রাকিবুল ইসলাম, ডিআইইউ প্রতিনিধি:
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) সাংবাদিক সমিতির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ এবং সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ১০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের অর্ধশত সংগঠন৷
একইসাথে শর্তহীনভাবে এসব শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এসব সংগঠনের নেতারা৷ এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সকল সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ৷
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাসে বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চার অনুকুল পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ডিআইইউ প্রশাসন নিজেদের অন্যায়-অপকর্ম ধামাচাপা দিতে স্বাধীন সাংবাদিকতার টুঁটি চেপে ধরার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, ২০২০ সাল থেকে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে ডিআইইউ সাংবাদিক সমিতি। অভ্যন্তরীণ অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষার্থী হয়রানির মত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংগঠনের সদস্যরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের কারণে এর আগেও বেশ কয়েকবার সমিতি বন্ধের পাঁয়তারা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ মার্চ (বুধবার) সমিতির নতুন কমিটি গঠনের পর এর কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ ও সংশ্লিষ্ট ১০ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে ডিআইইউ প্রশাসন। সাংবাদিক সমিতির মতো একটি পেশাজীবী সংগঠন তৈরির কারণে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও নজিরবিহীন। এ ঘটনা দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে অত্যন্ত খারাপ উদাহরণ তৈরি করেছে।
সাংবাদিক আরও নেতারা বলেন, সাংবাদিক সমিতির বন্ধের নির্দেশ এবং শিক্ষার্থী বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে ডিআইইউ প্রশাসন ক্যাম্পাসকে চূড়ান্তভাবে সাংবাদিক শুন্য করে অন্যায়-অপকর্মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সাংবাদিকরা নৈতিক ও পেশাগত দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশন করে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ থাকলে আইনগতভাবে অবস্থান গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অন্যায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা সংবিধানস্বীকৃত সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ধারণার পরিপন্থি ও সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের নামান্তর।
তারা বলেন, দেশের অন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে প্রশাসন কর্তৃক সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হলেও ডিআইইউ কর্তৃপক্ষের ধৃষ্টতাপূর্ণ এমন আচরণ অত্যন্ত আপত্তিকর এবং অনভিপ্রেত। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, অবিলম্বে তারা ১০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নেওয়া অন্যায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করবেন এবং সংবিধানকে সম্মান জানিয়ে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করবেন। অন্যথায় দেশের সকল সাংবাদিক সংগঠনকে
সঙ্গে নিয়ে কঠোরতম কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে৷
এ ঘটনায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কালাম মুহাম্মদ বলেন, আমরা একটি নীতিগত লড়াই করছি৷ আমাদের বাক-স্বাধীনতা এবং পেশার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লড়াই করছি৷ আমরা শুধু শর্তহীন বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য নয় বরং ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি৷ অবিলম্বে এই বহিস্কারাদেশ শর্তহীনভাবে প্রত্যাহার করা না হলে দেশের সকল সাংবাদিক সংগঠন নিয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোশনা করা হবে৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবিলম্বে আমাদের সিনিয়র সাংবাদিক নেতাদের সাথে বসে এ সমস্যার সুরাহা না করলে তাদের এই অন্যায়ের কড়া জবাব দেওয়া হবে৷
সাংবাদিকতায় যুক্ত দশ শিক্ষার্থীকে বহিস্কারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যেসব সংগঠন- ১. এডুকেশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব), ২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, ৪. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ৫. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি, ৬. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, ৭. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ৮. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, ৯. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ১০. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি, ১১. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ১২. চুয়েট সাংবাদিক সমিতি, ১৩. বুটেক্স সাংবাদিক সমিতি, ১৪. হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি, ১৫. শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ১৬. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ১৭. বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ১৮. বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, ১৯. পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব,২০. শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব,২১. সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ২২. খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ২৩. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ২৪. যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, ২৫. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ২৬. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, ২৭. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি, ২৮. যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ২৯. নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, ৩০. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, ৩১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ৩২. বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক ফোরাম, ৩৩. পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ৩৪. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ৩৫. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরাম, ৩৬. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, ৩৭. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ৩৮. স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরাম, ৩৯. গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ৪০. সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতি, ৪১. সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতি, ৪২. কবি নজরুল সরকারি কলেজ সাংবাদিক সমিতি, ৪৩. রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, ৪৪. এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, ৪৫. ইউনিভার্সিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (ইউজেএফ), ৪৬. ভয়েস অব কনসাস সিটিজেন, ৪৭. বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং ৪৮. বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগার৷
সময় জার্নাল/এলআর