সাইদ আহম্মদ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়:
শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন এবং শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে ৩য় দিনেও অচল রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল আদেশের প্রতিবাদে এবং কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ৩য় দিনেও উত্তাল হয়ে উঠেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি )। আগারগাঁও -ফার্মগেট সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে শেকৃবি শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩ জুলাই) কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দুপুর ১২ টায় শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন পরে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আঁগারগাও-ফার্মগেট প্রধান সড়ক প্রায় ৪০ মিনিট অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনরত শতাধিক শিক্ষার্থীরা। এসময় সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে দুপুর একটার দিকে অবরোধ সরিয়ে নিলে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল ।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আঠারোর হাতিয়ার,গর্জে উঠুক আরেকবার। উড়ছে পাখি দিচ্ছে ডাক,কোটাপ্রথা নিপাত যাক। যুদ্ধ হবে আরেকবার,করবো কোটা সংস্কার। ছেড়ে দে মা মুখের বানী, লড়াই করে বাঁচতে জানি। চাকরি নয়তো বুলেট দে, বেকার হতে মুক্তি দে। মেধাবীদের কান্না, আর না আর না। আমার দেশ আমার মা, বৈষম্য মানে না। কোটা বৈষম্য দুর কর, নইলে বুকে গুলি কর ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
অবরোধ শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আবারো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেট অবরোধ করে আগামী দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এসময় শিক্ষার্থী নুর ইসলাম বলেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আজ কিছুসংখ্যক মানুষের স্বার্থের জন্য সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে একটা রায় দেয়া হয়েছে৷ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে, ফলাফল আগামীকাল দিবে। যদি রায় জনগণের জন্য না হয় তাহলে আমরা পরবর্তী পরিস্থিতিতে সারা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমন্বয় করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এদিকে পেনশনসংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে টানা ৩য় দিনের মত সর্বাত্মক কর্মবিরতি এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শেকৃবি শিক্ষকেরা।
বুধবার (৩ জুলাই) দুপুর ১২ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ পরবর্তী সময়েও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রেখেছিলেন জিডিপির ৫%, আর বর্তমান বাজেটে তা রাখা হয়েছে জিডিপির মাত্র ২% যা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিমের অন্তর্ভুক্তিকরণ শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের আর একটি পদক্ষেপ। এই পেনশন স্কিম চালু হলে দেশের মেধাবীরা শিক্ষার্থীরা কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশায় আসবে না।মেধাবীরা পাড়ি জমাবে বিদেশে। শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক আমলা শিক্ষদের সাথে কোনরুপ আলোচনা না করেই এই বৈষম্যমুলক পে স্কেল শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এই প্রত্যয় স্কিমে চিকিৎসা ভাতা,উৎসব ভাতাসহ কোন কিছুর বিস্তারিত উল্লেখ্য নেই এবং কোনরুপ গবেষণা ছাড়াই শিক্ষকদের গিনিপিগ বানিয়ে তাদের উপর এপ্লাই করার চেষ্টা চলছে।
এসময় শিক্ষকরা সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রত্যাবর্তনের দাবিসহ তাদের বিভিন্ন দাবি পেশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেনশনের কোন বয়সসীমা রাখা যাবে না এবং আমলাদের সাথে কোন বেতনবৈষম্য না রাখার দাবি জানান।
এমআই