বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সুনামগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্রে বাড়ছে বানভাসি মানুষ

বৃহস্পতিবার, জুন ২০, ২০২৪
সুনামগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্রে বাড়ছে বানভাসি মানুষ

জেলা প্রতিনিধি

বানের পানিতে থৈ থৈ সুনামগঞ্জের আশপাশের সব এলাকা। ডুবে আছে রাস্তাঘাট,ঘরবাড়ি,ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। যে সড়ক দাপিয়ে বেড়িয়েছি অটোরিকশা, রিকশাসহ সব মোটরযান আজ সেই রাস্তায় চলছে নৌকা। যাদেরকে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে তারা ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। নিম্নআয়ের মানুষ, দিনমজুররা আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে, আর যাদের অবস্থা কিছুটা ভালো তারা উঠেছেন আবাসিক হোটেলে। কেউ কেউ আছেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের বাসায়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার চারটি পৌরসভা এলাকাসহ ৭৮টি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৮টি গ্রামের ছয় লাখ ৬০ হাজার মানুষ বন্যা পরিস্থিতির শিকার।

সুনামগঞ্জ জেলার পুরোটাই বন্যাকবলিত হলেও সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগর ও ছাতক উপজেলার মানুষ। ছাতক উপজেলার পৌরসভাসহ সকল ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করার কারণে সুনামগঞ্জের অনেক হাওর এখন পানিতে টইটুম্বুর। আর এর ফলে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সুনামগঞ্জ সদর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা ও শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। ইতিমধ্যে মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার ৭ হেক্টর জমির সবজিখেত পানিতে নষ্ট হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার কায়েতকান্দা, রাজধরপুর, কাকিয়াম মৌলভীপাড়া, আলমপুর দোয়াদুর রহমান ও দক্ষিণ রূপনগরের মোট পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বন্যায় তলিয়ে আছে সকল উপজেলার স্থানীয় সড়ক। জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগর এবং ছাতক উপজেলার।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বুধবার (১৯ জুন) এর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দিরাইয়ে সুরমা নদীর পানি ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে।

লবজান চৌধুরী উচ্চ বালিকা কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লতিফুন্নেছা বলেন, আমার ঘরের ভেতর গলা সমান পানি। ঘরে ছেলে বউ আর এক আট বছরের এক নাতি ছিল। ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টসের চাকরি করে। পানি যখন ঘরে প্রবেশ করতে শুরু করে আমি আমার নাতি আর বউকে নিয়ে এখানে চলে আসি। সাথে নিয়ে এসেছি দুটি বালিশ আর একটা কম্বল। ঘরে তালা দেওয়ার সময়ও পাইনি। 

একই আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, খুব কষ্টে আছি ভাই। তিন দিন ধরে কাজে যাই না। বউ, ছেলে-মেয়ে না খেয়ে আছে। ১ কেজি চাল আর ২০০ গ্রাম ডাল এনেছিলাম। খেয়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন কেউ দিলে খাই আর না হয় খালি পেটে থাকি। বাচ্চাদের জন্য বিস্কুট নিয়ে এসেছি। কিন্তু আমার বাচ্চারা ভাত খাবে বলে আবদার করছে। 

বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া রফিকুল বলেন, আমাদের পরিবারের সদস্য ৯ জন। আমরা দুই আশ্রয়কেন্দ্রে মিলিয়ে থাকছি। দিনের অর্ধেক সময় এখানে বাকি সময় লবজান চৌধুরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে কাটে। আমাদের দিকে আল্লাহ কবে যে সুনজর দেবেন তা তিনিই ভালো জানেন। আমাদের আর এই কষ্ট সহ্য হচ্ছে না।

প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী সুনামগঞ্জ জেলার ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ১৮ হাজার ৪২৯ জন বন্যা আক্রান্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।সুনামগঞ্জের বন্যা আক্রান্ত মানুষের পাশে প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ করছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, সুরমা নদীর পানি কোনো কোনো স্থানে সামান্য কমেছে আবার কোন স্থানে বাড়ছে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী, অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পানি আরও বাড়তে পারে। যদি উজানে বেশি বৃষ্টি হয়, তাহলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী আছে।আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার, রান্না করা খাবার বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

আরইউ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল