বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

জামালপুরে আ.লীগের ১৬ বছরের ‘সাম্রাজ্য’ বিএনপির কবজায়

রোববার, আগস্ট ২৫, ২০২৪
জামালপুরে আ.লীগের ১৬ বছরের ‘সাম্রাজ্য’ বিএনপির কবজায়

মোঃ ইমরান মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি:  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ১৬ বছরের ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জামালপুর জেলা জুড়ে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দখলবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গত ১৬ বছর ধরে শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালটি নিয়ন্ত্রণে ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হাতে। ৫ আগস্টের পর থেকে ওই টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ এখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতে চলে গেছে। গত ২২ আগস্ট বাস মালিক সমিতির নতুন কমিটিও করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শুভকে সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম জার্নিসকে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুনের নির্দেশনায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওই টার্মিনালটি দখলে নেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জার্নিসের সঙ্গে যোগসাজশে শাহ্ মো.ওয়ারেছ আলী মামুন একটি নতুন কমিটি গঠন করেছেন। বিস্ময়ের বিষয় নতুন কমিটিতে ওই আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম জার্নিসকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শুভকে করা হয়েছে। 

বাস টার্মিনাল সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল বাস স্ট্যান্ড নামে পরিচিত এই স্ট্যান্ড  ১১০টি থেকে ১২০টি বাস রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৯টি জেলায় নিয়মিত চলাচল করে। এর মধ্যে লোকাল বাস রয়েছে ৯০ টি। বাকিগুলো কাউন্টার ভিত্তিক সিটিং সার্ভিস। ৮ আগস্ট সকাল থেকে লোকাল বাস চললেও কাউন্টার ভিত্তিক বাস চলাচল পুরো দমে শুরু হয় ১১ আগস্ট রাত ও ১২ আগস্ট সকাল থেকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বাস মালিক জানান- বাস চলাচল শুরুর পর থেকেই আওয়ামী লীগের মতো চাঁদাবাজি শুরু করে বিএনপির নেতারা। ১২ আগস্ট থেকে সব মিলিয়ে দৈনিক ১৫ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয় জিপি’র নামে। এই টাকা নেন আলআমিন নামে এক শ্রমিক দল নেতা। আল আমিন অনেক আগে থেকেই এই টাকা তোলার দায়িত্বে থাকলেও ১২ তারিখের পর থেকে এই টাকা ভাগাভাগি করে নেন জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মামুন, ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শুভসহ স্থানীয় বিএনপি নেতারা।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাস মালিক বলেন-‘যে সরকারই আসুক বাস স্ট্যান্ডে সবসময় জিপি’র নামে চাঁদাবাজি করে দলীয় নেতা কর্মীরা। শেখ হাসিনার পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম যে এই জিপি’র হাত থেকে আমরা রক্ষা পাবো। কিন্তু পরে দেখি যে আওয়ামী লীগ যা করেছে এখন বিএনপি তাই করছে। তাহলে পার্থক্য কি হলো? বিএনপিও চাঁদাবাজ- আওয়ামী লীগও চাঁদাবাজ।’

শুধু কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নয়, জামালপুর পৌর বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রনে নিয়েছেন জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শহর বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সাদেকুর রহমান হীরার নেতৃত্বে বিএনপির একটি দল। তবে সেখানে কোনো চাঁদাবাজির খবর পাওয়া যায়নি। পুরো জেলা জুড়ে সিএনজি স্ট্যান্ড গুলোর নিয়ন্ত্রন নিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কয়েকটি সিএনজি স্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপি নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে জামালপুর শহরতলীর ছনকান্দায় বালু বহনকারী গাড়ি থেকে টোল আদায়ের টোল বক্স পুড়িয়ে দেয় স্থানীয় যুবদল নেতারা। এখন পর্যন্ত টোল আদায় বন্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমঝোতার পর আবার টোল আদায় শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। জামালপুর সদরের শরিফপুর ইউনিয়নে ৪টি বালুর ঘাট থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা টুল উত্তোলন করা হচ্ছে। এর অর্ধেক নিচ্ছেন   ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান হামিদী ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল। আর বাকি অর্ধেক টাকা নিচ্ছেন ঘাটের ইজারাদার অসীম কুমার বসাক (রনি)।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন- ‘জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শাহ্ মোহাম্মদ ওয়ারেছ আলী মামুনের অনুসারি নেতাকর্মীরা এসব দখলে নিয়েছেন। তারা ক্ষমতায় না যেতেই সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রনে নিচ্ছেন। তাহলে ক্ষমতায় গেলে কি করবে?’

অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর শুনেই জামালপুরে মির্জা আজমসহ জেলার শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়াও শহরের দেউড়পাড় এলাকায় আলেয়া গার্ডেন লুটপাট ভাঙচুর করা হয়। এর নেতৃত্ব দেয় জেলা মৎসজীবী দলের সভাপতি আব্দুল হালিম। সেখান থেকে গরু ও পুকুরের মাছসহ অফিসের যাবতীয় মালামাল লুটের নির্দেশ দেন জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও তার ছোট ভাই শহর বিএনপির সাধারন সম্পাদক শাহ্ আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। একই এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোরহাব হোসেন বাবুলের মৎস ও ডেইরী খামার লুটপাট ও ভাঙচুর করেন বিএনপি নেতা শাহ্ মাসুদ। একই দিনে জামালপুর জেলা ক্যামিস্ট ও ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম মামীমের ডেইরী ফার্মের গরু লুটপাট ও ভাঙচুর করেন জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব গাউছুল আজম শাহীন। শহরের পলাশগড় এলাকার রিক্রেয়েশন ক্লাবে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এছাড়াও শহরের জাহেদা শফির মহিলা কলেজের নির্মানাধীন ভবনের নির্মান সামগ্রী রড, সিমেন্টসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট হয়। এসবের নেতৃত্বদেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম কর্ণেল ও মনো।  

এ বিষয়ে জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট শাহ মোঃ ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন-‘দখলের অভিযোগটি সঠিক নয়। যারা টোল আদায়ের দায়িত্বে ছিলো, তাদের সাথে স্বমন্বয় করেই টোল আদায় করা হচ্ছে। আর আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে থাকায় টার্মিনাল পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। তাই সেখানে বিএনপির নেতারা বিএনপির নেতারা বাস চলাচলের জন্য টার্মিনালটি পরিচালনা করছে।’ 

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল