নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য আট লাখ কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছে সরকার। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এবার সংকোচনমূলক বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।
বাজেটে অতিরিক্ত পরোক্ষ কর মানুষের ওপর চাপ তৈরি করছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনোমিকস রিসার্চ (এনবিইআর) এর চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ।
তিনি বলেন, আগের বছরগুলোতে প্রত্যক্ষ করের হিস্যা ৩৫ শতাংশের আশেপাশে থাকলেও ২০২৩-২৪ বাজেটে এটি ৩২ শতাংশের কিছুটা বেশি। মানে পরোক্ষ করের ওপরে সরকারের নির্ভরতা না কমে বরং আগের চাইতে আরও বেড়েছে। এটি মধ্যবিত্ত থেকে নিচের দিকে দরিদ্র পর্যন্ত সবার জীবন যাপনের ওপরে চাপ তৈরি করবে। আমাদের মতো দেশে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ করের হার সমান (৫০ শতাংশ) হওয়া উচিত। ভারতে এই হার সমান। পরোক্ষ করের প্রভাব নিয়ে একটি সুন্দর উদাহরণ চিনি। এবারও চিনির ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার দর ২৮ টাকার মতো। আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কসহ সবকিছু হিসাব করলে প্রতি কেজি চিনির ওপর শুল্কের পার করলে প্রতি কেজি চিনির ওপর শুল্কের পরিমাণ ২১ টাকার বেশি। একজন ভিক্ষুক কিংবা ব্যাংক এর মালিক উভয়কেই চিনি পেতে কেজি প্রতি এই একই পরিমান শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এভাবেই পরোক্ষ কর ও প্রত্যক্ষ কর সমান সমান হলে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রের উপর করের বোঝা অধিক হবে। আয় করের ক্ষেত্রে যাদের আয় সহজে ট্রেস করা যায় অর্থাৎ চাকরিজীবীদের ওপর কর বিভাগের নজর বেশি। তাদের কাছে থেকেই সবচেয়ে বেশি আয়কর আদায় করা হয়। অথচ একজন মাঝারি মানের চাকরিজীবীর চাইতে অনেক বেশি উপার্জন করা অসংখ্য ব্যবসায়ী কর-জালের বাইরে থেকে যায। এটি সৎ করদাতার মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে। তাছাড়া আয়কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে কম সামর্থবানদের উপর কর ধার্য করা হয়। প্রতিবছর এইদেশে গড়ে ৬ শতাংশের মতো মূল্যস্ফীতি থাকলে গত ৫ বছর কীভাবে কর মুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় স্থির থাকে? শুধুমাত্র মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলেও এই সীমা অন্তত ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত ছিলো। দেখা যাক আয়কর মুক্তসীমা কীভাবে দরিদ্র মানুষের ওপর কর চাপায়।
বিশ্ব ব্যাংক নির্ধারিত হত-দরিদ্র মানুষ হচ্ছে সেই মানুষ যিনি প্রতিদিন ১৯ ডলারের নিচে জীবন যাপন করেন। একটি পরিবারে যদি ৫জন সদস্য থাকেন, তাহলে সেই পরিবার দারিদ্রদ্র্য সীমার ওপরে উঠতে হলে তার মাসিক আয় হতে হবে ২৪,২০০ টাকার বেশি। অথচ কর মুক্ত সীমার ক্ষেত্রে ব্যাক্তির মাসিক আয় দাঁড়ায় ২০,৮০০ টাকা। অর্থাৎ একটি পরিবারের ৫ জন সদস্য থাকলে এবং সেই পরিবারে যাদি একজনই উপার্জনকারী থাকেন, তাহলে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকলেও তাকে আয় কর দিতে হয়। বাংলাদেশে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের দুই লাখের মতো কর্মী প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা আয় করে নিয়ে যায়। তাদেরকে কর-জালের আওতায় আনা হলে কর আদায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেতো। বেতনের ওপর গড়ে ১৫ আয় কর ধরে হিসাব করলেও প্রাপ্ত করের পরিমাণ দাঁড়াতো প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
এমআই