রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে, ৫০০ কোটি টাকা বিক্রির আশা

মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে, ৫০০ কোটি টাকা বিক্রির আশা

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুরে এবছর উপাদিত সয়াবিনের মূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করছেন কৃষি বিভাগ। খরা থাকায় সয়াবিন তোলার ধুম পড়েছে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চলে। ক্ষেত থেকে সয়াবিন গাছ কেটে সেগুলো মাড়াই করে ঘরে তোলার ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। আসন্ন ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে কৃষি বিভাগ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

এবার ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে চাষিরা। এতে তারা আনন্দিত। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সময় মতো ফলন ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। 

কৃষি বিভাগ বলছে, এ মৌসুমে জেলায় এবার যে পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে- যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো হবে।

তাদের হিসেব মতে, সারাদেশে যে পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদন হয়, এরমধ্যে ৭৫-৮৫ শতাংশ সয়াবিন চাষাবাদ হয় লক্ষ্মীপুরে। 
লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকার মাটি ‘সয়াল্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত।

জেলা সদর উপজেলার দক্ষিণ এবং পশ্চিম অঞ্চল ও রায়পুর, রামগতি ও কমননগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সয়াবিনের চাষাবাদ হয়। নদীমাতৃক হওয়ায় মেঘনার বিভিন্ন চরেও ফলানো হয় সয়াবিন।
 
কৃষকরা জানায়, ধান বা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে সয়াবিনে লাভ বেশি। গত কয়েক বছর ধরে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন। তবে বীজ, সার, ঔষধ, চাষাবাদ এবং শ্রমিক খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। তবে জমি উর্বর থাকায় সয়াবিনের পর পরবর্তীকালে ধানের ফলন ভালো হয়।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এবার ৪১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে।  আবাদ জমির মধ্যে জেলার রামগতিতে সবচেয়ে বেশি সয়াবিনের চাষাবাদ করা হয়। এ উপজেলাতে এবার সয়াবিনের চাষ হয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এরপরের অবস্থান কমলনগর। এ উপজেলাতে আবাদ হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৩০০, রায়পুরে ৬ হাজার ২০০ এবং রামগঞ্জে ১০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষাবাদ হয়েছে। 

জেলায় এবার ৮৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন সয়াবিনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এরই মধ্যে মাঠ থেকে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি সয়াবিন কাটা হয়েছে। 

সরেজমিনে সদর উপজেলার চররমনী মোহন, ভবানীগঞ্জ, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, চরলরেঞ্চ ও চর কালকিনি, রামগতির আলেকজান্ডার ও চর বাদাম এবং রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে কৃষক এবং কৃষাণীরা দলবদ্ধ হয়ে ক্ষেত থেকে সয়াবিন কাটছেন। 

গাছসহ সয়াবিন রোদে শুকিয়ে মাড়াই করছেন তারা। কেউ আবার ক্ষেত থেকে সরাসরি সয়াবিন মাড়াই করে ঘরে তুলছেন। সয়াবিন কেনার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা মাঠে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে সয়াবিন সংগ্রহ করে আড়তে বিক্রি করছেন। 

চর বাদামের কৃষক ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই সয়াবিনের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। মাঠেই প্রতিমণ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। 

ওই এলাকার কৃষক দুলাল হোসেন এ প্রতিবেদক অ আ আবীর আকাশকে জানান-‘মেঘনা নদী সংলগ্ন একটি চরে সাড়ে তিন কানি জমিতে সয়াবিন চাষাবাদ করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই সবগুলো সয়াবিন কেটে ঘরে তুলতে পেরেছি। প্রতি কানিতে ফলন হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ মণের মতো। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয় কানিতে। তবে এবার অসময়ে যে বৃষ্টি হয়েছে, এতে সয়াবিন গাছের জন্য কিছুটা ক্ষতি হয়েছে এবং ফলনের পুষ্ট কম হয়েছে।’

একই কথা জানিয়েছেন ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মিয়ার বেড়ী এলাকার কৃষক আবিদ মিয়া। বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হলেও অন্য বছরের চেয়ে সয়াবিনের উৎপাদন ভাল হয়েছে বলে জানান তিনি। 

চাষিরা জানান, জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সয়াবিনের বীজ বপন করেছেন। 

তারা জানায়, গেল বছর সয়াবিন কাটার আগেই অতিবৃষ্টিতে ক্ষেতেই অনেকের সয়াবিন পঁচে গেছে। এতে লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। কিন্তু এবার সয়াবিন কাটার সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সয়াবিনের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। 

তবে ক্ষেতে চারাগাছ থাকাবস্থায় কিছুটা বৃষ্টি হওয়ায় কিছু গাছ মারা গেছে বলে জানায় কৃষকরা। 

সদর উপজেলার চররমনী মোহনের চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক কালা মিয়া এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন- সয়াবিন চাষাবাদে অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচ কম হয়। তাই কৃষকরা রবি মৌসুমে সয়াবিন চাষাবাদে ঝুঁকছেন। আমন ধান কাটার পরপরই জমি চাষ দিয়ে সয়াবিনের বীজ লাগিয়েছে। সয়াবিন চাষাবাদে অন্যান্য ফসলের চেয়ে সার এবং ঔষধ কম লাগে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন-‘চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ থেকে জেলাতে ৬ হাজার ৭০০ জন সয়াবিন চাষিকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তাদের বীজ এবং সার দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সয়াবিনের উৎপাদন বাড়াতে আমরা কৃষকদের সঠিক পরামর্শ দিয়েছি। এবার ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২.২ টন করে ফলন এসেছে। বর্তমানে কেজি প্রতি সয়াবিনের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সে হিসেবে জেলাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। আর সয়াবিন কেন্দ্রীক ৬০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত সয়াবিন দিয়ে পশু এবং মাছের খাদ্য তৈরী হয়। ফলে বিভিন্ন ফিড কোম্পানির কাছে সয়াবিনের চাহিদা রয়েছে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে সয়াবিন কিনে নিচ্ছে। এতে ভালো দাম পাচ্ছে চাষিরা।’ 

জেলার এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন-‘সয়াবিনের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের সারিবদ্ধভাবে এবং উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের বীজ বপন করার পরামর্শ দিয়েছি। হাইব্রিডের মধ্যে বিইউ-১, বিইউ-২, বারি-৬, বীনা-৫ ও বীনা-৬ জাতের সয়াবিন রয়েছে। এগুলোতে ফলন ভালো হয় এবং সময়কালও কম লাগে। বিইউ-১ জাতের সয়াবিন রোপনের পর ফলন আসতে ৮০ দিন সময় লাগে। যেখানে দেশীয় জাতের সয়াবিন ফলন উঠতে সময় লাগে ১০০ দিনের মতো। যেসব সয়াবিনে সময়কাল কম লাগে, সেগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে না। তাই সঠিক সময়ে পাকা সয়াবিন ঘরে তুলতে পারছে কৃষকরা।’

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল