রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

জুলাইয়ে লেনদেন কমেছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা

মঙ্গলবার, অক্টোবর ১, ২০২৪
জুলাইয়ে লেনদেন কমেছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা

    নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

    ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রভাবে গত জুলাইয়ের প্রায় পুরোটা সময় উত্তাল ছিল দেশ। আন্দোলন দমাতে ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এর প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নেমে আসে স্থবিরতা। ব্যাংকের সব মাধ্যমেই লেনদেন কমে যায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুলাইয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন কমেছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। 

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, ব্যাংকের মাধ্যমে জুলাইয়ে মোট ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগের মাস জুনে হয়েছিল ৭ লাখ ১৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা বা ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দেশে চেক, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি), ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে অর্থ লেনদেন হয়। এর মধ্যে জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি লেনদেন কমেছে চেকের মাধ্যমে। এর পরই কমেছে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এমএফএসের মাধ্যমে।

    জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার। এরপর টানা পাঁচদিন দেশব্যাপী শাটডাউন ছিল সব ধরনের ইন্টারনেট। তবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন। পরে ইন্টারনেট সেবা ফিরলেও গতি ছিল একেবারেই ধীর। ইন্টারনেট বন্ধের পাশাপাশি আন্দোলন দমাতে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে তৎকালীন সরকার। পাশাপাশি ২১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত তিনদিন নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তাতে বন্ধ থাকে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের লেনদেন। পরবর্তী সময়ে অফিশিয়াল ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলেও সেটি ছিল সীমিত পরিসরে। এতে ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমাও কমে আসে। আন্দোলন দমনে সরকারের এসব পদক্ষেপের প্রভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন কমেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

    দেশের মোট ব্যাংক লেনদেনের বড় অংশ হয়ে থাকে চেকের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চেকের মাধ্যমে গত জুলাইয়ে ব্যাংকগুলোয় ১ লাখ ৮২ হাজার ২ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এর আগের মাস জুনে হয়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে চেকের মাধ্যমে লেনদেন কমেছে ৫২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

    চেকের পর এমএফএসের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়। গত জুলাইয়ে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এমএফএসে। জুনে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। ফলে এক মাসে লেনদেন কমে ৩২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ১২ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ বছরের জুলাইয়ে ৮২ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়। জুনে হয়েছিল ১ লাখ ৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকার লেনদেন। এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ২১ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা বা ২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

    ব্যাংকে অনলাইনে অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যম হচ্ছে ইএফটি। গত জুলাইয়ে এর মাধ্যমে ব্যাংক লেনদেন হয়েছে ৭৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। জুনে হয়েছিল ৯৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার লেনদেন। এক মাসের ব্যবধানে ইএফটির মাধ্যমে লেনদেন কমেছে ২০ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ব্যাংকের প্রচলিত শাখা নেটওয়ার্কের বাইরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেন হয়ে থাকে। গত জুলাইয়ে এর মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা, যেখানে জুনে হয়েছিল ৭৩ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসে লেনদেন কমেছে ৮ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ।

    ব্যাংকের শাখায় না গিয়ে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন ও অর্থ উত্তোলন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গত জুলাইয়ে এক্ষেত্রেও লেনদেন কমেছে। এর মধ্যে ডেবিট কার্ডে গত জুলাইয়ে লেনদেন হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। যেখানে আগের মাস জুনে লেনদেন হয়েছিল ৪৭ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গত জুলাইয়ে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগের মাস জুনে এক্ষেত্রে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এ সময়ে লেনদেন কমেছে ৩৯৮ কোটি টাকা বা ১৩ শতাংশ।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্দোলন সংগ্রামের কারণে গত জুলাইয়ে এক-তৃতীয়াংশ সময় দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। তাছাড়া কারফিউ ও সাধারণ ছুটির কারণেও ব্যাংক লেনদেনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এ সময় অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমেও স্থবিরতা নেমে এসেছিল। এটিও লেনদেন কমার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া নিরাপত্তার কারণে অনেক ক্ষেত্রে এটিএম বুথগুলোয় সময়মতো টাকা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এতেও টাকার সংকটের কারণে অনেক গ্রাহক এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারেননি। ফলে ব্যাংকে লেনদেন কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

    সময় জার্নাল/তানহা আজমী


    Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

    উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

    যোগাযোগ:
    এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
    কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
    ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
    নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

    কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল