নিউজ ডেস্ক : দিল্লিতে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বিকালে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে প্রত্যাশিতভাবেই অনেকটা সময়জুড়ে ছিল বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। আর সেই সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই সংকটের মুহূর্তে ভারত বরাবরের মতোই বাংলাদেশের পাশে আছে এবং সেখানে পরিস্থিতি খুব দ্রুত ‘স্বাভাবিক’ হয়ে উঠবে বলেও ভারত আশা করছে।
এর আগে গত সপ্তাহের (১৯ জুলাই) ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে যে প্রতিবাদ ও অস্থিরতা চলছে— সেটাকে ভারত ‘সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে মনে করে। তবে সেই সঙ্গে তিনি এটাও জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নিজে বাংলাদেশ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও বিশদে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক কী, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ নিয়ে ঠিক কী কী প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং তার জবাবে মুখপাত্র ঠিক কী বলেছেন– এই প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: ভারত বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিকে কী চোখে দেখছে? মুহাম্মদ ইউনূসের মতো অনেকে সে দেশে রক্তপাত বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সহযোগীদের বা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ পর্যন্ত চেয়েছেন, ভারতও কি সেটা প্রয়োজন বলে বিশ্বাস করে? আর প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে কি দু’দেশের মধ্যে কোনও কথাবার্তা হয়েছে?
মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল: আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সম্পূর্ণভাবে অবহিত। আমরা সেখানকার ঘটনাপ্রবাহে খুব সতর্ক নজরও রাখছি। আমরা মনে করি, সেখানে যা ঘটছে তা পুরোপুরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী, আমাদের সম্পর্কও খুব উষ্ণ ও নিবিড়। এই পটভূমিতে আমরা আশা করি যে সে দেশে খুব দ্রুতই স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে। এভাবেই আমরা সে দেশের ঘটনাপ্রবাহকে দেখছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ থেকে কতজন ভারতীয় শিক্ষার্থী চলে এসেছেন? তাদের সাহায্যের জন্য ভারত কী কী করছে?
মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল: আমাদের হিসাব অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে ৬ হাজার ৭০০ জন ভারতীয় ছাত্রছাত্রী সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে এসেছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অসাধারণ সহযোগিতার কারণেই। সেখানে আমাদের দূতাবাস ও উপদূতাবাসগুলোও ছাত্রছাত্রীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, যারা সড়কপথে বা বিমানে ফিরছেন—তাদের সে অনুযায়ী সাহায্য করা হচ্ছে। এছাড়া ভারতীয় দূতাবাসে ২৪ ঘণ্টার জন্য টেলিফোন হেল্পলাইনও চালু করা হয়েছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে চলমান বিক্ষোভ প্রতিবাদের সময় ভারতবিরোধী স্লোগানও উঠতে দেখা গেছে। এই বিষয়টিকে ভারত কীভাবে দেখছে?
মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল: দেখুন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব শক্তিশালী, ঘনিষ্ঠ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আমরা সেভাবেই দেখি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের এই অস্থিরতায় কোনও বৈদেশিক শক্তির প্রভাব থাকতে পারে, এই মর্মে বাংলাদেশ সরকার ভারতকে কি কোনও আভাস দিয়েছে? অথবা ভারতের কাছে কি এ ব্যাপারে কোনও তথ্য আছে?
মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল: আমি আগেও একাধিকবার বলেছি, এই ঘটনাপ্রবাহকে আমরা পুরোপুরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করি। আপনি যে প্রশ্ন করছেন, তার জবাবে বলবো, এটাই আমাদের অবস্থান।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ থেকে যারাই ভারতে আসবেন, তাদের স্বাগত জানানো হবে বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে মন্তব্য করেছেন, সে ব্যাপারে ভারত সরকারের অবস্থান কী? বাংলাদেশের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কি আপনারা কোনও প্রতিবাদপত্র পেয়েছেন?
মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল: হ্যাঁ, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আমরা এ ব্যাপারে একটা ‘ডিপ্লোম্যাটিক নোট’ পেয়েছি। যেখানে তারা জানিয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর করা ওই মন্তব্যকে তারা অনুচিত ও অবাঞ্ছিত বলে মনে করছে।
এখানে এটাও বলবো যে ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম শিডিউলের দশম অনুচ্ছেদে যে ‘লিস্ট ১’ বা তালিকা দেওয়া হয়েছে– তাতে কিন্তু পরিষ্কার বলা আছে যে পররাষ্ট্র বা বিদেশ সংক্রান্ত যেকোনও বিষয় পুরোপুরি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাভুক্ত। এখানে ভারতের কোনও রাজ্য সরকারের মন্তব্য করার কোনও এখতিয়ারই নেই। কারণ এটা ‘যৌথ তালিকা’রও বিষয় নয় কোনও মতেই। বিদেশ সংক্রান্ত যেকোনও বিষয় নিয়ে কথা বলার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র অধিকার তাই দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের, আর কারও নয়!
এসজে/এমএম