নিজস্ব প্রতিবেদক:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে এক মাস পার করেছে। এই সরকারের এক মাসের কার্যক্রমে আশানুরূপ তেমন কিছু দেখছে না বলে জানিয়েছে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে সদ্য গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ডিআরইউতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এই কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ অন্য নেতারা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসের আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সরকারের এক মাসের কর্মযজ্ঞ পর্যালোচনা করে তেমন আশানুরূপ কিছু দেখছি না।’
সংস্কার প্রসঙ্গে নাসের আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সংস্কার কাজ শুরু হোক, তারপর সময় বেঁধে দেওয়া হবে। সেটা হতে পারে তিন বছর পর্যন্ত।
ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, সেটা ছাত্ররাই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা চাই ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক জ্ঞান থাকুক।’
সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংবিধান আমরা নতুন করে লিখব, আমরা ডিটারমাইন্ড। ৭২ এর সংবিধানে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। সবার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন সংবিধান লিখব, সবার মতের রায় থাকবে।’
লিখিত বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, মন্দির-মাজার যারা ভাঙছে তাদের বিরুদ্ধে এখনো কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এই প্রশ্ন আমরা সরকারের কাছে রাখছি। আমরা আশা করি, সরকার অতি দ্রুত এসব রুখে দিতে ব্যবস্থা নেবে। তা না করতে পারলে সরকার এবং দেশ উভয়ের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
সামান্তা শারমিন বলেন, একইসঙ্গে যারা এসব কাজে জড়িত, তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই, তারা দেশ ও গণঅভ্যুত্থানের শত্রু। ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মিত্রশক্তি এই মুহূর্তে গণঅভ্যুত্থানকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এসব ঘটনা তাদের এই কাজে রসদ যোগাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যারা এসব ঘটাচ্ছে তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি এসব ঘটনার পেছনে কাদের উসকানি আছে তা খতিয়ে দেখার জন্য।
মুখপাত্র আরও বলেন, এসব নিয়ে সরকারের কাছ থেকে যে প্রতিক্রিয়া মানুষ আশা করছিল, তা পূরণ করতে পারেনি সরকার। কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে না, এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। যেকোনো ইস্যুতে সরকারের তৎপরতা খুবই মন্থর ও ধীরগতির। সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা গণঅভ্যুত্থানের সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা যদি তারা ধারণ করতে না পারে তা হবে দেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।
সামান্তা শারমিন বলেন, অভ্যুত্থান রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। ফলে, যারাই অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাদের সামাজিকভাবে প্রতিহত করুন। সবাইকে মনে রাখতে হবে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ। ফলে, যারা মব জাস্টিসসহ নানান কিছুতে অংশগ্রহণ করছে তাদেরও গ্রেফতারের দাবি আমরা জানাচ্ছি। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে ফ্যাসিবাদী শক্তির পূর্ণবাসন প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি। একইসঙ্গে এ বিষয়ে জনগণকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গত ৮ সেপ্টেম্বর ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক এবং আখতার হোসেনকে এই সংগঠনের সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া কমিটির মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন সামান্তা শারমিন। কমিটিতে শিক্ষার্থীদের বাইরেও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে রাখা হয়েছে।
এমআই