মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রধান অতিথি ড. মুহাম্মদ ইউনূস

অনুকূল পরিবেশ ও সংস্কার দাবিতে মহাসমাবেশের ডাক ব্যবসায়ীদের

শনিবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪
অনুকূল পরিবেশ ও সংস্কার দাবিতে মহাসমাবেশের ডাক ব্যবসায়ীদের

জামাল উদ্দীন:

দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ সংস্কার উদ্যোগের তাগিদ দিতে মহাসমাবেশ আয়োজন করছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। এরই মধ্যে তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মিটিং করেছেন। সেই মিটিংয়ের সূত্র ধরে ব্যবসায়ীদের মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ব্যবসায়ী সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে দেশের শিল্পায়নকে এগিয়ে নেয়া, উৎপাদন বাড়ানো, আইনি ও  ব্যাংকিং ব্যবস্থার এবং সাম্প্রতিককালে শিল্প খাতে যে অস্থিরতা রয়েছে তা কঠোর হাতে দমন করা। 

গত ৫ আগষ্ট বিগত সরকারের পতনের পর শিল্পখাতেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। শ্রমিকদের নানা দাবিতে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যেও বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। কতিপয় ব্যবসায়ী নেতা বিগত সরকারের দালালি করেছেন এমন অভিযোগে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অতিমাত্রায় দালালির কারণে বাণিজ্য প্রসার ঘটেনি। এমনকি ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার ফোরামগুলোও সরকারের কব্জায় পড়ে যায়। এ অবেস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সংস্কার ও বিদ্যমান নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন জরুরী। এসব সংগঠনের নির্বাচনী কাঠামো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিয়েছে। 

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইকে কেন্দ্র করে অনেকদিন ধরেই সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানান এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক আবদুল হক তিনি বলেন, এফবিসিসিআই মূলত সব ধরণের ব্যবসায়ীদের সংগঠন হলেও সম্প্রতি এটি এলিট বিজনেস ক্লাবে পরিণত হয়েছে। এই এলিট ক্লাব আবার বিশেষ রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ব্যবসায়ীদের এলিট ক্লাব। এখানকার নেতৃত্ব ঠিক করে দিত সরকারের উপরমহল থেকে। সাধারণ সদস্যরা মতিঝিলে সংগঠনটির অফিসে ঢুকতে হলেও বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হতো। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় এফবিসিসিআইয়ের শীর্ষ পদে অধিষ্টিত হওয়ার সুযোগ থাকায় সাধারণ সদস্যদের গুরুত্ব ছিল একেবারেই কম। আগে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতিসহ সব পদে সরাসরি নির্বাচন হতো এবং যারা নির্বাচিত হয়ে আসতো প্রত্যেকেই ছিলেন নামকরা ব্যবসায়ী এবং সবার ইমেজ ছিল ভিন্ন রকম। বির্গত কয়েকটি নির্বাচনে বিগত সরকারের আশীর্বাদপুষ্টরা এখানে এসে শীর্ষ পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফলে সাধারণ সদস্যদের প্রতি কোন জবাবদিহিতা তাদের ছিল না বলা যায়। 

সরকার পতনের পর ভিন্ন ধারার কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা সামনে চলে এসেছিলেন। অভিযোগ উঠেছে এদের কেউ কেউ বিজনেস কমিউনিটির কন্ট্রোলিং পাওয়ারটা নিজের আয়ত্বে নিয়েছেন। সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ, আগের মতই কি এখনো চলবে? যদিও অনেকে বলেছেন একটা পরিবর্তন তো হতেই হবে। এটি সেই পরিবর্তনেরই ফল। তবে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা বলেছেন, তারা বরাবরই অবহেলিত। বাংলাদেশ এসএমই ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলী জামান জানান, সবসময়ই এলিট ব্যবসায়ীদের স্বার্থসিদ্ধি করে আসছে এফবিসিসিআই। কিন্তু ব্যাপক কর্মসংস্থান হলেও এসএমই খাত ছিল উপেক্ষিত -অবহেলিত। আমরা চাই এফবিসিসিআই-এ এমন নেতৃত্ব আসুক যারা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসবেন, যারা জিতবেন তারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবেন। 

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, সম্প্রতি শিল্প কারখানায় হামলার পেছনে বহিরাগতদের উস্কানি রয়েছে। তাদের মতে, কারখানার ভেতরে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে সেটা আলোচনার মাধ্যমে মেটানো যায়। কিন্তু বহিরাগতরা এসে হামলা চালালে কিংবা বাইরে থেকে ভেতরে শ্রমিকদের উস্কানি দিলে সেটা সহজে সমাধান করা যায় না। ব্যবসায়ী নেতারা বহিরাগতদের হামলা-উৎপাতকে এই মুহূর্তে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কেউ অভিযোগ করে বলেছেন, রাজনৈতিক পালাবদলের সুযোগ নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও চাঁদাবাজি করছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের বড় শিল্প গ্রুপগুলোর সবাই প্রায় বেকায়দায় রয়েছে। বিশেষত: ছাত্র আন্দোলনের সময় গণভবনে ব্যবসায়ী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় অনেকে আতঙ্কেও আছেন। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার নামে সামনের সারিতে চলে এসেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা। এদের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ কয়েকজন রয়েছেন। গুলশানে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্র (আইসিসি) অফিসে একাধিক বৈঠক হয়েছে।  এসব বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেয়া ও উদ্ভূত বিষয়ে সরকারের সুনজরে আনা প্রয়োজন বলে মতামত ব্যক্ত করা হয়। সে ধারাবাহিকতায় দেশের বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নজরে সমস্যাটি তুলে ধরা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করে করেন। এ অবস্থায় তারা সিদ্ধান্ত নেন যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তারা বিষয়টি তুলে ধরবেন এবং সে আলোকে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ব্যবসায়ী সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে আনুষ্ঠানিক দাওয়াতপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

এদিকে এফবিসিসিআই-এর বর্তমান সভাপতি মাহবুবুল আলম দীর্ঘদিন ধরেই মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে যাচ্ছেন না। তার বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে পদত্যাগ দাবি করে সাধারণ ব্যবসায়ীরা আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবি এখন থেকে এফবিসিসিআই সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন করবে। আর এভাবেই এই মুহূর্তে এফবিসিসিআই সংস্কারের পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া হবে বলে মনে করেন তারা। 

ব্যবসায়ীরা জানান, যৌথ অভিযান শুরুর পর শিল্প কারখানায় পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয়ে আসছে। তবে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। এখানে শ্রমিকদের স্বার্থের পাশাপাশি শিল্পেরও নিরাপত্তা জরুরী । শিল্প না টিকলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। এজন্য শিল্প সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে পারে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর সাম্প্রতিক তৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো। সরকার পতনের পর তিনি অনেক কিছুতেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। ব্যবসায়ী সম্মেলনেও তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে নিয়েও তিনি ব্যবসায়ী সম্মেলন করেছিলেন। তার এবারের তৎপরতায় অনেকেই খুশি। কেউ কেউ আবার ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বললেন, বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কোন কোন ব্যবসায়ী নেতাকে তিনি শেল্টার দিচ্ছেন। এরমধ্যে এফবিসিসিআইয়ের দুইজন সাবেক সভাপতির কথাও বলেছেন তারা। তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার জন্য টেলিফোন করা হলেও আবদুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল