জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:
বহুল প্রতীক্ষিত কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী ধরলা সেতু উদ্বোধনের ৬ বছর পূর্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে উত্তর ধরলার জনপদের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কমেছে যাতায়াতের সময় ও পথের দূরত্ব।
কিন্তু সংযোগ সড়কে রত্নাই নদীর ওপর একটি সেতুর কারনে সুফল বঞ্চিত কুড়িগ্রামের উত্তর ধরলার লক্ষ লক্ষ মানুষ।রত্নাই নদীর ওপর পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রীজটির কারণে সেতুর পূর্ণ সুফল মিলছে না।
একই সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় উদ্যোক্তারাও এ অঞ্চলে বিনিয়োগ ও শিল্পকারখানা করতে তেমন এগিয়ে আসছেন না।কৃষি খাত ঘিরেই আবর্তিত এ অঞ্চলের অর্থনীতি। ধরলা সেতু চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে সেই বাধা অপসারিত হয়েছে। সবাই আশা করছেন, এবার এ অঞ্চলে কৃষি ও শিল্পের প্রসার ঘটবে।
কিন্তু সেতু উদ্বোধনের ৬ বছর পার হলেও এ গতি মন্থর।ফলে জেলার ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী এবং ভুরুঙ্গামরী উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থনৈতিক সফলতার স্বপ্নের দ্বার উন্মোচন করতে পারেনি এই সেতুটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ধরলা সেতু উদ্বোধনের ৬ বছর হয়ে গেলও সংযোগ সড়কে রত্নাই নদীর উপর জরাজীর্ণ বেইলী ব্রিজ দিয়ে ঝুকি নিয়ে ছোট ছোট পিকাপ ভ্যানে করে মালামাল পরিবহন করছে ব্যাবসায়ীরা।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ,সেতু নির্মাণকাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলা, শ্রমীক সংকট এবং সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা।সেতুর নির্মাণ কাজ অনেকটা ধীর গতিতে চলছে।ফলে দুইশ সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ধরলা সেতুর উদ্বোধনের সাড়ে ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও কাক্সিক্ষত সুফল পাচ্ছেন না কুড়িগ্রামের উত্তর ধরলার লক্ষ লক্ষ মানুষ।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুত্রে জানাযায়, রত্নাই নদীর উপর বেইলী ব্রিজটির পাশে ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রত্নাই নদীর ওপর ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যে ও ১০ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের নতুন আর একটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ।
২০২৫ সালের ১৮ জানুয়ারী সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এ পযর্ন্ত সেতুটির ৬০ শতাংশ কাজ সম্পর্ন হয়েছে। সেতুটির উভয় পার্শ্বে সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ।কংক্রিট এন্ড স্টীল টেকনোলোজি নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মাণকাজ করছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, রত্নাই নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখনও রত্নাই নদীর ওপর পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রীজ ব্যবহার করছি। বেইলী ব্রীজের ওপর দিয়ে ট্রাক চলাছল করতে না পারায় পরিবহন ব্যায় বেশী হচ্ছে। ফলে এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারে।
মুদি ব্যবসায়ী মুকুল মিয়া জানান, রত্নাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ট্রাকের পরিবর্তে ইজিবাইক ও ট্রলিতে মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। এ কারনে আমাদেরকে অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়া ব্যয় করতে হচ্ছে।’ সেতুটির নির্মাণকাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উল্লেখ্য(এলজিইডি)’র অধীন ২০৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যায়ে ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৮ মিটার প্রস্থের ফুলবাড়ী ধরলা নদীর উপর সেতুটি নির্মান করা হয়।২০১৮ সালের ৩ জুন ফুলবাড়ী ধরলা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর সেতুর সার্বিক ব্যবহার এবং সুফল নিশ্চিত করতে রত্নাই নদীর ওপর নতুন আর একটি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।কিন্তু সেতুটির নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় সুফল বঞ্চিত কয়েক লক্ষ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আব্দুল মোমেন জানান সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় সেতুর নির্মাকাজ স্থবির হয়ে পড়েছিল। জমি অধিগ্রহনের জন্য ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত জমির মালিকদের টাকা বুঝে দেওয়া হবে। ২০২৫ সালের মধ্যেই সেতুটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে এটি যাতায়াতের জন্য উম্মুক্ত করা হবে।
সময় জার্নাল/এলআর