নিজস্ব প্রতিবেদক:
নজিরবিহীন গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক ‘আশ্রয় চাওয়া’ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। এমন গুঞ্জনের মধ্যে দেশটির ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সংসদ সদস্য রুপা হক বলেছেন, তার সরকারের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন হবে না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্যান্ডার্ডে এক নিবন্ধে শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় না দেওয়ার পক্ষে নিজের মত তুলে ধরেন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য রুপা হক।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারত পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। সেই থেকে তারা ভারতেই আছেন।
ভারত থেকে শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন বলে খবর দিতে থাকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছেন বলেও খবর আসে। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনো তথ্য দেয়নি।
গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্যাডার্ডে লেখা নিবন্ধে যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার আশ্রয়ের বিষয়ে কথা বলেন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য রুপা হক। শুরুতে ঐতিহ্যবাহী ব্যান্ডদল বিটলসের অমর শিল্পী জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ বিষয়ক গানের কথা তুলে ধরেন তিনি।
নিবন্ধে রুপা হক লিখেছেন, বাংলাদেশ কতটা ‘বিশৃঙ্খল’ ছিল তা নিয়ে গেয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন। গত সপ্তাহে তিনি আবার সঠিক প্রমাণিত হলেন। ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতাচ্যুতির পর যেমন দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, গত সপ্তাহে বাংলাদেশেও তেমন দেখা গেছে। দেশটির জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে, কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে। ঢাকার সেই উত্তাপের আঁচ আমাদের টাওয়ার হ্যামলেট (যুক্তরাজ্যের একটি পৌরসভা) অব্দি এসে পৌঁছেছিল।
শেখ হাসিনার পতনকে চীনের তিয়ানআনমেন স্কয়ারের সঙ্গে তুলনা করে রুপা হক লিখেছেন, ৫৩ বছর বয়সী স্বাধীন বাংলাদেশকে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করেছেন শেখ হাসিনা। তাকে দেশটির বেশিরভাগ মানুষই ‘স্বৈরাচারী’ ও ‘বর্বর’ শাসক মনে করে।
শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রসঙ্গে রুপা হক লিখেছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শেখ হাসিনার ব্যাপক অজনপ্রিয় শাসনামল ও অভিবাসনসংক্রান্ত রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার নিরিখে যুক্তরাজ্য সরকারের এমন একজনকে আশ্রয় দেওয়া সমীচীন হবে না, যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের দাবি রয়েছে। অনেক বাংলাদেশি মনে করে, তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
নিবন্ধের শেষের দিকে রুপা হক লিখেছেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর আমার বাংলাদেশি ভাই–বোনদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। সরকারের অন্যায় নিয়ে কথা বললেই আর নিপীড়নের শিকার হওয়ার ভয় নেই। তবে ঝুঁকি এখনো রয়েছে। আশা করি সেখানে গণতন্ত্র ফিরবে।
এমআই