সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ ‘পুরোদস্তুর একাডেমিশিয়ান’ বলে সুপরিচিত ক্যাম্পাসে। একইসঙ্গে রাজনীতিবিমুখ হিসেবে পরিচিত এই শিক্ষক। তার হাত ধরে দলীয়করণের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য শিখরে পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা সর্বজনের। তেমনই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কেও এগিয়ে নিতে পুরোদস্তুর একাডেমিশিয়ান উপাচার্য চান সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ১৩ জন উপাচার্য নিয়োগ পেয়েছেন। অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তাদের পিছু ছাড়েনি। এসব অভিযোগ গড়িয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন পর্যন্ত। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর গত ৮ আগস্ট সর্বশেষ উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামসহ উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছে।
ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সেশনজট চরম আকার ধারণ করছে। তাই ক্যাম্পাস সচল করতে অতিদ্রুত উপাচার্য চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে দলীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় নয় বরং ঢাবি উপাচার্যের মতো শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে শিক্ষক-কর্মকর্তারাও সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মরিয়া হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। আশা করি যিনি উপাচার্য হয়ে আসবেন তিনি দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন না করে শিক্ষার্থীবান্ধব হবেন। যতদুর জেনেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য শিক্ষার্থীবান্ধব ও পুরোদস্তুর একাডেমিশিয়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য আমরাও চাই। যিনি ইবির সকল বৈষম্য এবং অব্যবস্থাপনা সংস্কার করতে পারবেন।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াহিদা খানম আশা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডার মূলত শিক্ষার্থীরা। আর আমাদের এখানে শিক্ষার্থীরাই বেশি অবহেলিত। সৎ, যোগ্য ও দক্ষ উপাচার্যের অভাবেই আমাদের এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে। আমরা সেশনজটের কবলে পড়তে চাই না। সময়মতো গ্রাজুয়েশন শেষ করতে চাই। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এগিয়ে নিতে অ্যাকাডেমিক দিকে তুলনামূলক বেশি নজর দেওয়াটা অত্যাবশ্যক। শিক্ষা-গবেষণাই যদি না হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজ কী! আমরা শিক্ষকনেতা বা রাজনীতিবিদ শিক্ষক চাই না। আমরা প্রকৃত শিক্ষক চাই। তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যের মত, রাজনীতির বাইরে গিয়ে যিনি শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবেন; এমন উপাচার্য চাই।
আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ইকবাল হোসেন ইমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে শিক্ষার্থীবান্ধব, মেধাবী এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করবেন এমন শিক্ষককে চাই। লেজুরভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কেনো ব্যক্তিকে আমরা অভিভাবক হিসেবে মানবো না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক মুখলেসুর রহমান সুইট বলেন, দলীয় উপাচার্য হওয়া মানে খোলস পাল্টিয়ে আবার একই চিত্র। অর্থ্যাৎ যেই লাউ সেই কদু। উপাচার্য হোক শিক্ষার্থীদের জন্য, যেন কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী না হয়। বিগত উপাচার্যরা বিভিন্ন দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন, প্রজেক্ট আর নিয়োগে যতটা নজর দিয়েছেন তার সিকিভাগও একাডেমিক দিকে দেয়নি। একাডেমিক দিকে নজর দিলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দৈন্যদশা দেখতে হতো না। উপাচার্য আসে, উপাচার্য যায় আমাদের দেখার কেউ থাকে না। থাকা-খাওয়া, ইন্টারনেট, পরিবহন, ক্লাস-পরীক্ষা, র্যাগিং, হ্যারেজমেন্ট, কাগজপত্র উত্তোলন সহ বিভিন্ন সমস্যা কেউই সমাধানের উদ্যোগ নেন না সেভাবে। আমরা চাই এমন একজন উপাচার্য আসুক যিনি শিক্ষার্থীদের দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন।
এমআই