নামহীন অপেক্ষা
চশমার ঘোলাটে কাঁচটা মুছতে মুছতে,দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম।
রাত্রি নয়টা বাজে, বারান্দার দরজা খোলা।
রজনীগন্ধা ফুলের সুভাসে পুরোটা ঘর ভরে গেছে।
কি দারুন মুগ্ধতা কাজ করে।
প্রতিটি রাতে ঠিক এসময়ে সুগন্ধটা অনুভব করা যায়।
কার বারান্দায় যে শোভা পাচ্ছে ফুলগুলো, কে জানে!
এখনো কানে বাজে সেই করুণ আর্তনাদ, চিৎকার।
আমার নিজের।
খুব কেঁদেছিলাম সেদিন, যেদিন তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেলে।
তুমি ফিরেও তাকাওনি।
দেখতে দেখতে ছয় বছর কেটে গেল।
কোনো এক বসন্তে তোমার আগমন ঘটেছিল আমার জীবনে।
গাছের নতুন পত্রপল্লবের মত।
সে বছরের শীতেই শুকনো পাতার মত,
ঝরে গেলে আমার জীবন থেকে।
সাতটা বসন্ত, ছয়টা শীত কেটে গেলো।
আজও তোমার নাম শুনলে, আমার বুকের ভেতর উথালপাতাল
ঝড় তোলে।
সারা শরীর কাপুঁনি দিয়ে ওঠে।
শুনেছি, তোমার সোনার সংসার হয়েছে,ফুটফুটে ৪ বছরের মেয়ে।
ওকে নাকি স্কুলে দিবে সামনের বছর।
আমি আজও অনন্তকালের যাত্রা করে যাচ্ছি।
যখন মাঝরাস্তা দিয়ে একা হেঁটে যাই।
হঠাৎ করে মনে হয়, তুমি কোথা থেকে দৌঁড়ে এসে,
আমার হাতটা ধরে বলবে, এইতো আমি, কোথাও হারিয়ে যাইনি।
আমি তোমারই আছি, যেমন আগে বলতে।
মনে হয়, এই বুঝি বলবে, নীরুপমা;
তোমার বাচ্চামি স্বভাবগুলো আজও গেলনা।
তোমার ঠাঁই আমার হৃদয়ের প্রায় পুরোটা জুড়ে।
আর, আমার ঠাঁই হয়েছে তোমার ব্লক লিষ্টে,
সেখানে, ধুলো জমে গেছে,আমিও মলিন হয়ে গেছি।
জানো, বড্ড ইচ্ছে করে, তোমার সাথে মিনিট দুয়েক সুখ-দুঃখের আলাপ করি।
তোমার বউ কি ভাবে, না ভাবে, তাই ভেবে আর করা হয়নি।
তবে, চেষ্টা যে করিনি, তা কিন্তু সত্যি নয়।
অপরিচিত নাম্বার থেকে কল দিতাম,তুমি বার বার হ্যালো বলতে।
আমি শুনতাম।
কি যে শান্তি লাগতো!তোমার কণ্ঠস্বর শোনার জন্য আজও ইচ্ছে করে।
জানো, বহুবার প্রাণত্যাগ করার ইচ্ছে হয়েছিল।
তোমার ছবি চোখে ভেসে ওঠে।
আমি মরলে, জানবো কিভাবে, তুমি কেমন আছো?
আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল,
ছয় বছরে কিছুটা স্বাভাবিক করতে পেরেছি।
বাবা-মা বহুবার বিয়ের চেষ্টা করেছিল,
আমি না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।
এখন আর সেই চেষ্টা করেননা, বিয়ের প্রস্তাবও আসেনা।
আমি বুড়ি হয়ে গেছিতো, তাই বলে হয়তো।
কিন্তু, আমি তোমার ফেলে যাওয়া স্মৃতির মাঝে,
সজীব হয়ে থাকবো সারাজীবন।
তোমার ছবিগুলো এখনও প্রতিদিন দেখি।
চোখ দুটো ছলছল করে উঠে, মুছে ফেলি।
আমি আজও বুঝতে পারিনা, আমার কি ভুল ছিল?
আমিও তো বাকী সবার মত ভালোবেসেছিলাম, হয়তো খুব বেশি।
সবারতো আর ঘর বাধাঁর স্বপ্ন সত্যি হয়না।
আমি আজও অনন্ত মহাকালের যাত্রা তোমার সাথে করতে চাই।
লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।