অভ্র বড়ুয়া:
কিছু শিক্ষক আছেন যাঁরা,সত্যিকার অর্থে অসাধারণ।জীবন যেভাবে আমরা প্রতিমুহূর্তে উদযাপন করি,পড়াশোনাটাকেও যে সেভাবে উদযাপন করা যায় তা এমন শিক্ষকের সংস্পর্ষে না আসলে অনুভব করা যাবে না।আজ এমন এক শিক্ষকের গল্প শোনাব,যে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে বসে অনায়াসে একজন শিক্ষার্থীকে পৃথিবীর যেকোন দেশের ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে উপভোগ করাতে পারেন।যাঁর শিক্ষা আত্মার গভীরে অনুরণিত হয়। পাঠ্যপুস্তকের গণ্ডি পেরিয়ে, তিনি বিস্তৃত বিষয়গুলির পরিমণ্ডলে অনুসন্ধান করেন, প্রতিটি পাঠকে প্রাসঙ্গিকতার সাথে তুলে ধরেন।তিনি শুধু আমার শিক্ষকই নন একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বও বটে আমার জীবনে।বলছি ভারতের কালিম্পং এ জন্ম নেওয়া গুণী শিক্ষক সন্দীপা ম্যাডাম এর কথা।আমি দার্জিলিং এর পাহাড়ের স্কুলে আজ প্রায় ৫ বছর এবং এখানে আমার বিদ্যালয় জীবনের ইতি টানার শেষ মুহূর্তে এই গুণী মানুষটির কথা তুলে না ধরলেই নয়।শিক্ষক সন্দীপা ম্যাডামকে যা আলাদা করে তা হল জীবনের সুতো দিয়ে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত জীবনের সফলতার বুনন বুনতে তার সহজাত ক্ষমতা। তাঁর শিক্ষার মাধ্যমে, বিষয়গুলি জীবন্ত হয়ে ওঠে, কল্পনাকে চিত্তাকর্ষক করে এবং জ্ঞানের জন্য অদ্ভুত এক তৃষ্ণা জাগায়।
দিনের শেষে যেমন সন্ধ্যে নামে ঠিক তেমনি তিনি অন্যরকম এক রূপে ফেরেন আমাদের বোর্ডিং স্কুলে।কখনও সাক্ষাৎ মা,কখনও পরম মায়ায় যত্ন নেওয়া বোন কখনও বা পরম বন্ধু।বাড়ির অনুপস্থিতিতে, তিনি পরিচিতির আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠেন,তাঁর সান্ত্বনাদায়ক উপস্থিতি যা উষ্ণতা এবং আত্মীয়তার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর অনুভূতিতে। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর নিবেদিত প্রাণ গুণটি শ্রেণীকক্ষের বাইরেও সমানভাবে প্রসারিত। তিনি শুধুমাত্র একজন ছাত্রের সফলতা নয়,শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।শিক্ষার্থীদের প্রতি যাঁর সহানুভূতি চোখে পড়ার মতো।তাঁর মধ্যে, শিক্ষার্থীরা কেবল একজন শিক্ষককে নয়, একজন পরামর্শদাতা সর্বোপরি একজন আর্দশবান মানুষকে খুঁজে পায়।
খুব বেশিদিন নয়,আমার শিক্ষক সন্দীপা ম্যাডাম ভারতের অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্সপিরিয়া কর্তৃক "গুরু সম্মান পুরষ্কারে" ভূষিত হন। যে স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন তা কেবল তাঁর শিক্ষাদানের দক্ষতার প্রমাণ নয়, বরং তার শিক্ষার্থীদের সাফল্যের প্রতি তার অটল প্রতিশ্রুতির এক সফল গল্পের আখ্যান।পর্দার আড়ালে অক্লান্ত পরিশ্রম করা সত্ত্বেও, তার প্রভাব প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবন জুড়ে প্রতিফলিত হয়,ভবিষ্যত প্রজন্মেকে সত্যিকার অর্থে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমি সৌভাগ্যবান যে আমার যেকোন সিদ্ধান্তে তাঁর দিকনির্দেশনা পেয়েছি।আমাদের জন্য, শিক্ষক সন্দীপা ম্যাডাম শুধু একজন শিক্ষাবিদ নয়; আলোর বাতিঘর। তার শিক্ষাদান কেবল জ্ঞানই নয়, আমাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলে।
এমন শিক্ষক যথন সম্মানিত হয়,তখন জিতে যাই আমরা। শিক্ষক সন্দীপা ম্যাডাম ছাত্রদের জীবনে একজন শিক্ষকের গভীর প্রভাবের অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। তিনি শিক্ষার প্রকৃত সারমর্মের উদাহরণ দেন – শুধু জ্ঞান প্রদানই নয়, কৌতূহলের শিখা জ্বালিয়ে নতুন উচ্চতায় ওঠার জন্য আত্মাকে লালন করা।শুধু আমার নয়,হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্নের স্থপতি সন্দীপা ম্যাডামকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
শিক্ষক শব্দটা ছোট হতে পারে,কিন্তু এর ব্যাপকতা যেকোন কিছুকে ছাড়িয়ে যায়।একজন আর্দশ শিক্ষক,আর্দশ জাতির পরিচয় সৃষ্টি করেন।আসুন সন্দীপা ম্যাডাম এর মতো এমন আর্দশ শিক্ষকদের ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি।ভালো থাকুক আমার শিক্ষক।
লেখক: অভ্র বড়ুয়া,শিক্ষার্থী,দার্জিলিং, ভারত।
সময় জার্নাল/এমআই