অ আ আবীর আকাশ, লক্মীপুর প্রতিনিধি:
‘গলায় দড়ি বেঁধে মোটরসাইকেলে বেঁধে আধা কিলোমিটার চেচিয়ে সারা শরীরের ছামড়া তুলে ফেলেছে বেলালের। মা মা বলে চিৎকার করে পানি চাইলে পেট কেটে তার পরনের গেঞ্জি ও শুকনো মাটির চাক পপটের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। মাথায় পাঁচ সুতার লোহার রড ঢুকানো হয় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে। পিনকি মেরে রক্ত বের হলে শুকনো মাটির ঢিল গুঁজে দেয়া হয়। পুরুষাঙ্গে চার সুতার পেরেক ঠোকা হয়। কান কাটে নাক কাটে। মৃত্যু নিশ্চিতের জন্য শরীরের উপর মোটরসাইকেল চালিয়ে দেয় ঘাতকেরা। বেলাল বিএনপি সমর্থিত হলেও সে ইট ভাটা কাজ করত।গর্ত খোঁড়ে বেলালের লাশ মাটি চাপা দেয়ার জন্য। এলাকাবাসী পুলিশ নিয়ে এলে লাশ ফেলে খুনিরা পালিয়ে যায়। ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি শাহজাহানের নেতৃত্বে পঁচিশ ত্রিশ জনের একটি শক্তিশালী ‘শাহজাহান বাহিনী’ গড়ে উঠে। বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলো নুর আলম জিকু।’
এমন লোমহর্ষক হত্যার বর্ণনা করছিলেন ঘটনার সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী বেলালের বড় বোন তাজকেরা বেগম। হত্যার সময় তাজকেরা চিৎকার ও কান্নাকাটি করায় তাকেও বেদম মারধর করে খুনিরা।
নিহত্ত বেলালের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার বাদী হয়ে তৎসময়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং ৪৮ / ১২.
এ হত্যা মামলা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ও পুলিশকে ম্যানেজ করে খারিজ করে দেওয়া। মামলার বাদিনীকে হুমকি ধমকি দিয়ে চেপে রাখা হয়েছিল এতদিন।
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানার কুশাখালী ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহজাহান ও দলীয় পোষ্য বাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে মারধর, হত্যা, ভাঙচুর, লুটপাট, নির্যাতনসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিগত সরকারের আমলে শাজাহান বাহিনীর শাজাহানের নেতৃত্বে আবুল কালামের ছেলে জামাল, নুর আলম জিকু, শফি মেম্বার, নজিবুল্লাহ, শাহজাহান মাস্টার, আবুল কালাম, জামাল মেম্বার, করিম, আরিফ, হেডম জাহাঙ্গীর, মজিব, সাদ্দাম, সাগর, হারুন, খালেক ও হেলাল সহ প্রায় ২৫-৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ বাহিনী ফরাশগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ওয়ার্ড সভাপতি হওয়ায় তাকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে বাজারে চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা আজাদ ডাক্তারকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে তাকে মিথ্যা বিভিন্ন মামলায় আসামি করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। বাহিনীর সদস্যরা তার ঘর লুটপাট করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার জামাল তেয়ারীগঞ্জ এলাকার মেহেন্দী বাড়ির এক নারীকে জোর করে পরকিয়া সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করে। এনিয়ে ওই নারীর শাশুড়ি জাকেরা বেগম প্রতিবাদ করলে তাকে হত্যা করে। থানায় মামলা নম্বর ২২, জিআর ২৯৯ /১৬. এ হত্যা মামলায় জামালের মৃত্যুদণ্ড হলেও দলীয় প্রভাবের কারণে সে বাহিরে থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
বাহিনীর সদস্যরা হত্যা, নির্যাতন, লুটপাট, চাঁদাবাজি, আগুন, দেয়া, যুবতী নারীদের আক্রমণ, গরু-মহিষ চুরিসহ সব ধরনের অন্যায় অত্যাচার চালিয়েছিল। কুশাখালী ইউনিয়নটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর সীমান্তবর্তী হওয়ায় সদর চন্দ্রগঞ্জ থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরত্ব হওয়ায় শাজাহান বাহিনী যা ইচ্ছা তা করে যাচ্ছে। এই নিয়ে বিগত সরকারের আমলে কেউ মুখ খোলার চেষ্টাও করেনি।
যাকে তাকে গরু চুরির মামলা দিয়ে এজাহারভুক্ত করে, পরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এজাহার থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়। যাকের স্থাণীয়রা মামলার ব্যবসা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
স্থানীয় আব্দুল মান্নানের ছেলে মো: সবুজ, আবুল খায়েরের ছেলে সিদ্দিকুল্লা, সিদ্দিকুল্লার ছেলে অলিও উদ্দিন, মমতাজ উদ্দিনের ছেলে দুলাল, জাবেদ, মৃত মোস্তফার ছেলে হারুন, মৃত সাইদুল হকের ছেলে হেদায়েতুল্লাহ, শহীদ কাঙ্গালীসহ আরও অনেককে গরু চুরি, ঘরে চুরি কিবা ডাকাতি মামলার এজাহার নাম দিয়ে পরে পুলিশের মাধ্যমে এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয় সংঘবদ্ধ শাহজাহাননবাহিনীর সদস্যরা। টাকা নিয়ে তাদের মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়।
আজাদের মুক্তি ও বেলাল হত্যার বিচার চেয়ে কুশাখালীর ফরাশগঞ্জ বাজারে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে।
সরকার পরিবর্তন হওয়ায় শাহজাহান বাহিনীর সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় কারো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এমআই