মো. মাইদুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্যা আসে, বেড়িবাঁধ ভাঙে, প্লাবিত হয়ে গ্রামের পর গ্রাম নষ্ট হয়, ভেসে যায় ঘর-বাড়ি, সোনার ফসল, ঘের-পুকুরের মাছ। বিপন্ন হয় জনজীবন। সীমাহীন দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের পড়তে হয় বন্যার কবলে। তারপরও পায়না দীর্ঘস্থায়ী সমাধান টেকসই বেড়িবাঁধ!
দেশের দক্ষিণে পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলা। এ উপজেলার তিন দিকে নদী আরেকদিকে বঙ্গোপসাগর। নদীবেষ্টিত এ উপজেলার মানুষদের প্রতিবছরই ঝর-বন্যার কবলে পড়তে হয়। আর প্রতেক বন্যায় বাঁধ ভেঙে বা উপচে প্লাবিত হয় এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম।
এ দুর্ভোগের পরিত্রাণ চায় রাঙ্গাবালীর জনগণ। এ সমস্যার প্রধান সমাধান টেকসই বেড়িবাঁধ। তাই সম্প্রীতি ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের তান্ডবের পর উপজেলার মানুষের একটাই দাবি 'ত্রাণ নয়, চাই টেঁকসই বেড়িবাঁধ'।
ইয়াসের আঘাতে রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রায় ৫.৫ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ১৫ টি গ্রাম। এরপরই টেকসই বেড়িবাঁধ চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন এ অঞ্চলের বিভিন্ন মহলের মানুষ।
ইয়াসের প্রভাবে উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ছোটবাইশদিয়া গ্রাম, বাঁধ ছিঁড়ে প্লাবিত হয়। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনাল (বিইউপি) এর শিক্ষার্থী ওই গ্রামের ঝিলাম তাওহীদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, রাঙ্গাবালী উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের কে বলতে চাই আমাদের ত্রাণ লাগবে না। দয়া করে আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে বলেন, আমাদের উপজেলায় বেরিবাঁধ দরকার। তাহলে সাধারণ মানুষ খুশি হবে।
তার সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালীয়া বাজার থেকে কাউখালী পর্যন্ত বেরিবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় নিচু হয়ে গেছে, যাতে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি বেরিবাঁধ উপচে ভিতরে ঢুঁকে যায়। ইয়াস এর প্রভাবে পানি ঢুঁকে সাধারণ কৃষক এর ফসল নষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন পুকুর থেকে মাছ চলে গেছে। এভাবে সকল সাধারণ মানুষের সম্পদের ক্ষতি বছরের পর বছর হয়ে আসছে।
এই শিক্ষার্থী বলেন, টেকসই বেরিবাঁধ হলে এই সাধারণ মানুষের ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে আমরা বিশ্বাস করি।
একই গ্রামের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো: নাইম মীর বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় লোকালয় পানি ঢুকছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পুকুরের তলিয়ে মাছ নদীতে চলে যাচ্ছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হচ্ছে, পানির দূষণ ঘটছে, এর ফলে পানি বাহিত রোগ দেখা দিতে, গবাদিপশুর খাদ্য সংকট ও হতে পারে।
তিনি মনে করেন, রাঙ্গাবালী উপজেলায় বসবাসের জন্য সর্বপ্রথম টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
এইচ এম সোহেল বলেন, বেড়িবাঁধ আছে, কিন্তু সংস্কার করা প্রয়োজন। বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। টেকসই বেড়িবাঁধ রাঙ্গাবালীবাসীর এখন প্রাণের দাবি।
উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে 'ইয়াস'এর প্রভাবে বেশ কয়েকটি গ্রাম, চর প্লাবিত হয়েছে। ওই ইউনিয়নের সেফাত খান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, আমরা চরমোন্তাজে ত্রাণ চাইনা। আমরা ইউনিয়নের চারপাশে বেড়িবাঁধ চাই।
২৯ মে (শনিবার) রাঙ্গাবালী উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এসব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের এমপি মহিব্বুর রহমান মহিব। এসময় শিগগরই ভাঙা বাঁধ মেরামত এবং বিধ্বস্ত বাঁধ পুনঃনির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা চেয়ারম্যান ডাঃ জহির উদ্দিন আহম্মেদ জানালেন ,তিনিও জনগণের সাথে একমত, তিনি টেকসই বেড়িবাঁধারে ব্যাপারে জেলা পাউবো কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছেন। তিনি আশা করেন দ্রুতই রাঙ্গাবালীর বাঁধ সমস্যার নিরসন হবে।
উল্লেখ, ইয়াসের তাণ্ডবে এ উপজেলার সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে এ উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা, চিনাবুনিয়া, চরলতা, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিন, নয়ারচর, চরআন্ডা, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া, কাউখালী চর এবং বেড়িবাঁধবিহীন রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের চরকাশেমসহ অন্তত ১৫টি গ্রাম ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এতে ২ হাজার ৩৪০টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে ১১০টির। জোয়ারের তোড়ে পাঁচ হাজার ৫১০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও উপজেলার ৮৫০ পুকুর ও ৩০৮টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে মৎস্য চাষিদের প্রায় ৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে চালিতাবুনিয়া, চরমোন্তাজ ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
সময় জার্নাল/এমআই