রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পারবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে?

বুধবার, অক্টোবর ৩০, ২০২৪
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পারবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে?

অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম: 

ভাগ্য কথাটি লিখেছি, এদেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভাগ্যের কথা তুলে ধরতে। ১৯৭১ সালে একটি  রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করে। অকাতরে জীবন দান, অগনিত মা বোনের ইজ্জতের নাশের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ নামক দেশের জন্ম হয়েছিল। যুদ্ধ কালিন সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা, মুক্তিযুদ্ধে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী জনগণ, কোটি শরনার্থী বলতে গেলে আপামর জনসাধারণ যে স্বপ্ন দেখে পাকিস্তান ভেঙ্গে দিয়েছিল দুই-এক বছরের মধ্যে সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। দেশে ফিরে এসে আপামর জনসাধারণের প্রাণ প্রিয় আওয়ামীলীগ সভাপতি প্রথমে হলেন রাষ্ট্রপতি ,কখনো হলেন প্রধানমন্ত্রী ,ততকালীন সরকারের গৃহদাহ তখন থেকেই শুরু হয়েছিল। তখন জনগণ বুঝতে পারে জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান অজ্ঞাত কারণে একাকী হয়ে পরেছেন। 

তার সমালোচকরা বলে থাকেন, একটি সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষের পেটের ক্ষুধা, মনের ক্ষুধা তিনি পূরণ করতে পারেন নাই তাই তার বিরোধীতা শুরু হলো। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের স্বপ্নে জাসদ গঠিত হলো।  কিছু মানুষ এমন বিক্ষুব্ধ হলো,তারা ইন্জিনিয়ার সিরাজ শিকদার সহ আরো অনান্য নেতাদের নেতৃত্বে একটি সাম্য বাদী বাংলাদেশ গঠনের জন্য উগ্রপথ বেছে নিয়েছিল। সিরাজ শিকদার কে হত্যা করা হলো, জাসদের দাবি অনুযায়ী - ওই সময় ২০-৩০ হাজার জাসদ কর্মী নিহত হয়েছিল। 
এই একাকীত্ব নিরসনের জন্য তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেন। বহুদলীয় গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে সাধারণ মানুষের মনের আকাঙ্খার পথ থেকে ভিন্ন পথে চলতে শুরু করলেন। মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, কেবল মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে লাল ঘোড়ার ভীতি সৃষ্টি করে তিনি সাধারণ মানুষের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন।

বিশ্লেষকরা বলেন, এই সমস্ত কারণে এবং সর্বোপরি মানুষের পেটের ক্ষুধা ও মনের ক্ষুধা, বুঝতে ব্যার্থতা সেই সাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রের কারণে ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট সংগঠিত হয়।  দেশের মানুষ বুঝতে পারে তাদের ভাগ্য নিয়ে কারোর ভাবনা নাই।  

আওয়ামীলীগের খন্দকার মোস্তাক ও তার সামরিক বেসামরিক দোসররা ক্ষমতা গ্রহন করে। আওয়ামীলীগ থেকে দলছুট ও জনবিচ্ছিন্ন মোস্তাক সরকার যুক্তি সংগত কারণে টিকে থাকতে পারে নি। তাছাড়াও মোস্তাকের দেশ শাসনের যোগ্যতা ছিল না। হযবরল অবস্থার মধ্যে, এক ঐতিহাসিক সিপাহি জনতার অভুথ্যানের মাধ্যমে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় আসেন এবং রাষ্ট্রপতি হন। 

৪২ বছরের জেনারেল জিয়ার দেশপ্রেম, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও সর্বোপরি তার নেতৃত্বের গুনাবলি তার সত্যবাদী সমালোচকরাও অস্বীকার করতে পারবে না। জেনারেল জিয়ার জন্য পরিস্থিতি খুব সহজ ছিল না। কর্ণেল তাহের, খালেদ মোশাররফ জেনারেল জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুতি করার কাজে লিপ্ত হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াকে এদের সামরিক বেসামরিক দোসরদের ক্যান্টমেন্টের ভিতরে বাহিরে কঠিন হস্তে ভাবে দমন করতে হয়। 

প্রেসিডেন্ট জিয়া ছিল দুঃসাহসি মানুষ। সার্ক গঠনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জিয়া স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশকে এশিয়ায় একটি উচ্চস্থানে নিয়ে যেতে। যেকোন পাঠক বুঝতে পারবেন তখনই আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র সৃষ্টি হয় জেনারেল জিয়াকে উৎখাত করার জন্য। জেনারেল জিয়ার সহযোগিরা বলে থাকেন , প্রেসিডেন্ট জিয়ার জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল ছিল দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা ওয়াজেদ কে দেশে এনে দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামীলীগকে একত্রীভূত করে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। 

আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে জেনারেল জিয়া ওভার কনফিডেন্ট হয়ে পরেন। তিনি কর্ণেল তাহের, খালেদ মোশাররফদের প্রেতাত্মা, সেনাবাহিনীতে ঘুপটি মেরে থাকা জেনারেল এরশাদ এবং সর্বোপরি দুই ভাগে বিভিক্ত আওয়ামীলীগের একত্রীভূত রূপ সহ পরিবর্তিত  সমাজ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অংক বুঝতে ভুল করেন। পরিণতিতে তিনি নিষ্ঠুর ভাবে নিহত হন চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে। আবারও দুর্ভাগা বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তন কাজ শেষ হলো না।

অতঃপর কিছুটা সময়ের জন্য নাটক করে জেনারেল এরশাদ বাংলাদেশের গদিতে বসেন। তার মেয়াদকালে দেশের উল্লেখ যোগ্য উন্নতি সাধন হয়। সেনানায়ক এরশাদ বুঝতে ব্যর্থ হন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক খেলার মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকা যায় না। 

বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ,আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক তার উপরে আন্তর্জাতিক বিশেষ করে জিওপলিটিক্যাল কারণে ক্ষমতার চির স্থায়ী বন্দোবস্ত অসম্ভব। বাংলাদেশী বাঙালীদের আশা-আকাঙ্খা, চাওয়া-পাওয়া এবং বিশেষ করে মেহনতি মানুষের মধ্যে জাতীয় সম্পদের সুষম বন্টন ছাড়া ক্ষমতার মিউজিক্যাল চেয়ারে নিজের আসন পাকা পোক্ত করা যায় না।  এই কারণেই আওয়ামীলীগ,বিএনপি, জামাত সহ অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির কঠিন থাবায় তিনি ভূপাতিত হন। 
কোন একজন ইসলামি নেতা এরশাদ সম্বন্ধে বয়ান দিতে গিয়ে বলেন দশ বছরের রাজা আশি বছরের সাজা। 

বাংলাদেশের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে, পরিষ্কার বোঝা যায় প্রেসিডেন্ট এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা সহ যারা রাজনৈতিক মসনদে বসছেন তাদের সবাইকে জেল খাটতে হয়েছে।  বিধি বামে গেলে শেখহাসিনা কেও আবার জেলে যেতে হতে পারে। 

আবার জেনারেল এরশাদের কথায় ফিয়ে আসি, কখনো জেলে ,কখনো সেইফ হাউজে এবং তৎপরর্তীতে আওয়ামীলীগের সমঝোতা করে এরশাদ সুখে - দুঃখে দেহত্যাগ করেন। 

ইচ্ছাকৃত বা অনিইচ্ছাকৃত ভাবে দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান যে স্তরে নিয়ে যাওয়া যেত সেই স্তরে নিয়ে যেতে তিনি ব্যার্থ হন। 

তাই এখন হাটে, মাঠে, ঘাটে-বাটে,  চায়ের-দোকানে, এলিট দের ড্রইং রুমে, রাজনীতিবিদের অফিস রুমে একটি মাত্র প্রশ্ন - অন্তবর্তীকালিন সরকার কি পারবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে? (চলবে..)

লেখক: অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম 
সিনিয়র অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ভূ-রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ।
 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল