শারমিন আক্তার কেয়া, কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শেখ হাসিনা হলে সিনিয়রিটির প্রভাব খাটিয়ে এবং জোরপূর্বক সিট দখলের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। হল প্রশাসন থেকে বরাদ্দকৃত সীটে উঠতে গেলে এমন আচরণের শিকার হন বলে প্রথমে হল প্রশাসনের কাছে লিখিত জানান। প্রতিকার না পেয়ে সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হলেন ফার্মেসী ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদা তাহিরা এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৩ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মুনিরা আক্তার।
গত মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র জমা দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মুনিরা আক্তার।
অভিযোগপত্রে মুনিরা উল্লেখ করেন, দেশ পুনরায় স্বাধীন হলেও আমি আমার অধিকার থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হয়ে আসছি। চলতি বছরের মার্চ মাসের ২০ তারিখ হলের ২১৮ নম্বর রুমের W1 সীটে এলটমেন্ট লিস্টে সীট বরাদ্দ পাই। তবে সে সীটে পূর্বের এলটেড থাকা ছাত্রলীগের সভাপতি ও লোক প্রশাসন বিভাগের ১১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী কাজী ফাইজা মেহেজাবিন আইনগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হবার পরেও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় ও হল প্রশাসনকে বুঝিয়ে থাকেন এবং আমি আমার সীটে উঠতে ব্যর্থ হই। তবে আন্দোলন চলাকালীন জুলাই মাসের শেষ দিকে কাজী ফাইজা মেহেজাবিন সীট ছেড়ে চলে যান।
সরকার পতনের পরপরই আমার স্নাতকোত্তর এর ১ম সেমিস্টার পরীক্ষার রুটিন হয় ও ২ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরুর তারিখ থাকায় ২৯শে আগস্ট হলে এসে নিজ বরাদ্দকৃত সীটে উঠতে যাই। তবে তখনই রুমের ১২ তম ব্যাচের তাওফীকা নামক একজন আমাকে জানান আমার সীটে ১১ তম ব্যাচের মাহমুদা তাহিরা (ফার্মেসি বিভাগ) থাকছেন। আমি যেন রুমের ডোর সীটে উঠি। যেহেতু দীর্ঘ দিন যাবত লিগ্যাল সীট পাওয়ার পরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিল তাই আমি নিজ সীট ব্যতীত অন্যত্র উঠতে নাকচ করি।
সীটে উঠার জন্য এবার মাহমুদা তাহিরাকে জানালে তিনি আমাকে বলেন, 'হলে অনেক দিন যাবত আছি, তুমি আমাকে রুলস শেখাতে এসো না।' কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমাকে মানাতে না পেরে তিনি রূঢ় ভাষায় আমাকে বলেন, 'আমি সীট ছাড়ব না, তুমি পারলে উঠো'। নিজের সীটে উঠতে না পেরে সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে হল প্রশাসনের নিকট আবেদন করি। হল কর্তৃপক্ষ মাহমুদা তাহিরার সাথে কথা বলে এবং পরবর্তীতে তাকে সেপ্টেম্বর এর ২৩ তারিখ নিজ সীটে উঠে আমার সীটের দখলদারিত্ব ছাড়ার জন্য নোটিশ পাঠায়। এরপরও হল কর্তৃপক্ষের এই নোটিশকে উপেক্ষা করে তিনি এখনও পর্যন্ত আমার সীটেই আছেন।
শেখ হাসিনা হলের সীট বরাদ্দ নিয়ে দেয়া বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, এর আগে গত মার্চ মাসে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিরা আক্তার ২১৮ নম্বর রুমের ডব্লিউ-ওয়ান (W1) সীটের জন্য মনোনীত হয়েছেন। পরবর্তীতে গত সেপ্টেম্বর মাসে হল প্রশাসন থেকে দেয়া আরেক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ফার্মেসী ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদা তাহিরাকে ২১৯ নম্বর রুমের ডি-টু (D2) সীট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মুনিরা আক্তার বলেন, নিজের লিগ্যাল সিট থাকতেও অন্যজনের সিটে উদ্বাস্তুর মতো পরে আছি। গত ৬ মাস ধরে আমি আমার সিটে উঠতে পারছি না শুধুমাত্র সিনিয়রদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। প্রশাসন থেকে নোটিশ দেওয়ার পরেও আমার সিটটি এখনও দখল করে বসে আছে। যেখানে আছি সেখানের এলোটেড সিটের মেয়েরা আমাকে ২ দিনের মধ্যে সিট ছাড়তে বলেছে। পূজার বন্ধে নাহয় বাসায় গেলাম কিন্তু বন্ধের পর এসে কোথায় থাকবো আপাতত আমার কাছে এর চেয়ে বড় উদ্বিগ্নের বিষয় আর কিছু নেই। আশা করছি প্রশাসন এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করবেন। আর সেমিস্টার চলাকালীন সময়ে আমাকে এরূপ মানসিকভাবে হেনস্তা করার জন্য প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাইছি।'
অভিযোগের বিষয় মাহমুদা তাহিরা বলেন, 'আমি আসলে তাকে রুমে উঠতে বাধা দিয়েছি বিষয়টা এমন নয়৷ আমি এই সীটে অনেক আগে থেকেই আসলে থাকতেছি, সবকিছু গুছানো আর আমি কিছুদিনে চলে যাবো সেজন্য আসলে ওকে বলেছি পাশের সীটে উঠার জন্য। কিন্তু সে অইটায় উঠবে না, এই সীটেই উঠবে। একপ্রকার আমাকে জোর করে সে সীট থেকে সড়াতে চাচ্ছে।'
'সীট ছাড়বো না, তুমি পারলে উঠো' এমন কথা বলেছেন কিনা প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, 'আমি বিষয়টা ওকে থ্রেট দিয়ে বলি নি৷ আমি তখন টিউশনে ছিলাম, সে আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিলো৷ সামনাসামনি আমাদের কথা হয় নি। ফোনে কথা বলার কারণে বিষয়টা থ্রেট মনে হতে পারে।'
হল প্রশাসন আপনাকে সীট পরিবর্তন করতে বলেছিলেন বলে জানা গেছে। এই বিষয় তিনি বলেন, 'স্যার আমাকে বলেছিলেন। কিন্তু আসলে উইন্ডো ১ বা ২ এমন কোনো নির্দিষ্ট সীট নেই। আমি তাকে পাশের উইন্ডো সীটেই উঠতে বলেছি৷ আর যেহেতু রুমে সবাই সিনিয়র তাই সে আমাদের সাথে সমঝোতা করেই উঠতে পারে সীটে। কিন্তু সেটা না করে সে যেভাবে লিখিত অভিযোগ বা এসব করছে তাতে মনে হচ্ছে সে ভিন্নখাতে ঘটনাকে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে। আমি আল আমিন স্যারকেও বলেছি স্যার যেনো ওকে বুঝিয়ে বলে।'
এ ব্যাপারে হলের হাউজ টিউটর মো: আল আমিনকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এই বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, 'শেখ হাসিনা হলে বর্তমানে কোনো প্রভোস্ট নেই, তাই হলের প্রশাসনিক জায়গাটি শূণ্য বলা যায়। তবে আশা করি দ্রুতই সেখানে প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রভোস্ট নিয়োগের পরপরই আমরা এই বিষয় যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।'
এমআই