ধর্ম ডেস্ক
রমজানের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল তারাবি নামাজ। তারাবি নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা গুনাহ মাফ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬)
তারাবিতে কোরআন খতমের প্রচলন রয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশের মসজিদগুলোতে। খতম তারাবি পড়ানো হাফেজদের রমজানের শেষ দিকে হাদিয়ে দিয়ে থাকেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। মূলত পুরো মাস নামাজে কোরআন শুনে খুশি হয়ে হাফেজদের এই হাদিয়া দেওয়া হয়।
খতম তারাবি শেষে হাফেজদের হাদিয়ার বিষয়ে আলেমদের বিভিন্ন মতামত আছে। তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো, খতম তারাবি পড়িয়ে কোনো প্রকার বিনিময় নেওয়া বৈধ নয়। হাদিয়ার নামে দিলেও জায়েজ হবে না।
বর্তমানে আমাদের সমাজে খতম তারাবির হাদিয়া চাঁদার মাধ্যমে টাকা তুলে দেওয়া হয়- এ পদ্ধতিটি শরিয়তসম্মত নয়। চাঁদা নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে একদিকে যেমন পারিশ্রমিক হয়ে যায় অন্যদিকে চাঁদার কারণে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনেকের টাকা নেওয়া হয়।
তবে যদি চাঁদা তোলার নিয়মের বাইরে কেউ ব্যক্তিগতভাবে হাফেজ সাহেবদের হাদিয়া দেয়, তাহলে তা গ্রহণ করা বৈধ।
আর কেউ ব্যক্তিগতভাবে হাফেজদের ভালোবেসে নিজ উদ্যোগে হাদিয়া দিলে শরিয়তে তার অনুমতি আছে এবং এটা আলেম-উলামা ও তালেবে ইলমদের খেদমতের অন্তর্ভুক্ত। এই পদ্ধতিতে খতম তারাবি পড়ানো হাফেজদের হাদিয়া দেওয়া যাবে।
তবে মনে রাখতে হবে ভারত-পাকিস্তানের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান থেকে তারাবির বিনিময় গ্রহণ না করার ফতোয়াই প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্বনামধন্য ইসলামি ফতোয়া ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঢাকার মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মুখপত্র মাসিক আলকাউসারে প্রকাশিত ফতোয়ায় বলা হয়েছে—
‘খতম তারাবির বিনিময় দেওয়া-নেওয়া দুটোই নাজায়েজ। হাদিয়ার নামে দিলেও জায়েজ হবে না। এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন হিসাবে দিলেও জায়েজ নয়। কারণ এসব ক্ষেত্রেও প্রদেয় বেতন খতমের বিনিময় হওয়া স্বীকৃত। মোটকথা খতম তারাবির বিনিময় গ্রহণের জন্য কোনো ধরনের চতুরতা অবলম্বন করলেও তা জায়েজ হবে না।
কারণ খতমে তারাবি নিরেট ইবাদত, যা নামাজ ও রোজার মতো মৌলিক ইবাদত-এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের ইবাদতের বিনিময় দেওয়া-নেওয়া সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েজ। এতে না কোনো মাজহাবের মতপার্থক্য আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকিহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে।
ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকীহগণের দৃষ্টিতে জায়েজ, কিন্তু খতম তারাবির বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না; বরং তা মূলত খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে। আর তিলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সকল ফকিহর কাছেই হারাম।
এ ছাড়া পরবর্তী ফকিহগণ যে ইমামতির বেতন জায়েজ বলেছেন, সেটা হলো ফরজ নামাজের ইমামতি। সুন্নত জামাতের ইমামতি এর অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মাসিক আল-কাউসার: আগস্ট-সেপ্টেম্বর সংখ্যা ২০১০)
আরইউ