সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ভুয়া বিলের মাধ্যমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উন্নয়ন প্রকল্পের (৩য় পর্যায়) সর্বশেষ চলতি বিলে সোয়া ৬ কোটি আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীসহ আট প্রকৌশলীকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে আগামী ৩০ জুন ও ১ জুলাই দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সাক্ষাৎকার দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তবে এর আগে গত ১০ ও ১১জুন তাদের সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আযহার ছুটিতে অফিস বন্ধকালীন রেজিস্ট্রার দফতরে এসেছে বলে জানা গেছে। ফলে যথাসময়ে সাক্ষাৎকার দিতে পারেননি প্রকৌশলীরা। তাই গতকাল মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুদকের সঙ্গে আলোচনা করে সাক্ষাতের নতুন সময় নির্ধারণ করে রেজিস্ট্রার দফতর।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, দুদক প্রকৌশলীদের বক্তব্য শুনতে ডেকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু ওই সময় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় চিঠি পড়ে ছিল। পরে দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সাক্ষাতের নতুন সময় জানিয়েছি।
দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসন ভবন নির্মাণে সর্বশেষ চলতি বিলে ভুয়া বিল দিয়ে ৬ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন ও ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। তাই অনুসন্ধানের স্বার্থে আট প্রকৌশলীর বক্তব্য গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে দুদক।
আট প্রকৌশলী হলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন ও আলিমুজ্জামান টুটুল, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) বাদশা মামুনুর রশিদ ও মোহা. নুর আলম, উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) প্রসেনজিৎ কুমার বিশ্বাস, রাজিব হোসাইন ও সোহাগ ইসলাম সাগর। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন ও আলিমুজ্জামান টুটুলকে ১ জুলাই ও বাকিদের ৩০ জুন ডাকা হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরামসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ সংক্রান্ত একটি বেনামী চিঠি আসে। সেই চিঠিতে আর্থিক সুবিধাভোগী ও সহযোগিতাকারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমানে পদে রয়েছেন এমন ৬ জন নেতাকর্মীর নাম ছিল।
এ অভিযোগ তদন্তে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম গত ১২ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও তিন মাস পর গত ৯ মার্চ প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। তিন পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। প্রতিবেদনে আর্থিক অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। গত ১৯ মে ২৬৩তম সিন্ডিকেট সভায় এই প্রতিবেদন খোলা হয়।
কিন্তু ইসলামিক ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়ি ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডিসিপ্লিন রুলস-এর আলোকে অভিযুক্তদের বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করা ছিলো না। ফলে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সিন্ডিকেট। তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা ও সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তির ধারা নির্ণয় ও নির্দিষ্ট করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও উড়ো চিঠি মাধ্যমে একই অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দুদক। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
সময় জার্নাল/এলআর