রাইসা মেহজাবীন:
বর্তমান সময়ে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে চিনির উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে চিনির অতিরিক্ত সেবন যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ওজন বৃদ্ধি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করে, তেমনি অন্যদিকে চিনির প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি অনেকের জীবনে নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চিনির এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ম্যাগনেসিয়াম একটি প্রয়োজনীয় খনিজ, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। এটি প্রায় ৩০০টি এনজাইমেটিক ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, যা শক্তির উৎপাদন, প্রোটিন সংশ্লেষণ, ডিএনএ মেরামত, এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আধুনিক খাদ্যাভ্যাসে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা চিনির প্রতি আসক্তি বাড়িয়ে দিতে পারে।
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে শরীরে চিনি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়, যা আসক্তির জন্ম দেয়।
এছাড়াও, ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে স্নায়ুতন্ত্র উত্তেজিত হতে পারে, যা মস্তিষ্ককে চিনির মতো দ্রুত শক্তি প্রদানকারী খাদ্য গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করে।
এক্ষেত্রে, পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করলে শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। একই সঙ্গে, এটি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে, মস্তিষ্কের উদ্দীপনা কমায়, এবং চিনির প্রতি আকর্ষণ হ্রাস করতে সাহায্য করে। খাদ্যাভ্যাসে ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম, শাকসবজি, পুরো শস্য, এবং মাছ অন্তর্ভুক্ত করা চিনির আসক্তি কমাতে কার্যকরী হতে পারে। এছাড়া, প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করা যেতে পারে।
চিনির প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি কমাতে ম্যাগনেসিয়ামের ভূমিকা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে, সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে যে, ম্যাগনেসিয়ামের পর্যাপ্ততা চিনির আসক্তি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য খাদ্যাভ্যাসে ম্যাগনেসিয়ামের গুরুত্ব অবহেলা করা উচিত নয়।
রাইসা মেহজাবীন
শিক্ষার্থী , খাদ্য ও পুষ্টি
গভর্নমেন্ট কলেজ অফ অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স
সময় জার্নাল/এলআর