বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

যাদুকাটা নদীতে ফিরেছে শ্রমিকের প্রাণ

মঙ্গলবার, জুন ২২, ২০২১
যাদুকাটা নদীতে ফিরেছে শ্রমিকের প্রাণ

সেলিম আহমদ তালুকদার, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : প্রাকৃতিক সম্পদের আধার যাদুকাটা নদী। এ নদীকে ঘিরেই হাওরপাড়ের শ্রমিকের জীবনমান গড়ে উঠে। আইনি জটিলতা ও উচ্চ আদালতে মামলাজনিত কারণে ইজারা বন্দোবস্ত না হওয়ায় কাজ হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েন লাখো শ্রমজীবী মানুষ। দীর্ঘ ২ বছর পরে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে খুলে দেয়া হয় বালু মহাল যাদুকাটা। গত ১২ জুন থেকে শ্রমিকেরা কোমড় বেঁধে নদীতে তুলছেন বালু। হাতের সাহায্যে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বালু উত্তোলন করছেন প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক। দিন শেষে হাজার পনেরশ’ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরেন তারা। আনন্দের সীমা নেই শ্রমিকের। যেন যাদুকাটা নদীতে ফিরেছে শ্রমিকের প্রাণ।
 
নদীটির কাছে পাহাড়। আকাশ হেলান দিয়েছে পাহাড়ে। ঝর্ণার পানি গড়ায় পাহাড়ে। পাশেই বারিকটিলা। এটি লাউড়েরগড় এলাকার অংশ। এখানকার বয়ে  চলছে যাদুকাটা-১। পরেই শিমুল বাগান। এই এলাকাকে যাদুকাটা-২ নামে মহালের ভাগ করা হয়েছে। নদীতে প্রাকৃতিক সম্পদ বালু আর বালু। বিশ্বের উন্নতমানের বালু এখানেই মিলে। অনিন্দ সুন্দর এ নদীর দিকে চোখ মেলে থাকান আগত পর্যটকরা। সুন্দর্য্য উপভোগ আর বালু উত্তোলনের উৎসব দেখে বেলা কেটে যায় তাদের। 

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার শ্রমিক ছোট নৌকা করে বালু উত্তোলন করছেন। এসব বালু নগদ টাকায় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। শ্রমিকের কলরবে মুখরিত নদী। প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক ফিরে পেয়েছেন কর্মসংস্থান। প্রতিজন শ্রমিক হাজার পনেরশ’ টাকা করে আয় করছেন। দুপুর বেলার খাবারও সেরে ফেলেন নদীতে। হাসিতে খুশিতে বিকাল হলেই ফিরেন বাড়ি। তাদের চোখে মুখে নেই হতাশার ছাপ। বরং স্বপ্ন দেখছেন নদীকে ঘিরে। শ্রমিকের সাথে নৌকার মালিক, ব্যবসায়ীসহ অসংখ্য লোক আয় করছেন নদীর উপর নির্ভর করে। এবং নদীর আশপাশ এলাকার বাজারগুলোতে বিকিকিনি বাড়ছে। আগের চেয়ে ৫০ গুন বেশী বিকি বাড়ছে দোকানগুলোতে। সন্ধ্যা হলেই বাজারে মাছ, মাংস ইচ্ছেমত কিনছেন শ্রমিকরা। বাজারে পণ্যের দামও বাড়ছে। এসব গায়ে মাখেন না শ্রমিকরা। এভাবেই এলাকায় অর্থনীতি সচল হচ্ছে। 

নদীতে কথা হয় মিয়ারচরের শ্রমিক শুকুর আলীর সাথে। তিনি বলেন, করোনা ও নদী বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে ছিলাম। ইচ্ছে ছিল বাড়ি ছেড়ে পালাই। নদী খুলে যাওয়ায় কোথাও যেতে হয়নি। নদীতেই বালু উত্তোলন করে হাজার পনেরশ’ টাকা আয় করতে পারি। পরিবার পরিজন নিয়ে খুশিতে দিন কাটছে বলে তিনি জানান। ঘাগটিয়া গ্রামের আলমগীর জানান, নদী বন্ধ থাকায় অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটিয়েছি। নদী খোলার পর পরিবার পরিজন নিয়ে সুখেই আছি। 

লামারচর গ্রামের ছামাদ বলেন, আমাদের তিন বেলার আহার জুটে এ নদীকে ঘিরে। নদী বন্ধ থাকায় লগ্নি করে সংসারের খরচপাতি করেছি। অনেক দিন পর স্বপ্নের নদী ইজারা হওয়ায় আমি দৈনিক এক হাজার টাকা আয় করছি। আশা করি দেনা পাওনা মিটিয়ে এখন ভালই চলতে পারবো। এ বক্তব্য নদীতে কাজ করেন প্রতিটি শ্রমিকেরেই। 

ইজারাদার সেলিম আহমদ জানান, একটি দুষ্ঠু চক্রের মামলা মোকদ্দমার কারনে বালু মহাল বন্ধ থাকায় হাওরপাড়ের শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। আইনী লড়াই শেষে সুপ্রিম কোর্ট আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমি বৈধ ইজারা প্রাপ্ত হই। এবং নদী থেকে বালু উত্তোলনের আর বাঁধা রইল না। এখন প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক হাতের সাহায্যে বালু উত্তোলন করছেন। দিন শেষে হাজার পনেরশ’ টাকা নিয়ে মহা ধুমধামে বাড়ি ফিরছেন। কেউ বোমা মেশিন চালাতে পারবেন না সাফ নিষেধ দেওয়া আছে। আমি চাই হাওরের শ্রমিক বাঁচুক। শ্রমিক বাঁচলেই দেশ বাঁচবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, হাওরপাড়ের মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র মাধ্যম যাদুকাটা নদী। এ নদীতে কাজ করে শ্রমিকেরা আয় করছেন। পরিবেশবান্ধব উপায়ে কাজ করে শ্রমিকেরা পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল থাকুক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয় বৃদ্ধিমূলক কাজে শ্রমিকেরা অংশ নেওয়ায় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। 

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ইজারাদারদেরকে যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের সীমানা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। যাদুকাটা নদীতে এসে দেখলাম এখানকার শ্রমিকরা নদী থেকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। যারা দীর্ঘদিন বেকার ছিল। শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যতা দেখে খুবই ভালো লাগছে।

সময় জার্নাল/এসএ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল