মাহবুবুল হক খান, দিনাজপুর প্রতিনিধ: দিনাজপুরে পুলিশের সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল ইসলাম ও র্যাবের সাবেক ডিজি বেনজির আহম্মেদসহ ১৮ জনকে আসামি করে মানবপাচারের মামলা করেছেন মোঃ আতিউল্লাহ সরকার নামে পার্বতীপুরের এক যুবক।
বাদি মোঃ আতিউল্লাহ সরকার পার্বতীপুর উপজেলার শেরপুর (তেলিপাড়া) গ্রামের মৃত ফরিদ উদ্দিনের ছেলে ও পার্বতীপুর উপজেলার জাহানাবাদ মন্ডলপাড়া জামে মসজিদের ইমাম। আসামিদের মধ্যে ৫ জন এছাড়া সবাই পুলিশ ও র্যাবের সদস্য।
বুধবার (২৩ অক্টোবর ২০২৪) তারিখ দুপুরে দিনাজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মোঃ হুমায়ুন কবিরের আদালতে এই মামলাটি করেন। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ সালের ৬/(২)/৭/৮/১০ ও দন্ড বিধি আইনের ১৬৪/৩৬৫/৩৬৬ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় এই মামলাটি করা হয়।
বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে এজাহার হিসাবে গণ্য করার জন্য পার্বতীপুর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলার গত ২০১৭ সালের ২৩ জুন রমজান মাসে আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টায় পার্বতীপুর উপজেলার জাহানাবাদ মন্ডলপাড়া মসজিদে এশা ও তারাবির নামাজ আদায় করাকালিন ১৫/১৬ জন আসামী সাধারণ পোশাকে মসজিদে এসে বাদিকে মসজিদ থেকে তাদের গাড়ির সামনে নিয়ে আসে। বাদি সরল বিশ্বাসে গাড়ির নিকট যাওয়া মাত্রই তারা বাদিকে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তুলে নেয় ও হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দেয় এবং মাথা মুখমন্ডলসহ কালো টুপিতে আবৃত পরে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
গাড়িতে তুলে নিয়ে বাদিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। ৬ ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে নেওয়ার পর বাদির চোখ বাধা অবস্থায় হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে অপরিচিত ও অজানা আয়না ঘর নামীয় ঘরে বন্দী করে রাখে। এখানে রাখা অবস্থায় বাদিকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন ও ইলেকট্রিক শকড দেয় ও তার উপর পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করা হয়। ৬ মাসের অধিক সময় এখানে থাকার পর গত ২০১৮ সালেন ৩১ জানুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটায় উক্ত আয়না ঘর হতে বের করে রাজশাহী রাজপাড়া থানায় নিয়ে পুলিশের নিকট আতিউল্লাহ সরকারকে হস্তান্তর করে। পরে র্যাব-৫ এর এসআই সোহেল রানা বাদী হয়ে সন্ত্রাসদমন আইনে একটি মামলা করে। পরে আদালতের মাধ্যমে বাদিকে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়।
উক্ত মামলায় প্রায় চার বছর কারাগারে আটক থাকার পর গত ২০২২ সালের ১৪ মার্চ আদালতের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হন ও কারাগার হতে মক্তি পান। বাদী দীর্ঘদিন আটক থাকায় তার শিক্ষা জীবন ধ্বংস হয়, শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় ঘটে। এতে বাদির প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেন বাদি।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন-আনিসুজ্জামান সরকার, আনোয়ার হোসেন, জামিল হোসেনক, লুৎফুর রহমান, তহুবার রহমান, র্যাবের এডিশনাল এসপি নূরে আলম, আনোয়ার হোসেন, র্যাবের এসআই সোহেল রানা, র্যাব-৫ এর পরিদর্শক সোহেল রানা, আশরাফ উল আলম, র্যাবের হাবিলদার মহসিন আলী, ল্যান্স নায়ক মাহবুবুর রহমান, কনস্টেবল হুমায়ুন কবির, বিল্লাল হোসেন, এসআই আনিসুর রহমান, এএসআই সোহেল রানা, এসআই মোঃ আনিছুর রহমান, পার্বতীপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই সোহেল রানা ও রাজশাহীর রাজপাড়া থানার এসআই মোহাম্মদ মতিউর রহমান।
এমআই