নিজস্ব প্রতিবেদক:
কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজে মহডা দিচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্বৈরাচারি হাসিনার দোসর গত ১৫ বছর কলেজটিকে লুটেপুটে খাওয়া অধ্যক্ষকে রক্ষায় তারা মাঠে নেমেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে প্রকাশ, অধ্যক্ষকে রক্ষায় তারা কলেজের আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁডাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। দল ভারী করতে সঙ্গে নিচ্ছে খুনী হাসিনার হেলমেট বাহিনীর সদস্যদেরও। এদেরকে অর্থ দিচ্ছে কলেজকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বানানো সাবেক এমপি নুরুন্নবী শাওন এবং নির্যাতনকারী অধ্যক্ষ জুলহাস উদ্দিন। বাহারি সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে সবকিছু সমন্বয় করছেন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি এবং এ কোটায় ক্রীডা শিক্ষকের চাকরি পাওয়া বিএনপি নেতা দাবিদার রূহুল আমিন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে সাধারণ ছাত্ররা যখনই অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামে তখনই ছাত্রদলের পরিচয় দিয়ে ছাত্র লীগের ক্যাডারদের সাথে নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ঝাপিয়ে পডেন তারা।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহষ্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন সাধারণ ছাত্র মিছিল নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে যায়।
এসময় কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি তন্ময়, বর্তমান আহবায়ক সোহেল, সদস্য সচিব শেখ আহম্মেদ, ছাত্রদল নেতা জামিল, বখতিয়ার, ওয়াকিল প্রমূখ সাধারণ ছাত্রদের বাধা প্রদান করে। গত বছরগুলোয় ছাত্র লীগের মিছিল করে অনেকেই এসময় ছাত্রদল নেতাদের সংগে ছিলো।
তীব্র বাদানুবাদ, গালি-গালাজ এবং হাতাহাতির পর সাধারণ ছাত্ররা এক পর্যায়ে কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হয়।
ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সাথে নিয়ে ছাত্রদল নেতাদের এজাতীয় গণবিরোধী, দলীয় শৃংখলা বিরোধী এবং হাজারো শিক্ষার্থীর প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষকমন্ডলী এবং কলেজের কর্মচারীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, সিদ্ধশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ শেখ জুলহাস উদ্দিন এবং উপাধ্যক্ষ সায়রা বেগম-কে পদত্যাগ করতেই হবে। কারণ শেখ হাসিনা ও নরুন্নবী শাওনের আশ্রয়ে থেকে তারালগত ১৫ বছর হালুয়া-রুটি লুটেপুটে খেয়েছন।কলেজকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগের আখডা বানিয়ে সাধারণ ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর নিপিডন চালিয়েছন।বৈসম্যবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর কতিপয় দলীয় শিক্ষক ও ছাত্রলীগ দিয়ে হামলা চালিয়েছন।তাদের প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের তুলে নিয়ে যৌন নির্যাতন চালিয়েছে।ছাত্রলীগের অর্ধ শতাধিক দলীয় ক্যাডারকে কলেজে চাকরি দিয়ে তারা মেধাবী চাকরিপ্রার্থীদের বনচিত করেছন।
এদিকে শেখ জুলহাস উদ্দিনকে ফ্যাসিবাদের ল্যাসপেন্সার আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে অধ্যক্ষের অপরাধ-দুর্ণীতির ফিরিস্তির প্রথম কিস্তি লিফলেট আকারে প্রকাশ করেছেন সাধারণ ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকরা।
এতে অধ্যক্ষকে বৈসম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ওপর হামলাকারি, অবৈধ প্রিন্সিপাল, ফ্যাসিবাদি শেখ হাসিনার তল্পীবাহক, দূর্ণীতিবাজ, দলবাজ উল্লেখ করে বলা হয়, আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস) ঢাকা মহানগরী শাখার সভাপতি হিসেবে তিনি কলেজকে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের মতো করে ব্যবহার। কলেজকে ছাত্রলীগের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন-নিপিডন চালিয়েছন।নন-মেট্টিক, অছাত্রদের দিয়ে তথাকথিত অবৈধ ছাত্র সংসদ গঠন করে তাদের মাধ্যমে কলেজ ফান্ডের কোটি কোটি টাকা খরচ করে ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায্য অধিকার হরণ করেছন।
লিফলেটে বলা হয়, প্রিন্সপালের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে তথাকথিত ছাত্রনেতা পরিচয়ে আওয়ামী গুন্ডাদের দিয়ে ছাত্রীদের জোরপূর্বক যৌন হয়রানি ও নির্যাতন।দলীয় ক্যাডার পরিচয়ে অবৈধভাবে নিযুক্ত শিক্ষক এবং প্রিন্সিপালের লাঠিয়াল হিসেবে পরিচিত তথাকথিত ছাত্রলীগারদের লেলিয়ে দিয়ে বৈসম্যবিরোধি যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলা করানো। আওয়ামী লীগে নিজের দলীয় পদ-পদবী এবং ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহনীকে ব্যবহার করে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর অত্যাচার।শীর্ষ সন্ত্রাসী, একাধিক চান্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী ও আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি নূরুন্নবী শাওনের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থেকে কলেজ ফান্ড থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট এবং শিক্ষকতার অযোগ্য শাওনের ক্যাডারদের গণহারে নিয়োগ দিয়ে কলেজের শিক্ষার মান ও পরিবেশ বিনষ্ট করা হয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, নূরুন্নবী শাওন এবং প্রিন্সিপাল জুলহাসের ভাই, বোন, ভাবী, ভাইয়ের ছেলে-মেয়ে, বোনের ছেলে-মেয়ে, শালী, ভায়রা প্রভৃতি আত্মীয়-স্বজনকে ঢালাও চাকরি দিয়ে কলেজকে পারিবারিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা, কলেজের ভবন নির্মাণে টেন্ডার ছাডাই শাওনের ভাইয়ের কোম্পানির মাধ্যমে অন্তত ১৮ কোটি টাকা লোপাট করা, কলেজের পুরতন ভবন ১৪ লাখ টাকায় বিক্রি করে মাত্র দেড লাখ টাকা কলেজ ফান্ডে জমা দিয়ে বাকী টাকা তসরূপ করা, অবৈধভাবে নিযুক্ত কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী শাওনের ভাবি সায়রা বেগম গত ১০ বছর ধরে বছরের অধিকাংশ সময় আমেরিকা-কানাডায় থেকেছন কিন্ত কলেজ থেকে সারা বছরের বেতন-ভাতা নিয়েছেন। এসময় তিনি নিয়মিত সরকারি বেতনও অবৈধ প্রিন্সিপালের স্বাক্ষরে উত্তোলন করেছেন।
পিএসসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, প্রক্সি পরীক্ষা, বিশেষ পরীক্ষার্থীদের পৃথক কক্ষে বসিয়ে পরীক্ষার দেয়ার ব্যবস্থা করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার মেধাবীকে সরকারি চাকরি থেকে বনচিত করা হয়েছে দাবি করে লিফলেটে বলা হয়, কলেজ, বোর্ড, বিশ্বিবদ্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষায় অতিরিক্ত ইনভেজিলেটর দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা লোপাট করা, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে চারটি ফাস্ট ক্লাসধারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী প্রার্থীদের বনচিত করে বিভিন্ন কলেজ থেকে অতি সাধারণ ফলাফলধারী ছাত্রলীগের ক্যাডারদের নিয়োগদান, আন্দোলনরত ছাত্র-শিক্ষকদের প্রিন্সিপালের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে আসতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ, চাকরিচ্যুতি এবং ছাত্রত্ব শেষ করে দেয়ার হুমকি প্রদান, পদত্যাগ ঠেকাতে জামায়াত, শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে বৈঠক অব্যাহত রাখার পাশিপাশি সম্ভাব্য স্থানে টাকা ছিটানো, বৈসম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনের ঈর্ষনীয় সাফল্যে কালিমা লেপন করতে শেখ হাসিনার ক্যাডারদের সাথে নিয়ে একজন সমন্বয়কের পিতাকে কলেজে এনে তার মাধ্যমে সবকিছু ম্যানেজ হয়ে গেছে বলে প্রচার করে বেডানো, কলেজ বন্ধ করে সব ছাত্র-শিক্ষককে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে, বিশেষ করে শাওনের নির্বাচনী কাজে ভোলায় গিয়ে বর্তমানে ভোল পাল্টিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে গা ভাসিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা, শিক্ষার্থীদের বৈসম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলন ঠেকাতে শেখ হাসিনার ডাকা সভায় মহানগরী বাকশিস সভাপতি হিসেবে নিজের যোগদান এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষদের যোগদানে বাধ্য করার অভযোগও আনা হয় শেখ জুলহাসের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও অভিযুক্তের মতামত পাওয়া যায়নি।
এমআই