অ আ আবীর আকাশ :
সোমালিয়ায় জলদস্যদের হাতে জিম্মি থাকা বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ’র ইঞ্জিন ক্যাডেট অফিসার লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে রাখালিয়া গ্রামের মোঃ আইয়ুব চট্রগ্রামে জাহাজ থেকে নেমেই বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরেন। আইয়ুব তার পরিবারকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বুধবার দুপুরে উপজেলার সোনাপুর ইউপির রাখালিয়া গ্রামের বিনন বেপারি বাড়িতে গিয়ে জলদস্যদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে আসা আইয়ুবকে দেখতে মানুষ ভিড় দেখা যায়। ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব বাড়িতে ফিরে আসার খবরে সংবাদকর্মীরা ছুটে তার বাড়ীতে।
আইয়ুব খান সাংবাদিকদের বলেন, সোমালিয়া দস্যুদের হাতে ৩৩ দিন জিন্মি ছিলাম। রাতে ঘুম হয়নি উদ্বেগ ও আতঙ্কে কেটেছে। দস্যুরা প্রথমে মাছ ধরার ট্রলারে চড়ে আসে। তখন আমি ডিউটিতে ছিলাম। সর্তক এলার্ম বাজানো হয়। সবাই সর্তক ছিল। কিন্তু দস্যুদের সাথে মোকাবেলা করার সাহস কারো ছিলনা। প্রথমে দস্যুরা আমাদের জাহাজ এমবি আবদুল্লাহ প্রবেশ করে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে একটি রুমে নিয়ে যায়। ৩-৪ দিন দস্যুরাসহ সবাই একই রুমে অবস্থান করছি কিন্তু থাকা ও খাওয়া খুবই কষ্ট ছিল। আমরা রোযা রাখতাম তখন রমজান মাস ছিল। তাদের বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে ইফতার ও সেহেরী খেতে হবে। এতে তারা একটু নমনীয় হয়। সুযোগ দেওয়া হয় আমরা সবাই নামাজ ও রোযা রাখি।
দস্যুরা আমাদের খাওয়া খেত, কিন্তু কয়েকদিন পর তারা খাওয়া তৃপ্তি না পেয়ে দুম্বা নিয়ে আসে। এক সময় আমাদের খাওয়া বাদ দিয়ে তারা তাদের খাওয়া শুরু করে। ৫-৬ দিন পর দস্যুরা সবাই যার যার দায়িত্ব পালন ও অন্য রুমে যাওয়ার অনুমতি দেয় এবং দ্রুত তারাই আমাদের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। আমাদের সাথে ভাল আচরণ ও খোলামেলা কথা বলা শুরু করে।
দস্যুরা আমাদের জানায় -‘তোমাদের কোন ক্ষতি করবো না, আমরা মুুক্তিপণ পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছি তোমাদের মালিকপক্ষ সাড়া দিয়েছে। তোমরা ইচ্ছা করলে মোবাইলে দেশে কিংবা মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারো।’
আমরা পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতাম। মালিকপক্ষ প্রতিদিন যোগাযোগ করতো তাদের সাথে কথা বলতো। ঈদের দিন শুরু তারা আমাদের নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়।
আমরা ৩৩ নাবিক নামাজ পড়ার সময় তারা চারদিকে অস্ত্র দিয়ে পাহারা রাখে। প্রতি ৩-৪ দিন পর পর তাদের সদস্যরা পরিবর্তন হতো। তবে প্রত্যেকের কাছে অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ নিয়ে আসতো। মুক্তিপণ পাওয়ার পর তারা আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় আমাদের অনেক দুম্বা দিয়ে যায়।
১৪ মে (মঙ্গলবার) তার বড় ভাই ওমর ফারুক তাকে রিসিভ করেন চট্টগ্রাম থেকে। রাতেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। রাত সাড়ে বারোটার দিকে বাড়ি আসে। ১৫ মে (বুধবার) সকালে ঘুম থেকে উঠার আগে সাংবাদিকেরা তার বাড়িতে জড়ো হতে থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইয়ুব জানান, গত ১ বছর ধরে ইন্টার্নি করছেন তা শেষ হয়ে পড়ে তবে এমবি আবদুল্লাহ জাহাজে আর যাবেন না। পড়াশুনা বাকী আছে সেই গুলো শেষ করে অন্য জাহাজে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।
আইয়ুবের ভাই ওমর ফারুক জানান, কবির গ্রুপ থেকে সোমবার রাতে আমাকে ফোন করে জানান, মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে আইয়ুব আসবে তাকে রিসিভ করার জন্য আমি গিয়েছি। ভাইকে দেখে ঈদের চেয়ে আনন্দ লাগতেছে। কারণ ঈদে আনন্দ করতে পারিনি আতঙ্কে ও উদ্বেগের মধ্যে অতিবাহিত করেছি।
আইয়ুবের চাচা হাসেম আলী জানান, খুব খুশি হয়েছি ছেলেটা আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। মহান আল্লাহর কাছে কতইনা দোয়া করেছি আল্লাহ রহমত করেছে।
আইয়ুবের ৫ বছর বয়সের ভাগিনা সাব্বির আহমদ ও ৭ বছরের ভাগ্নি সুরাইয়া সুলতানা বলেন, মামা কে কাছে পেয়েছি খুব ভালো লেগেছে অনেক দিন পর মামা কে পেয়েছি আমরা তার সাথে দুষ্টামি করতে পারবো।
ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিনন বেপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে। তিনি রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রামগঞ্জের ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া একাডেমি থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন তিনি। প্রায় ১ বছর ধরে ইন্টার্নি করছেন আইয়ুব।
আইয়ুবের বন্ধু আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, আইয়ুব খুব ভালো ছেলে। আমরা তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে সরকার ও মালিপক্ষের আন্তরিক সহযোগীতায় সম্ভব হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এ সময় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। জাহাজে লক্ষ্মীপুরের আইয়ুব খানসহ মোট ২৩ জন নাবিক ছিল। পরে মুুক্তিপণের বিনিময়ে ৩৩ দিন পর দস্যুরা তাদের ছেড়ে দেয়। জাহাজের মালামাল বিভিন্ন রাষ্ট্রে নেওয়ার পর ১৪ মে বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে আসেন।
এমআই