নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাজধানীর উত্তরা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অন্তত ৯ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া ঢাকার সাভার এবং মাদারীপুরে একজন করে নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর বাইরে আরও নিহতের তথ্য ছড়ালেও এখনো সেগুলো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উত্তরায় নিহতদের মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রাখা হয়েছে চারজনের মরদেহ। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে হাসপাতালটির পরিচালক মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সকাল থেকে উত্তপ্ত ঢাকা। পুলিশ-আন্দোলনকারীদের মধ্যে বেঁধেছে দফায় দফায় সংঘর্ষ। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক পুলিশ বক্স। আগুন দেওয়া হয়েছে বিটিভির ক্যানটিনে।
টোল প্লাজায়ও ফের দেওয়া হয়েছে আগুন। অফিস-আদালতও থমথমে। রাস্তায় গণপরিবহন নেই বললেই চলে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। সব মিলিয়ে উত্তাল ঢাকায় জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকালেই বাড্ডার রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। বাঁধে সংঘর্ষ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, মেডিকেল কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অল্প দূরে রামপুরায়ও রাস্তায় নেমেছে শিক্ষার্থীরা। রামপুরায় ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। সেখানে পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
বসুন্ধরা-নদ্দা এলাকায় নর্থ-সাউথ, আইইউবিসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এসময় দুই পাশ থেকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কার্যত অচল হয়ে যায় কুড়িল থেকে রামপুরা ব্রিজের আগ পর্যন্ত পুরো প্রগতি সরণি সড়ক।
মালিবাগে আবুল হোটেল মোড়েও দুপুরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। তবে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। আবুল হোটেল থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে কাকরাইল মোড়ে আসতেই দেখা যায় রাস্তা অবরোধ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। সেখানে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
কাকরাইল পার হয়ে এসে পল্টন মোড়েও শিক্ষার্থীদের মিছিল করতে দেখা যায়। প্রেসক্লাবের দিক থেকে আসা মিছিলটি পল্টন মোড় ঘুরে আবার প্রেসক্লাবের সামনে কদম ফোয়ারার পাশে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ফলে এ রাস্তাটিতেও যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অন্য দিনের তুলনায় সচিবালয়ে উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে। দর্শনার্থীদের তেমন আনাগোনা সচিবালয়ে দেখা যায়নি। সচিবালয়ের ভিতরেও পরিবহনের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেছে।
সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে। কি কারণে এই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে তা জানা যায়নি। দুপুরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শিল্পমন্ত্রীর একটি প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা অনিবার্য কারণে বাতিল করা হয়েছে।
রাজধানীর উত্তরা জমজম টাওয়ার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের বক্সে ভাঙচুর করা হয়েছে। এসময় দুটি মিনিবাসাও ভাঙচুর করা হয়। এলাকাটিতে আন্দোলকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে রাজধানীর অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত মতিঝিলেও। রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিরপুর-১০ নম্বর। সেখানে আন্দোলকারী ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে রামপুরায় পুলিশ বক্সে। সেখানে রাস্তায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সময় জার্নাল/এলআর