব্যাপক গোলার শব্দ ভেসে আসছে উল্লেখ করে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, ‘এখনো (সোমবার রাত সাড়ে ৮টা) তার সীমান্তে খারাংখালী সীমান্তের নাফ নদীর ওপারে গুলি, মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পায় সীমান্তের লোকজন। গত রাতও মিয়ানমার থেকে এপারে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। এতে সীমান্তের লোকজন ভয়ভীতির মধ্য রয়েছে।’
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ শোনা না গেলেও রাতে মাঝে মধ্যে থেমে থেমে মৌলভী বাজার, ওয়াব্রাং সীমান্তের পূর্বে মিয়ানমারে মর্টার শেলের শব্দ শোনা যায়। সীমান্ত এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’
জানা গেছে, মিয়ানমার মংডুও শহরের পাদংসা, কাদির বিল, হাইন্দা পাড়া গ্রামে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) জানিয়েছে, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদীতে বিজিবি এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা নাফ নদী ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছেন। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সব সময় প্রস্তুত বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
এদিকে, এখনও মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ৯ জন রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশকালে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। এর আগে চলতি মাসে প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছিল সীমান্তে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে কোস্ট গার্ড চট্টগ্রাম পূর্বজোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তাহসিন রহমান বলেন, ‘সীমান্ত আগের তুলনায় গোলার শব্দ কমেছে। এরপরও আমরা নাফ নদীতে টহল অব্যাহত রেখেছি। মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকালে আমরা ইতোমধ্য দুই শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করেছি।’
এমআই