নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে সবকিছুর ব্যয় যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন ব্যতিক্রম নয় শিক্ষা খাতও। অস্বাভাবিক ব্যয় বেড়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায়। এক জরিপে বলা হয়েছে, প্রাথমিকে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ বেড়েছে শিক্ষা ব্যয়।
শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান জানিয়েছে এসব তথ্য। ‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা: মহামারি উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হয়।
এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, গবেষণা দলের প্রধান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ, গবেষণার পর্যালোচক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, গবেষক দলের সদস্য সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন, মো. আহসান হাবিব প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক ও গবেষক দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। সারাদেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলার মধ্যে থেকে ২৬টি উপজেলা ও পাঁচটি সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট সাত হাজার ২২৫ জন কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের ব্যয়ের চিত্রটি বের করা হয়েছে পঞ্চম শ্রেণি এবং নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের ভিত্তিতে। তিনি বলেন, ২০২২ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা। তবে শহরাঞ্চলে এই খরচ বেশি। মফস্বল এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীপিছু বার্ষিক পারিবারিক ব্যয় ছিল ১০ হাজার ৬৩৭ টাকা; যা শহরাঞ্চলে ছিল ১৮ হাজার ১৩২ টাকা। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসেই প্রাথমিকে এই খরচ ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৬৪৭ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পরিবারের ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। মফস্বল এলাকায় এ খরচ ২২ হাজার ৯০৯ টাকা এবং শহরাঞ্চলে ৩৫ হাজার ৬৬২ টাকা। কিন্তু গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এই খরচ ৫১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭১২ টাকা।
গবেষণার তথ্য বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মহামারির পরে তাদের নতুন শ্রেণির পাঠ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পাঠ বোঝার ক্ষেত্রে অসুবিধায় ছিল।
প্রাথমিক পর্যায়ের ৪১ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ৫৮ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী জানিয়েছে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ১৭ শতাংশ স্কুলের কাজে বা লেখাপড়াসংক্রান্ত কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছে।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের একটি বিদ্যালয় ছাড়ার পর আর ফিরে আসেনি। ২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করত এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২৩ সালে এসে দেখা গেছে তাদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই ঝরে পড়া মহামারির জন্য প্রভাবিত। এজন্য যে কারণগুলো উঠে এসেছে, সেগুলো হলো, মহামারির কারণে নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলোর আরও কমে যাওয়া, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য অভিভাবকদের খরচ বৃদ্ধি, মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকা এবং বিদ্যালয় থেকে যথাযথ নির্দেশনার অভাব।
এমআই