সময় জার্নাল রিপোর্ট : চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদ্যমান সুবিধায় বছরে ৩৬ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর সক্ষমতা রয়েছে। আমদানি-রপ্তানিকারক, কাস্টমস, সিএন্ডএফ এজেন্টস, ব্যাংক, বেসরকারি আইসিডিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবহারীকারীরা সহায়তা করলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আরো কয়েক বছর অনায়াসে দেশের চাহিদা মেটাতে পারবে। মাত্র একদিনে ১০ হাজার ৬০ টিইইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং এবং ৫ হাজার ৩০ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টির পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের সক্ষমতা নিয়েও নতুন ধারণা লাভ করেছে। নতুন করে ১০৪টি ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ এবং পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল চালু হলে এই সক্ষমতা আরো বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৭৭ সালে মাত্র ছয়টি কন্টেনার নিয়ে যাত্রা শুরু করা চট্টগ্রাম বন্দর ইতোমধ্যে বছরে ৩০ লাখ টিইইউএসের বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করছে। করোনাকালে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর বিদ্যমান সুবিধা নিয়ে আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে দেশের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হবে বলে আশংকা করা হলেও সেই আশঙ্কা কাটিয়ে এখন একদিনেই ১০ হাজার ৬০ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং এবং ৫ হাজার ৩০ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি দিয়েছে। বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ইতিহাসে এটি একটি রেকর্ড। গত ১৮ মে বন্দর কর্তৃপক্ষ একদিনেই এই রেকর্ড সৃষ্টি করে। এর আগে আর কোনো দিন ২৪ ঘণ্টায় এত বিপুল সংখ্যক কন্টেনার হ্যান্ডলিং এবং ডেলিভারি হয়নি।
বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড সৃষ্টির এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নতুন করে ভাবতে প্রেরণা দেয়। অনেকেই বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে হিসাব নিকাশ কষতে থাকেন। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় বন্দর ওই রেকর্ড অর্জন করে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রতিদিন যদি এভাবে সহায়তা করে তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বছরে ৩৬ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (এডমিন এন্ড প্ল্যানিং) মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, বন্দর একটি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এক দিনে এর আগে আর কখনো এত বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং বা ডেলিভারি হয়নি। বন্দর ব্যবহারকারীদের সহায়তার ফলেই কেবল এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, বন্দর ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তা পেলে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান সুবিধা নিয়েই বছরে ৩.৬ মিলিয়ন কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে পারবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি শুক্র ও শনিবার বন্দর থেকে কন্টেনার ডেলিভারি কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা সমান দক্ষতায় সেবা দিতে প্রস্তুত। ব্যবহারকারীরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে শুক্র ও শনিবারের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নতুন গতি তৈরি করা সম্ভব। তিনি বন্দর ব্যবহারকারীদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বন্দরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালে ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ টিইইউএস, ২০১৯ সালে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউএস এবং ২০২০ সালে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৭ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে। এবারও ৩০ লাখ টিইইউএসের চেয়ে বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সূত্র বলছে, করোনাকালেও প্রচুর আমদানি রপ্তানি হচ্ছে। নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে ব্যবসা বাণিজ্যে গতিশীলতা তৈরির চেষ্টা চলছে। বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বছরে ৩৬ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে পারবে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর আরো কয়েক বছর দেশের চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে সক্ষম হবে। নতুন ইক্যুইপমেন্ট আনার পাশাপাশি পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) চালু হলে এই সক্ষমতা আরো বাড়বে। তবে দেশের আগামী দিনের চাহিদা পূরণে দ্রুত সময়ের মধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে বলে বন্দর ব্যবহারকারী একটি সূত্র জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিপিং বিশেষজ্ঞ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সক্ষমতায় আরো দু-চার বছর সময় পাওয়া যাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। এই সময়ের মধ্যেই বে টার্মিনালকে অপারেশনে নিয়ে আসতে হবে। বে টার্মিনাল নিয়ে হেলাফেলা করলে ৪ মিলিয়ন কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর সক্ষমতা নিয়েও আমাদের সংকটে পড়তে হবে। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ৪ মিলিয়নের ছেড়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কন্টেনারের এই বাড়তি চাপ সামাল দেয়ার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (এডমিন এন্ড প্ল্যানিং) মোহাম্মদ জাফর আলম কোনো ধরনের সংকটের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে বলেন, বন্দর ব্যবহারকারীদের সর্বাত্মক সহায়তা পেলে আমরা সব বাঁধা অনায়াসে পার হয়ে যেতে পারব। বন্দরের বিদ্যমান সক্ষমতার সাথে নতুন ইক্যুইপমেন্টের গতিশীলতা এবং আগামী ডিসেম্বরে পিসিটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যকে আরো বেশ কয়েক বছর নিরাপদ রাখবে।
সময় জার্নাল/আরইউ