সৌরভ শুভ, জাবি প্রতিনিধি:
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সকল প্রকার দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণ চায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। নিজ বিভাগে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এখন পর্যন্ত ৯টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দিয়েছেন। দর্শন, গণিত, পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), অর্থনীতি, রসায়ন, অনুজীব বিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ মর্মে বিবৃতি দিয়েছেন। যদি কোন শিক্ষার্থী নবগঠিত বা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত কোন রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণ করে কিংবা কমিটিতে নাম আসে তাহলে ওই শিক্ষার্থীকে বয়কট এবং অবাঞ্চিত করা হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে আমরা কোন ছাত্র রাজনীতি চাই না। ক্ষমতায় যে দল'ই আসুক সে দল আবার একইভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনিরাপত্তায় ফেলবে। ৫ জুলাই ছাত্রদের প্রাণের বিনিময়ে যে অভ্যুত্থান হয়েছে। এই সুযোগে যেন কোন রাজনৈতিক দল ক্যাম্পাসে ফিরে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করতে পারে। আর কোন সংঘাত নয় শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস এবং সুন্দর একাডেমিক পরিবেশ চান শিক্ষার্থীরা। একইসাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) এবং হল সংসদ চালু করার দাবি জানান।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, শিক্ষার্থীদের চাওয়া'ই আমাদের চাওয়া। সম্প্রতি আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টের কমেন্ট বক্স, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে দেখতে পাচ্ছি শিক্ষার্থীরা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে আমরা সবসময় প্রাধান্য দিয়ে আসছি। তাদের সাথে আমরা একমত।
শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) এবং হল সংসদ চালু করার দাবি জানান তিনি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সমন্বয়ক আহসান লাবিব বলেন, আমরা গণঅভ্যুত্থানে সফল হয়েছি। আমরা চাইনা ক্যাম্পাসে কোন দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চলুক। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র-শিবির, ছাত্র ইউনিয়ন কিংবা ছাত্র ফ্রন্ট যেকোনো দলের রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) এবং হল সংসদ চালু হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী খালেদ জুবায়ের শাবাব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি ক্যাম্পাসে কোন লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থাকবে না। এর আগে আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনে আমাদের উপর নৃশংস হামলা করে। তাদের এই উদ্যত একদিনে তৈরি হয়নি। পরবর্তীতে, বাংলাদেশের সরকারে যে দল'ই ক্ষমতায় আসবে, আমি মনে করি আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকার কোন সুযোগ নেই। নইলে সামনে এমন উদ্ভুত পরস্থিতি তৈরি হবে যার কারনে আমরা শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা নিয়ে সন্দিহান থাকব।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই জাকসুর মাধ্যমে ছাত্র প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হোক। জাকসুর মাধ্যমে ছাত্ররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। প্রতি আবাসিক হলে 'হল সংসদ', 'বিভাগীয় সংসদ' নির্বাচন করা যাতে করে কোন ধরনের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি না হয়। শিক্ষক রাজনীতি সেটিও বন্ধ করা উচিত। শিক্ষক রাজনীতির মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষকরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ও টোকাই বাহিনীকে আমাদের উপর লেলিয়ে দিয়েছে। আমি মনে করি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনধরনের ছাত্ররাজনীতি এবং শিক্ষক রাজনীতি থাকা উচিত নয়।
জাবি ছাত্রফ্রন্ট এর অন্যতম সংগঠক সোহাগি সামিয়া বলেন, এতোদিন শাসকগোষ্ঠী একক ছাত্র সংগঠনকে তাসের রাজ্য কায়েম করতে দিয়েছে। জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক বিষবাষ্প তারা ছড়িয়ে দিয়েছিলো। ফলে, জনগণ রাজনীতিকে ভয় পাচ্ছে।আমরা চাই সৎ, আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতি। যে রাজনীতি মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করবে।
তিনি আরো বলেন, এখন যেহেতু শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি চাচ্ছে না। তাই এখন মানুষকে রাজনীতির পথে নিয়ে আসার যে সংগ্রাম, আমাদের সে সংগ্রাম চলতে থাকবে।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ঢালাওভাবে সকল ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণ কোন সমাধান বয়ে আনবে না বলে আমি মনে করি। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আগে জড়িত ছিলো এবং ভবিষ্যতে করতে পারে এই ধরনের সংগঠন গুলোকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক দলগুলো কোনধরনের সহিংসতা ছাড়া চলবে না এটা আমরা জানি। কিন্তু যারা স্বচ্ছ রাজনীতি করে, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, অতীতে করেছে গত আন্দোলনে করেছে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা কোনভাবে যৌক্তিক বলে আমার মনে হয় না। এর আগে হত্যা কান্ডের দায়ে ছাত্র-শিবির নিষিদ্ধ হয়েছে৷ এরপর ছাত্রলীগের যে কর্মকাণ্ড আছে সেটার জন্য তারা নিষিদ্ধ হতে পারে। আমরা অতীতে দেখেছি ছাত্রদলও একই কায়দায় সহিংসতা করেছে। এধরনের সংগঠন গুলো নিষিদ্ধের দাবি আমরাও জানাই।
তিনি আরো বলেন, হলগুলোতে হল সংসদ, জাকসু নির্বাচন দেওয়া। এর মাধ্যমে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন করা যেতে পারে। সম্পূর্ণভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা শিক্ষার্থী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণকর হবে বলে আমরা মনে করিনা।
এমআই