শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন ‘বস রাফি’

মঙ্গলবার, জুন ৮, ২০২১
আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন ‘বস রাফি’

সময় জার্নাল প্রতিবেদক : পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল রাফি ওরফে ‘বস রাফি’ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।  সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে বীভৎস কায়দায় যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। 

৩০ বছর বয়সী বস রাফি ভারতে নারী পাচারকারী চক্রের ‘হোতা’। তিনি চক্রের নেতৃত্ব দিয়ে বিভিন্ন তরুণীকে প্রলোভন দেখিয়ে পাচারের শিকার করতেন।

সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি ওই তরুণীর ওপর বর্বর যৌন নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তদন্তে নামে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  সন্ধান পায় নারী পাচারের একটি চক্রের। এই চক্রের কাছ থেকে পালিয়ে আসা এক তরুণী ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করলে সেই মামলায় বস রাফিসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

সেই মামলায় গত ২ জুন বস রাফিসহ চারজনকে পাচঁ দিনের রিমান্ডে দেন আদালত। রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার রাফিকে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক। পরে ঢাকার মহাগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম আসামি রাফির জবানবন্দি নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে দুই নারীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে দেশটির স্থানীয় পুলিশ। গ্রেফতারের সময় গুলিবিদ্ধ হয় টিকটক হৃদয় বাবু ও সাগর।

এদিকে রাফিকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব দাবি করে, রাফি (৩০) গত আট বছরে ৫০০ নারীকে ভারতে পাচার করেছে। ওই ৫০০ নারীকে যৌন কাজ করতে বাধ্য করা হয়। মানবপাচারকারী এ চক্রের সঙ্গে প্রায় ৫০ জন জড়িত।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে নারীপাচারকারী আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফি। আট বছর আগে থেকে ভারতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। প্রথমে ব্যাঙ্গালুরুতে ট্যাক্সি চালিয়ে জীবন নির্বাহ করত সে। পরে হোটেলে রিসোর্ট কর্মচারী এবং কাপড়ের ব্যবসা করত।

গত দুই বছর আগে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে রাফির পরিচয় হয়। এরপর টিকটক হৃদয়ের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণীকে ভারতে পাচার করে সে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের ভারতে পাচার করত রাফি। বাংলাদেশ থেকে তাকে নারীর যোগান দিত টিকটক হৃদয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে বিভিন্ন বয়সের নারী ও তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করত হৃদয়।

এই গ্রুপের মাধ্যমে তরুণীদের মডেল বানানোসহ ও বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করত। পরবর্তীতে ভারতে বিভিন্ন সুপার শপ ও বিউটি পার্লারে চাকরি দেয়ার কথা বলে বস রাফির সহযোগিতায় এসব তরুণীদের পাচার করত।

র‌্যাব জানায়, এসব তরুণীদের ভারতে পাচারের পর প্রথমে একটি সেফ হাউজে নেওয়া হতো। সেখানে তাদের জোর করে মাদক সেবন করতে বাধ্য করানো হতো। মাদক সেবনের পর তাদের জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করা হতো। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে ভয় দেখিয়ে তাদের পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করা হতো।

র‌্যাব আরও জানায়, টিকটক হৃদয় বাবু ও আলামিনসহ এই চক্রটি ভারতের বেঙ্গালুরুর কোর্টলোর এলাকায় থাকত। সেখানেই রাফির আস্তানা। এই রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায়। রাফিকে আলামিনরা বস বলে সম্বোধন করে।

র‌্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কলকাতায় সেফ হাউজে নিয়ে রাখা হতো নারীদের। এর পর সুযোগ বুঝে কলকাতা থেকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের বেঙ্গালুরু পাঠানো হতো তাদের। বেঙ্গালুরু পৌঁছানোর পর রাফি তাদের গ্রহণ করে বিভিন্ন সেফ হাউজে নিয়ে রাখত। সেখানেই মাদকাসক্তে অভ্যস্তকরণ এবং নির্যাতনের মাধ্যমে যৌন পেশায় বাধ্য করানো হতো নারীদের। ক্ষেত্রবিশেষে এসব নারীদের অনেককে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করতেন রাফি।

ভাইরাল সেই ভিডিওর বিষয়ে গ্রেফতার রাফি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ভারতে নির্যাতিত ওই তরুণী দুই বাংলাদেশি নারীকে দেশে পালিয়ে আসতে সহযোগিতা করেছিলেন। এজন্য তাকে অত্যাচার করা হয়। তাকেও বলা হয়, যদি তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে ভিডিও স্বজনদের কাছে পাঠানো হবে।

যশোরের সীমান্ত এলাকায় এ চক্রটির একটি সেইফ হাউজ রয়েছে বলে খবর পেয়েছে র‌্যাব। যা সাহিদা, সোনিয়া ও তানিয়া নামে তিনি নারীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তারা তিনজনই এই পাচারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

সোনিয়া ও তানিয়া বর্তমানে বেঙ্গালুরে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন তাদের মা সাহিদা।

উল্লেখ্য, যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেখানে তানিয়াকে দেখা গেছে। সেখানে নির্যাতনকারীদের সহযোগী হিসেবে দেখা গেছে তানিয়াকে। মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে চক্রটি রাফির কাছে বাংলাদেশ থেকে নারী পাচার করত বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

সময় জার্নাল/এসএ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল