শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

নোবিপ্রবি: ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থীই সিটবঞ্চিত

শনিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
নোবিপ্রবি: ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থীই সিটবঞ্চিত

কাউছার আহমেদ, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি:

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীর তুলনায় হল সংখ্যা কম হওয়ায় আবাসন সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ২৯ শতাংশ।

বাকি ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী হলে সিট না পেয়ে নানা ভোগান্তিতে রয়েছ।ছেলেদের দুই হলের আসনের বিপরীতে ছাত্র সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫৩ জন।

অপরদিকে মেয়েদের তিন হলের আসনের বিপরীতে ছাত্রী সংখ্যা ৩ হাজার ৬৯৬ জন। সম্প্রতি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রায় ১ হাজার ৫শত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হয়েছেন। এতে আবাসন সংকট আরো বেড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদ, দুটি ইনস্টিটিউট ও ৩৩ টি বিভাগে বর্তমানে ৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আসন সংখ্যা ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে ৩৮০ টি,বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক উকিল হলে ৫৩০ টি, জাতির পিতা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৪৮০ টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৫৮৮ টি,হযরত বিবি খাদিজা হলে ৪৩০ টি।

সব মিলিয়ে ৫টি আবাসিক হলে মোট আসন সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৪০৮ টি। হিসাব অনুযায়ী হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থী সংখ্যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২৯ শতাংশ। বাকি ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থীকে হলের বাইরে নিজেদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন।সম্প্রতি ক্যাম্পাসে নতুন ভর্তি হওয়া ১৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এখনো সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

পাশাপাশি হাতেগোণা ১০-১৫ জন  শিক্ষার্থীর গণরুমে জায়গা হয়েছে ১৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ তম,১৭ তম ব্যাচের ১৫ শতাংশের কম শিক্ষার্থী হল সুবিধা পাচ্ছে। এছাড়া ২য় ও ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও ডাবলিং করে থাকছেন। কিছু বিভাগের সেশনজট থাকায় ১৩ তম এবং ১৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থান করতে হচ্ছে।

এতে চরম বিপাকে পরে দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। আবাসন সংকট লাঘবে গত কয়েক বছরে মেয়েদের জন্য নতুন হল হলেও ছেলেদের জন্য কোনো হল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে মেয়েদের আবাসন সংকট অনেকটা কমলেও ছেলেদের ভোগান্তি কমেনি।

গত ৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হলেও সেই তুলনায় বাড়েনি আবাসনব্যবস্থা। আবাসন সংকটের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে মেস ও ভাড়া বাসায়। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে নোয়াখালী শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে মেস ও ভাড়া বাসায় থাকছে।

এ সুযোগে নোয়াখালী শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে গড়ে উঠেছে মেস বাণিজ্য। বিকল্প না থাকায় মেস মালিকরা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। কেউ দুয়েক মাসের জন্য উঠতে চাইলেও তাকে তিন থেকে পাঁচ মাসের টাকা জামানত দিতে হয়।

এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেও মেসের চড়া দামের খাবার বিল দিয়ে অতি কষ্টে দিন পার করছেন শিক্ষার্থীরা। সাথে প্রতিনিয়ত লোডশেডিং, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট তো আছেই। তা ছাড়া, নোয়াখালী শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসার পথে সোনাপুর নামক জায়গায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এই যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের এক অনাবাসিক শিক্ষার্থী অভি সূত্রধর বলেন,  প্রান্তিক পর্যায় থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি। নোয়াখালী শহরে মেস ভাড়া অনেক বেশি। আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পক্ষে মাসিক ১৪০০-১৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকাটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার সামর্থ্য নেই বলে স্বপ্ন ছিল হলে আমার একটি সুন্দর ঠিকানা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তিন বছর চলে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় আজও আমাকে মাথা গোঁজার ঠিকানা করে দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদের দুঃখ না বোঝে তাহলে আর কিছু বলার নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নোয়াখালী শহরের অধিকাংশ মেসে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। শিক্ষার্থীরা ছুটিতে বাড়িতে গেলেই মেস থেকে ফোন, ল্যাপটপ, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস চুরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রীরা শহরে মেসে থাকায় প্রায়ই বখাটেদের ইভটিজিং এর শিকার হতে হচ্ছে।


বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার দেড় যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে স্বল্প আসনের মাত্র ৫টি হল। এর মধ্যে ৩টি ছাত্রী ও ২টি ছাত্র হল। এই পাঁচ হলে যেন সমস্যার শেষ নেই। হলের অনেক রুমে গাদাগাদি করে ডাবলিং করে থাকতে হচ্ছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের। হলগুলোতে খাবারের সমস্যা খুব বেশি। খাবারের ওপর নেই কোনো ভর্তুকিও।

আবাসন সংকট সামাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন , “আমাদের বর্তমানে পাঁচটি হল রয়েছে- দুটি হল পুরুষ ছাত্রদের জন্য এবং তিনটি ছাত্রীদের জন্য। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত উন্নয়ন পরিকল্পনায় আরও তিনটি হল অন্তর্ভুক্ত করেছি, যার প্রাথমিক নকশার কাজ চলছে।

সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) দ্বারা অনুমোদিত হলে, পরিকল্পনায় দুটি পুরুষ হল এবং একটি মহিলা হল যুক্ত করা হবে, প্রতিটিতে দশতলা ভিত্তি থাকবে। আমরা আশাবাদী যে ২৪২ কোটি টাকার আনুমানিক বাজেটের এই সংশোধনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং আবাসন সংকট উল্লেখযোগ্যভাবে দূর করতে সহায়তা করবে।”

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল