স্বাস্থ্য ডেস্ক:
মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বিঘ্নিত হলে আমাদের মন ও শরীরের ওপর যে প্রভাব পড়ে, সেটিই হলো মানসিক রোগ। আর এই মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিই হলো মানসিক রোগী।একজন মানুষের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে হঠাৎ অতিমাত্রায় কোনো পরিবর্তন আসে, যার ফলে তার জীবনযাপনে মারাত্মক বিরুপ প্রভাব ফেলে তখনই আমরা বুঝতে পারি যে তিনি মানসিক রোগী। আরও বুঝিয়ে বললে, একজন মানুষের স্বাভাবিক ন্যাচার হতে একেবারে বিপরীতমুখী আচরণ করতে শুরু করে যেটা তার ব্যক্তিত্বের সাথে মেলে না।
আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের উদাসীনতা নতুন নয়। এমনকি মানসিক রোগ নিয়ে রয়েছে নানা অসচেনতা, ভ্রান্ত ধারণা এবং ভুল বিশ্বাস। মানসিক সমস্যাকে কেউবা আবার পাগল, উদ্ভট বা বিকৃত মানসিকতার সাথেও তুলনা করেন।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সাধারণভাবে দেখা যায়, যিনি এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তার নিজের মধ্যেও এক ধরনের ‘স্টিগমা’ কাজ করে।জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সস্টিটিউটের ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত।
এর মধ্যে শুধু এক শতাংশ মানুষ জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত বলে বলছেন চিকিৎসক এবং মনোবিদেরা।
চিকিৎসক এবং মনোবিদেরা বলছেন, ক্রমে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটু একটু করে সচেতনতা বাড়ছে এবং আগের তুলনায় বেশি মানুষ সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হচ্ছেন।যদিও মানসিক সমস্যা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকে মনোচিকিৎসকের কাছে যায় না বেশিভাগ মানুষ।এবং এই সমস্যার শারীরিক উপসর্গ দেখা দিলে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নেয় বেশিরভাগ মানুষ।
কিন্তু বাংলাদেশে ঠিক কী কী সমস্যা নিয়ে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন?
মনোচিকিৎসক মোহিত কামাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ডা. মেখলা সরকার এবং সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডা. মো: ফারুক হোসেন এ ব্যাপারে কি বলেন ?
যেসব সমস্যা নিয়ে বেশি আসেন মানুষ
মোহিত কামাল, ডা. মেখলা সরকার এবং ডা. মো: ফারুক হোসেন- তিনজনই বলেন, সাধারণত উদ্বেগ-জনিত মানসিক রোগ, বিষন্নতাবোধ এবং শুচিবায়ু সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে মানুষ তাদের শরণাপন্ন হন।
বেশিভাগ ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো শারীরিক উপসর্গ নিয়ে রোগীরা আসেন। বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ যেকোনো মানসিক সমস্যা বা তার কারণ- এ নিয়ে সচেতনতা নেই বেশিভাগের।
বাংলাদেশে যে ১০টি মানসিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে বেশি যায় মানুষ সেগুলো নিম্নরূপ:
বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার
বিষণ্ণতাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে শুরুতেই এর প্রতি যথাযথ দৃষ্টি না দিলে এ থেকে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে।
মনোচিকিৎসকরা বলছেন, বিষণ্ণতায় আক্রান্তদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয়ে থাকে।
যদিও বিষণ্ণতা বলতে অনেকে মন খারাপকে বুঝে থাকেন।
কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, যদি দীর্ঘমেয়াদে যেমন দু’সপ্তাহ টানা মন খারাপ থাকলে, অথবা যেসব কাজে আগে আনন্দ লাগতো তাতে আর আনন্দ না পাওয়ার মতো হলে এটিকে বিষণ্ণতার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
মনোবিদ ডা. মেখলা সরকার বলেছেন, বিষণ্ণতা মানুষের মনের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
একজন মানুষের কোনো বিষয়ে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া বা এ ধরণের নানা কারণে মন বিষণ্ণ হতেই পারে।
এ রোগ হলে যেসব শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয় সেগুলো হলো-
রোগী শারীরিকভাবে খুব দুর্বল বোধ করতে পারে।
ঘুমের সমস্যা এ রোগের অন্যতম উপসর্গ। রাতে ঘুম না হওয়া বা ঘুমের যে তৃপ্তি সেই বোধ না হওয়া।
শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা ,মাথাব্যথা হতে পারে।
পেটের সমস্যা হতে পারে।
হাত-পা জ্বালাপোড়া করা।
অস্থিরতা বোধ করে রোগী।
চিকিৎসকরা বলছেন, এসব শারীরিক উপসর্গ বৃদ্ধি পেলেই মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হন রোগী।
উদ্বেগ-জনিত রোগ বা প্যানিক ডিজঅর্ডার
এ রোগে সবচেয়ে সাধারণ যে বিষয়টি রোগীর হয় তা হলো প্যানিক অ্যাটাক। মনোচিকিৎসকরা জানান, প্যানিক অ্যাটাক হলে হয়তো পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে উপসর্গ তীব্র হয়।
বেশিভাগ ক্ষেত্রে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পর দেখা যায় রোগী শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ।
যে শারীরিক উপসর্গগুলো এ রোগে দেখা দেয় সেগুলো হলো-
হঠাৎ করে বুক ধড়ফড় করা বা বুকে সাংঘাতিক রকমের চাপ লাগা। বুকে ব্যথা হয় এমন অনুভূতি হয়, মনে হবে এখনই স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হবে।
রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়। এটি এ রোগের অন্যতম লক্ষণ। এতে মনে হবে রোগী দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে।
ভীতিমূলক চিন্তা, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়া।
রোগী দুঃস্বপ্ন দেখে।
জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার
এ সমস্যায় রোগী সবসময় সবকিছুতে উদ্বেগ বোধ করে। ছোটখাট সবকিছুতে আশঙ্কা হয় রোগীর। টেনশন এ রোগীর নিত্যসঙ্গী।
মনোচিকিৎসকরা জানান, রোগী সবসময় অস্থির বোধ করে, মেজাজ খিটখিটে থাকে। কাজে মনোযোগ কম থাকে এবং ভুলে যায়।
এ রোগে রোগীর মনে হবে সে সবকিছু ভুলে যাচ্ছে, আগের মতো মনে রাখতে পারছে না।
এ রোগে যেসব শারীরিক সমস্যা হয় সেগুলো হলো:
রোগী খুব দুর্বল অনুভব করে ও ক্লান্ত বোধ করে।
বুক ধড়ফড় করবে কিন্তু প্যানিক অ্যাটাকের মত অত তীব্র হবে না।
মাঝে মাঝে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় রোগীর।
পেটে চাপ অনুভব করে, খাবার হজম হয় না ঠিকমতো।
কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এ রোগে আক্রান্ত হলে।
মনোচিকিৎসক ডা. মেখলা সরকার বলেন, যখন কেউ জেনারালাইজড এংজাইটি ডিজঅর্ডারে ভোগে তখন তার ব্রেইন কিছুটা রিঅ্যাক্ট করে।
‘নিউরো কেমিক্যালসগুলা শরীরের যে নানা রকমের সিস্টেম আছে, আমাদের যেমন হার্টের সিস্টেম, নিঃশ্বাসের প্রক্রিয়া এটাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যার কারণে শারীরিক নানা উপসর্গ হতে পারে।’
শুচিবায়ু বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার
শুচিবায়ুর কথা কমবেশি আমরা সবাই জানলেও এটি কখন রোগের পর্যায়ে পড়ে, তা নিয়ে মানুষ সচেতন নয়।
মনোচিকিৎসকরা বলছেন, কোনো ব্যক্তি যেকোনো কাজ একাধিকবার, বা অপ্রয়োজনীয়ভাবে বারবার করতে চাইলে, যখন তার মনে হয় কাজটি শেষ হয়নি এমন ধারণা আসে এবং সে ওই কাজটি বারবার করতে চায় এই প্রবণতাকেই শুচিবায়ু বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার বলে।
এ ধরনের রোগীরা অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই ধরনের কাজ করে চলে। তাদের মাথায় একবার যে চিন্তা ঢুকে সেটাই তারা বারবার চিন্তা করতে থাকে।
মনোচিকিৎসকরা বলছেন, রোগী নিজে জানে এই চিন্তা অনর্থক, অর্থহীন। তবুও যেন বাধ্য হয়ে তাকে এই চিন্তা করতে হয়।
যারা শুচিবায়ু রোগে যারা ভোগেন তারা সাধারণত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন। কাজকর্ম ধীর গতিতে করেন এবং সবসময় টেনশন করেন এ ধরনের রোগীরা। একটু বদমেজাজি থাকেন তারা।
চিকিৎসকরা বলছেন, মেয়েদের মধ্যে শুচিবায়ুর প্রকোপ ছেলেদের চেয়ে একটু বেশি।
প্রথম ১০টি ক্ষতিকর মানসিক রোগের মধ্যে এই অবসেশন বা শুচিবায়ু রোগের অবস্থান চার নম্বরে।
ব্যক্তিত্ব-জনিত ত্রুটি বা পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার
এ ধরনের রোগীরা নিজেকে আঘাত করে যেকোনো ঘটনা ঘটায়। ব্যক্তিত্ব-জনিত ত্রুটি থাকলে হঠাৎ করে ব্যক্তি নিজের হাত কেটে ফেলে, আত্মহত্যার চেষ্টা করা, হঠাৎ করে ঘুমের ওষুধ খাওয়াসহ নানাভাবে নিজেকে আঘাত করার মানসিকতা থাকে।
ডা. মেখলা সরকার বলেন, ‘যাদের নানা রকমের ত্রুটিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব থাকে এদেরও কো-মরবিডলি ডিপ্রেশন ও অ্যাঙজাইটি থাকে। কিন্তু তাদের বেসিক ডায়াগনোসিস থাকে পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার।’
ফোবিক ডিজঅর্ডার
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা একা একা দূরে কোথাও যেতে ভয় পায়। গণ-পরিবহনে উঠতে অসুবিধা হয় এ ধরনের রোগীদের। তারা অহেতুক ভীতিতে ভোগেন। কোলাহলময় জায়গায় যেতে ভয় পান ফোবিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীরা।
মনোচিকিৎসকরা জানান, এ ধরনের ফোবিয়াকে এগোরা ফোবিয়া বলে। উঁচু জায়গায় উঠতে ভয় পান এ ধরনের রোগীরা। প্লেনে উঠতে চান না। যেখান থেকে সহজে তারা মুভ করতে পারবেন না, এমন স্থান তারা পরিহার করেন।
এমনকি কোনো বদ্ধ জায়গা, যেমন ট্রাফিক জ্যাম- যা সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এমন স্থানে ভীতিতে ভোগেন এ ধরনের ফোবিক ডিজঅর্ডারের রোগীরা। নিজেরা যে স্থানে নিরাপদ বোধ করেন না সে স্থানে যেতে চান না তারা।
অন্য সব লাইফ-স্টাইল ঠিক থাকলেও এ ভীতির কারণে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় পরিহার করেন এ ধরনের রোগীরা।
এডিএইচডি বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার
শিশু-কিশোরদেরও মানসিক রোগ হতে পারে। তারা এই এডিএইচডি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের কারণে শিশুরা অতিরিক্ত চঞ্চল, মনোযোগের অভাব এবং অতিরিক্ত দুষ্টামি করে বলে জানান মনোচিকিৎসকরা।
শিশু-কিশোরদের মানসিক রোগের মধ্যে স্কুল ভীতি, স্কুল পালানো, আচরণগত সমস্যা, অটিজম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, ঘুমের সমস্যা, খাদ্যগত সমস্যা প্রধান।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের করা মানসিক রোগের চিকিৎসায় ফ্যামিলি গাইড বইয়ে বলা হয়েছে, শিশু-কিশোরদের মানসিক সমস্যাগুলোর পেছনে পারিবারিক কারণ, সামাজিক কারণ এবং জন্মকালীন মাথায় আঘাতই প্রধান কারণ।
বর্তমান যুগে বাচ্চাদের তীব্র মোবাইল ও ইন্টারনেট আসক্তি থেকেও মানসিক রোগ হয় বলে জানান মনোবিদরা। এর ফলে বাচ্চারা জেদি হয়ে উঠে যা তার সামাজিক ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এক্ষেত্রে মা-বাবার কিছু ভুল আচরণও বিষয়টিকে আরো জোরালো করে বলে জানান চিকিৎসকরা।
বৃদ্ধদের স্মৃতিবিভ্রম বা নিউরো কগনিটিভ ডিজঅর্ডার বা ডিমেনশিয়া
সাধারণ মানসিক রোগ ছাড়াও বয়স্কদের মাঝে স্মৃতি-ভ্রম, বিষণ্ণতা ও শারীরিক রোগের কারণে প্রায়ই মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান ডা. মো: ফারুক হোসেন বলেন, ‘বৃদ্ধদের জন্য ডিমেনশিয়া একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা একটা মানসিক রোগ। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ায় রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আগে গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর, এখন গড় আয়ু ৭৩ বছর। তাই এই রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। সারা বিশ্বের জন্যই এটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
একিউট স্ট্রেস ডিজঅর্ডার অ্যান্ড পিটিএসডি
যেকোনো সহিংসতা থেকে মানুষ এক ধরনের মানসিক আঘাত বা ট্রমায় ভেতরে যায়।
বিশ্বজুড়ে নানা সহিংসতামূলক ঘটনা এ ধরনের রোগীদের প্রভাবিত করে।
মনোচিকিৎসক মোহিত কামাল উদাহরণ দিয়ে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সহিংসতা, নিষ্ঠুরতা, হিংস্রতা মানুষ দেখেছে এতে তার মানসিক জগতে এক ধরনের ‘ট্রমা’ বা আঘাত তৈরি হয়েছে।
পরে এই আঘাত স্থায়ী হয়ে পরে বিভিন্ন সময় মনোজগতে আসতে থাকে।
মোহিত কামাল বলেন, ‘পুলিশ পিটিয়ে মারা, মানুষকে পিটিয়ে মারা, গুলি করাসহ নানা নিষ্ঠুরতা, সহিংসতা মানুষ দেখেছে। এই দৃশ্যমান সহিংস ঘটনাগুলো আমাদের মস্তিষ্কে একিউট স্ট্রেস হিসেবে ঢুকেছে। এখন পোস্ট ট্রমাটিক স্টেজ ডিজঅর্ডার হিসেবে বাড়ছে। অর্থাৎ তারা যে ট্রমাটা বহন করেছে সেটা স্থায়ী হয়ে গেছে। এখন এই ট্রমা ঘুমের মধ্যে নানাভাবে দুঃস্বপ্নে আসতে থাকে।’
বাইপোলার ডিজঅর্ডার
জটিল মানসিক রোগের অন্তর্গত এই রোগ। এ ধরনের রোগীর সংখ্যা কম।
বাংলাদেশে যে মোট ১৮ শতাংশ মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তাদের মধ্যে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা এক শতাংশ বলে জানান মনোবিদরা।
এ রোগে আক্রান্ত মানুষ এক সময় মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকেন আবার কয়েক দিন পরেই হতাশায় ডুবে যান। দুই অনুভূতির তীব্রতাই অনেক বেশি থাকে।
মনোচিকিৎসকরা বলছেন, বাইপোলার ডিজঅর্ডার এমন এক ধরনের তীব্র মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি যা মুড বা মেজাজকে প্রভাবিত করে।
মেজাজের এই ভয়াবহ উত্থান-পতনের অনুভূতি কয়েক দিন, এমনকি কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই একেক ধরনের মেজাজের সময়কালকে ‘মুড এপিসোড’ বলে।
মন অতিরিক্ত উৎফুল্ল বা অ্যাকটিভ থাকার এপিসোডকে বলা হয় ম্যানিয়া এবং বিষণ্ণ ও অলস থাকার এপিসোডকে ‘ডিপ্রেশন’ বলা হয়।
এ রোগে লক্ষণগুলো নির্ভর করে ব্যক্তি কোনো এপিসোডে আছেন তার ওপর।
অনেকে প্রথম দিকে ডিপ্রেশন এপিসোডে থাকতে পারেন তারপর আসতে পারে ম্যানিয়া এপিসোড।
এই এপিসোডের পরিবর্তন যখন তখন হতে পারে। আবার অনেকের দু’টি এপিসোড একসাথে দেখা দিতে পারে।
তবে এসব লক্ষণ থাকলেই তিনি যে বাইপোলার ডিজঅর্ডারের রোগী তা নয়, একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই শুধু বলতে পারবেন তার অবস্থান।
সিজোফ্রেনিয়া
গুরুতর মানসিক রোগ এই সিজোফ্রেনিয়া। অস্বাভাবিক চিন্তা এবং আচরণ এ রোগের বহিঃপ্রকাশ।
বেশিভাগ ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলো হলো ডিলিউশন এবং হ্যালুসিনেশন অর্থাৎ ভুল ধারণা, অবাস্তব চিন্তাভাবনা, অকারণ সন্দেহ, বিভ্রান্তি, বিড়ম্বনা ইত্যাদি।
আক্রান্ত সব রোগীর লক্ষণ এক হয় না। লক্ষণগুলো রোগীর ওপর নির্ভর করে।
কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণগুলো কয়েক মাস বা বছর ধরে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করতে পারে, বা হঠাৎ করে দেখা দিতে পারে বলে জানান মনোচিকিৎসকরা।
রোগী এমন কিছু শুনতে পায় বা দেখতে পায় যেটা বাস্তবে থাকে না, গায়েবি আওয়াজ শোনা এই রোগের প্রধান উপসর্গ।
কথা বলা বা লেখায় অদ্ভুত বা অযৌক্তিক ধরন বা আচরণ।
গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে উদাসীন বোধ করা।
নিজের যত্ন নেয়ার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়া
কোনো কাজে মনোযোগ না থাকা।
আবেগ, অনুভূতি কমে যাওয়া।
সন্দেহ-প্রবণতা থাকায় পরিবারের মানুষের সাথেও মেলামেশা কমিয়ে দেয়।
তানহা আজমী