শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কুবিতে চলছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি

বৃহস্পতিবার, মার্চ ৪, ২০২১
কুবিতে চলছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি কিংবা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশ ঘটনারই প্রশাসনিকভাবে আনুষ্ঠানিক কোনো বিচার হয় না। অভিযোগ না আসার দোহাই দিয়ে গত দুই বছরে সংগঠিত শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।

এমনকি এসব বিষয়ের সালিশ-মীমাংসার ভার ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হাতে তুলে দিয়েই সন্তুষ্ট থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সংঘর্ষ-মারামারির ঘটনায় তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লিখিত অভিযোগ পান না। যার ফলে নিতে পারেন না প্রশাসনিক ব্যবস্থা।

কিন্তু ঘটনাগুলোর আপোস-মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ছাত্র সংসদ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘ছাত্র প্রতিনিধি’র নাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এসব ঘটনার আপোস-মীমাংসার ভার তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের হাতে। আর নেতারাও এসব বিচার করছেন নিজেদের ইচ্ছেমতো। বিচারের নামে মারধরের অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। 

গত পহেলা মার্চ রাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরীর বাসভবনের সামনের রাস্তায় সংঘর্ষে জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। এতে আহত হন ২ জন। বন্ধ ক্যাম্পাসে এমন সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনাতেও নির্বিকার কুবি প্রশাসন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন এই ঘটনাতেও মীমাংসার ভার ছেড়েছেন ‘ছাত্র প্রতিনিধিদের’ হাতে। 

তিনি এই ঘটনায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টরিয়াল বডি যাদের সাথে ঝামেলা হয়েছে এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে কাল বসে মীমাংসার চেষ্টা করবো।’

তবে এই ঘটনার মীমাংসা বা বিচারে ছিল না প্রক্টরিয়াল বডি। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার মীমাংসাও ‘ছাত্র প্রতিনিধি’র নামে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

এদিকে মীমাংসার নামে এ ঘটনার অভিযুক্তকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

বিচারের নামে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘মারধর করা হবে কেন? ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দিক থেকে নিজেদের মাঝে কেউ বিবাদে জড়ালে আমরা বিধি-নিষেধ দেই কিংবা মুচলেকা নেই। মারধর করবো কেন!’

এই ঘটনারসাংগঠনিকভাবে তদন্ত না করে সালিশে বসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় সবকিছু স্পষ্ট, প্রমাণিত। এছাড়া, যে ভিকটিম সে ক্ষমা করে দিছে এবং আমরা সাংগঠনিক দিক থেকে সতর্ক করে দিয়েছি এবং মুচলেকা নিয়েছি। আর ভিক্টিম ক্ষমা করে দিলে তো আর কিছু করার থাকে না।’

বিগত কয়েক বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে বেশ কিছু মারামারি ও সাধারণ শিক্ষার্থী বা ভিন্নমতের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর ক্যাম্পাসে হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘটনারই কোনো বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের ভেতর শিক্ষার্থী যুগলকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মারধরের ঘটনারও কোনো সুরাহা হয়নি। বিচার হয়নি সাংবাদিককে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনাতেও। 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বক্তব্য ছিলো, ‘আমরা কোনো অভিযোগ পাই নাই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’

প্রশাসনিক বিচার না হলেও ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঠিকই সালিশে বসেছেন এসব ঘটনা নিয়ে। অভিযোগ আছে, কোনো ভুক্তভোগী হামলার শিকার হলে ছাত্রসংগঠনের ভয়েই তারা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেন না। তাদের চাপেই তারা মীমাংসার পথ বেছে নেন। 

তবে এভাবে ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে বিবাদ কিংবা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার সালিশ-মীমাংসার ভার ছাত্রলীগ নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘নিজেদের কর্মীদের ভেতর ভুল বোঝাবুঝি হলে তা নিয়ে আমরা বসতেই পারি। আর যে ভিক্টিম সে তো প্রশাসনের কাছে যায়নি। আমাদের কাছে যদি কেউ আসে তাহলে আমরা তো ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায় এড়াতে পারি না। চেষ্টা করি সমাধানের।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন কাজে প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয় না এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, 'আমরা কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো? যে মারধরের শিকার হলো, সে যদি এসে বলে আমি তো অভিযোগ দেই নাই। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে হয়েছে, তখন আমার উত্তর কি হবে?'

এছাড়া ‘ছাত্র প্রতিনিধি'র হাতে মীমাংসার ভার ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'ছাত্রদের মধ্যে তৈরি সমস্যার সমাধান যদি ছাত্ররা করে, তাহলে  আমাদের সেখানে ইন্টারফেয়ার করা কি উচিত? কার হাতে ছেড়ে দিচ্ছি সেটা বিষয় না, বিচার পেলো কি না সেটাই বিষয়।'

এই ছাত্র প্রতিনিধি কারা তাদের নাম কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ছাত্রদের বিভিন্ন দাবী-দাওয়া নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যারা সমন্বয় করে তারা ছাত্র প্রতিনিধি।'

বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগের অভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ড নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবীর চৌধুরী বলেন, 'প্রশাসন কিছু করতে চাইলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ আসতে হবে তো। প্রত্যেকটা সরকারি জিনিস একটা নিয়মশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে হয়। অভিযোগ আসলে তার ভিত্তিতে ঠিক করা হবে কোন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে, কোন ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে৷ স্বাক্ষী-প্রমাণ দিয়ে বিচার করতে হয়। নয়তো কোর্টে গিয়ে উল্টো হয়ে যায়। আমাদের এমন কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা আছে। তাই আমাদের কোনো কিছু করতে হলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসতে হবে।’

সময় জার্নাল/আরইউ 



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল