বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তথ্যপ্রযুক্তি খাত: প্রকৃত উদ্যোক্তাদের কোণঠাসা করার অপচেষ্টা

রোববার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪
তথ্যপ্রযুক্তি খাত: প্রকৃত উদ্যোক্তাদের কোণঠাসা করার অপচেষ্টা

মাইদুল ইসলাম:

জুলাই মাসে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে একটি অন্তবর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আগের সরকারের আমলে আইসিটি খাতে অনেক টাকা বরাদ্দ করা হলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তেমন কোনো কার্যকরী সাফল্য আসেনি। বর্তমানে আইসিটি খাতের ব্যবসায়ীদের পরিস্থিতি কেমন? আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন প্রকল্পে গাফিলতি করা ব্যক্তি ও দক্ষ জনবল নিয়ে কাজ করা লোকাল ইন্ডাস্ট্রি কেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি? আশেপাশের দেশের সাহায্য ও নতুন 'বাংলাদেশ ২.০' ধারণায় কী ধরনের তথ্য প্রযুক্তি খাত প্রত্যাশিত? এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তথ্য প্রযুক্তিবিদ নিটন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। 

নিটন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, তথ্য প্রযুক্তি খাত একটি বিশাল ক্ষেত্র, কিন্তু জুলাই মাসে ইন্টারনেট শাটডাউনের পর এই খাতের প্রতিটি সাব-সেক্টরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কিছু খাত হয়তো উঠে দাঁড়াতে পেরেছে, কিন্তু সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং অন্যান্য মূল পরিসেবা খাত এখনও সংকটের মধ্যে রয়েছে। এই সমস্যার মূল কারণ হলো, অনেক সাব-সেক্টরের ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত টাকা নেই, যা তাদের ব্যাংক সাপোর্ট ছাড়াই টিকে থাকতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে, ব্যাংক সাপোর্টের অভাব এবং উদ্বৃত্ত টাকা না থাকার কারণে তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।  

আইটি ও আইটিইএস খাত বর্তমানে বড় ধরনের সংকটে রয়েছে। গত বছর থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে, কেননা নির্বাচনের কারণে নতুন প্রকল্প বা কাজের পরিমাণ বাড়েনি। আবার এই জুলাই মাসে নতুন একটি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যা মহামারীকালীন সংকটের চেয়ে বড় মনে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই সংকট থেকে কতটা উত্তরণ সম্ভব হবে? নতুন কাজের অর্ডার আসবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। 

সরকারি দলের ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব ব্যবসায়ী কাজ করেছে তারা মূলত সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে কাজ করেছে, যা সময়ের সাথে বদলাবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের সাথে কাজ হয়েছে, বিএনপি থাকলে তাদের সাথে হতো।  তো একটা ট্রেন্ড শুরু হয়েছে যারা ওই সরকারের সাথে কাজ করেছে তারা আওয়ামী লীগের, এটা সত্য না। কিছু ব্যক্তি হয়তো সরকার পক্ষের, কিন্তু সবাই অবশ‍ই না। ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকে আলাদা করতে হবে এবং ব্যবসায়ীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। 

নিটন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, বিগত বছরে দক্ষ জনবল নিয়ে কাজ করা ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে এবং এতে আশেপাশের দেশের মদদ থাকতে পারে। তিনি বলেন, কিছু প্রকল্পে সরকার ও ইন্ডাস্ট্রির কিছু ব্যক্তির দুর্নীতির কারণে এখন সত্যিকারের কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, শুধু দেশের কিছু মানুষের মদদই নেই, বরং আশেপাশের দেশের সহযোগিতাও রয়েছে। যদি স্থানীয় শিল্পকে দুর্বল করা যায়, তাহলে নতুন সরকারের অধীনে ব্যবসায়ীদের অন্য দেশ থেকে সলিউশন আনার ওপর নির্ভর করতে হবে। দুর্নীতিবাজরা সরকারের ভুল পথে পরিচালিত করে আসল কাজ করা ব্যবসায়ীদের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও মিডিয়া ট্রায়েলের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
  
ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির জন্য দায়ী করা হলেও, প্রকৃত সমস্যা হলো সরকারের ভেতরের কর্মকর্তারা। তাদের ভূমিকা পরিবর্তন করা জরুরি, কারণ দুর্নীতির মূল চক্র সরকার যন্ত্রেই গড়ে ওঠে। ব্যবসায়ীরা প্রকল্পের পরিকল্পনা পায় অনেক পরে, সাধারণত ২-৩ বছর পর। আমরা যখন ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির জন্য দোষারোপ করি, তখন প্রকৃত সমস্যার দিকে নজর দিই না। উদাহরণস্বরূপ, হাইটেক পার্ক ও বিসিসির একসঙ্গে একইরকম ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু হলেও, মানবসম্পদ উন্নয়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি। সরকার বিশাল বাজেট বরাদ্দ করলেও, সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবহারের অভাবে তার সুফল পাওয়া যায় না। তাই, প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমে সরকারী ব্যবস্থায় সঠিক পরিকল্পনা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি নতুন সরকারকে আহ্বান জানান যে, তারা যেন একটি সমন্বিত সরকার ব্যবস্থার বা Integrated Governance (i-governance) এর দিকে পদক্ষেপ নেন। আইসিটি শিল্প কখনোই বিগত দিনে সরকারের সক্রিয় অংশীদার হিসেবে কাজ করার যথাযথ সুযোগ পায়নি। নতুন সরকারের দায়িত্ব হবে এই অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করা এবং ব্যবসায়ীদের আইসিটি উন্নয়নে আরও অন্তর্ভুক্ত করা। তিনি বলেন, সরকার কেন একই ধরনের প্রকল্পগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালনা করে? এতে কোনো সমন্বয় বা ইন্টিগ্রেশন নেই, যার ফলে নাগরিকরা নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নতুন সরকারকে একটি ডেটা-ভিত্তিক সরকার গঠন করতে হবে, যেখানে তথ্য শেয়ার করা হবে এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পরিশেষে, তিনি বলেন, তরুণরা তথ্যপ্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাই নতুন প্রজন্মের জন্য সরকারের ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করা দরকার। প্রজেক্টভিত্তিক পদ্ধতির পরিবর্তে, সরকারকে একটি উদ্ভাবনী মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের উচিত হবে কোন খাতে ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে, পলিসি ও নিরাপত্তার দিকনির্দেশনা প্রদান করা, সমন্বিত কাঠামো বা integrated framework তৈরি করা। এরপর বাজারকে উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত যাতে নতুন প্রজন্মের সহজেই প্রবেশ করে সমস্যা সমাধান করতে পারে এবং দেশের এসএমই খাতকে শক্তিশালি করতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এভাবেই কাজ হয়, কিন্তু আমাদের দেশে প্রজেক্টভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়  নয়ছয় করার উদ্দেশ্যে, ইনোভেটিভ মাইন্ডসেটকে এগিয়ে আনার জন্য নয়।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল