গোলাম আজম খান, কক্সবাজার: কক্সবাজারের এক অন্ধ হাফেজ মুরশেদুর রহমান। ১৯৮১ সালে কক্সবাজার সদরের পোকখালীর গোমাতলীতে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মগতভাবে অন্ধ এই হাফেজ মুরশেদের জীনবে রয়েছে অনেক সাফল্য গাঁথা অধ্যায়। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশ- বিদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী সহ প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান।
শুক্রবার ছিল হাফেজ মোর্শেদ এর প্রতিষ্ঠিত হেফজখানা ও এতিম খানার ১০ ম বার্ষিক মাহফিল ও দস্তার বন্দী অনুষ্ঠান । এই মাহফিলে তাঁর প্রতিষ্ঠিত 'আন নুর হেফজখানা ও এতিম খানা' থেকে গত ১০ বছরে হেফজ সমাপ্তকারী ২০০ ছাত্র-ছাত্রীকে দস্তারে ফজিলত বা পাগড়ি প্রদান করা হয়। এ-উপলক্ষ্যে সদর উপজেলার কাছে জানার ঘোনা এলাকায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত 'আন নুর হেফজখানা ও এতিম খানা' আয়োজন করা হয় দোয়া মাহফিল ও সূধী সমাবেশ। এই সমাবেশে ওই ২০০ ছাত্র-ছাত্রীকে পাগড়ি প্রদান করা হয়।
জন্মান্ধ হাফেজ মুরশেদ বলেন, ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সে (১৯৯৬ সালে) পটিয়া আল জামেয়া ইসলামিয়া থেকে তিনি হেফজ শেষ করে সখানে পড়ালেখা শুরু করেন। এর পর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে 'মাদরাসায়ে আন নুর ফর দি ব্লাইন্ড -এ দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন।
সেখানে তিনি হাদিস শাস্ত্র, কম্পিউটার ও ব্রেইল শিক্ষা অর্জন করেন।
২০০৩ সালে তিনি আরব আমিরাতের দুবাইতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে ৩য় স্থান অর্জন করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনেন। ওই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৯০ টি দেশের হাফেজরা অংশ গ্রহণ করলেও হাফেজ মুরশেদ ৩য় স্থান অর্জন করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান থেকে দেশে ফিরে তিনি কক্সবাজার শহরতলীর সদর উপজেলার কাছে জানার ঘোনায় প্রতিষ্ঠা করেন 'আন নুর হেফজখানা ও এতিম খানা'।
সরেজমিনে গতকাল গিয়ে দেখা গেছে, তিনতলা বিশিষ্ট নিজস্ব ভবনে ওই মাদরাসায় হফজ বিভাগ, নুরানী ও এতিম খানায় কয়েকশত শিক্ষার্থী রয়েছে। হেফজ বিভাগে ১০০ ছাত্র,৫০ জন ছাত্রী, নুরানী বিভাগে ১০০ ছাত্র-ছাত্রী পড়া লেখা করছে। এর মধ্যে ৩০ জন অন্ধ শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানে ৫ জন মহিলাসহ ১৭ জন শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে।
গতকাল যে ২০০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পাগড়ি প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে ৫ জন ছাত্রী এবং ১০জন অন্ধ হাফেজ ও রয়েছে।
হাফেজ মুরশেদ এর শিক্ষক পটিয়া আল জামেয়া ইসলামিয়ার ক্বেরাত ও
হেফজ বিভাগের প্রধান ক্বারী মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুচ ছমদ জানান, প্রচন্ড মেধাবী হাফেজ মুরশেদ অন্ধ হয়েও বসে থাকেনি। তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়ওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরকেও স্বাবলম্বী করছে- এটি অনেক বড় কথা।
এপ্রসঙ্গে হাফেজ মুরশেদ বলেন, তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় তিনি এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। আগামীতে রয়েছে আরো অনেক পরিকল্পনা।
তাঁর এই কার্যক্রম পরিচালনায় দেশ-বিদেশের দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সুনজর কামনা করেন।
সময় জার্নাল/আরইউ