নোবিপ্রবি প্রতিনিধি:
চতুর্মুখী আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে নোয়োখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালন করছেন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি আর কোটা বাতিলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়ে অচল অবস্থা বিরাজ করছে।
বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ডানপাশে মিলিত হয়ে ৮ম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। কর্মবিরতি চলাকালে কোনো ধরণের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি থিসিস, গবেষণাসহ ল্যাবের সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেয় নোবিপ্রবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। একই সময় প্রশাসনিক ভবনের বাপাশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মচারীরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির ফলে সব ধরনের অফিশিয়াল কার্যক্রমও বন্ধ ছিলো।
অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশে করে নোবিপ্রবির ‘ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন 'কর্তৃক ঘোষিত দাবিতে আমরা ১ জুলাই থেকে তিন দফা দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলন করে আসছি। আজও আমাদের কর্মবিরতি চলছে। আমাদের কর্মসূচি বেগবানের জন্য শিক্ষক ফেডারেশন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিটি বিভাগে মহাসমাবেশ হবে। আমাদের এই তিন দফা দাবি মেনে নেওয়া হলেই আমরা আমাদের পাঠকার্যক্রম এবং গবেষণা কাজে নিয়োজিত হবো।'
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
হাইকোর্টের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি ) শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আজ বুধবার বেলা ১২ টায় বিক্ষোভ ও ছাত্র সমাবেশ করবেন নোবিপ্রবির ‘ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
ছাত্র সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ' আমাদের আন্দোলন মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নয়। তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। বাংলাদেশ গঠনে তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের অবদান আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু তাদের সন্তান, উত্তরসূরিরা বৈষম্যমূলকভাবে সুবিধা ভোগ করবেন— এটা মেনে নেওয়া যায় না। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা চাই কোটা দ্রুত সংস্কার করা হোক। এই আইন করেই পরিপত্রটি পাস হোক।,
শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২. পরিপত্র বহাল-সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)।
৩. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪.সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি
অন্যদিকে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও কর্মবিরতির পর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন নোবিপ্রবির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ০৩ জুন থেকে তারা পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেন। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকেও তারা বিরত ছিলেন।
এমআই