জামাল উদ্দীন:
বিশ্ববাজারে পণ্যের উচ্চ মূল্য দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, এমনিতেই মানুষ শ্লথ প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ ঋণের কারণে জেরবার; তার সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে।
বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের যৌথ সম্মেলনে দেওয়া এক বক্তৃতায় ক্রিস্টালিনা বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম যে বেড়েছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হবে। এতে মানুষের কষ্ট বাড়বে। এই দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মূল্যের কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন। তিনি আরও বলেন, একদিকে প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, আরেক দিকে উচ্চ ঋণ—এই জোড়া ধাক্কার হাত থেকে মানুষের নিস্তার নেই।
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি কিছুটা ভালো অবস্থায় রয়েছে; যদিও তাঁর সতর্কবার্তা, উদ্বেগ এখনো রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির তুলনায় কিছুটা কম।
সম্মেলন উপলক্ষে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে আইএমএফ। সংস্থাটির পূর্বাভাস, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী বছরেও প্রবৃদ্ধির একই থাকবে। এর মধ্যে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ২ শতাংশ আর উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৫ সালের পর বৈশ্বিক সার্বিকমূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
আইএমএফ আরও বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে আইএমএফের আগের পূর্বাভাস ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতি আগেও ৯ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। সর্বশেষ আউটলুকে বলা হয়েছে, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে বিশ্বের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ শতাংশে স্থির থাকবে। তবে নিম্ন প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সাম্প্রতিক বন্যা এর অন্যতম কারণ বলে জানায় সংস্থাটি। এর আগে প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছিল আরেক দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি। এবার একই পথে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফও।
গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে, আইএমএফের প্রতিনিধি দল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে মন্থর বলে মন্তব্য করে। প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার মত কিছুই ঘটেনি বলেও জানায় তারা। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, শিল্পখাতে অস্থিরতা এবং বন্যাকে কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।
এমআই