মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

নুন আনতে পান্তা ফুরানো নৈশপ্রহরী শহিদ এখন অঢেল সম্পদের মালিক

মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
নুন আনতে পান্তা ফুরানো নৈশপ্রহরী শহিদ এখন অঢেল সম্পদের মালিক

মোঃ ইমরান মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি : মাসিক ১৮শ টাকার বেতনে মেলান্দহ সাব-রেজিস্টার অফিসের নৈশপ্রহরীর কাজ করেন শহিদ মিয়া। ৩ মেয়ে ১ ছেলেসহ ছয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম ব্যক্তি তিনিই। 

সম্প্রতি অনুসন্ধানে দেখা গেছে,  মাত্র ১৮শ টাকা বেতনের শহীদ মিয়া রাস্তার পাশে চড়াদামে কেনা ১০শতাংশ জমির উপর তিনতলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ির কাজ শুরু করেছেন । ইতিমধ্যে দাঁড়িয়েও গেছে সে ভবন। মাসে এই ১৮শ টাকা বেতনের চাকরি করে  শহীদ মিয়া কিভাবে এমন অঢেল সম্পদের মালিক হলেন এ নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা।

মেলান্দহ সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,  মেলান্দহ পৌরসভার দক্ষিণ আদিপৈত গ্রামের মৃত কালু বেপারী ছেলে শহীদ মিয়া (৫০) । ১৯৯৪ সালে মেলান্দহ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অফিসে নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে কাজ শুরু করেন । তারপর ২০০১ সালে দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিতে মাস্টার রোলে কাজ শুরু করেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শহীদ মিয়া দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিতে নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে দীর্ঘ দিন কাজ করার সুবাদে তিনি সাব-রেজিস্ট্রারের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। যখন যে সাব-রেজিস্ট্রারই আসেন, তিনি তার ওপর আস্থা রাখেন। এরপর থেকে তিনি দলিল তদবির, দলিলের নকল দেয়া, জমিনের সন দেখে দেয়া, সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসারকে দেখা শুনা করা। তার বৈধ-অবৈধ কাজ সম্পাদনের জন্য সাব-রেজিস্ট্রার ও অন্য কর্মচারীকে ম্যানেজ করে একপর্যায়ে গড়ে তোলেন বিশাল ঘুষ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট। খাতা কলমে নৈশ প্রহরী হলেও শহীদ মিয়া অফিসের যাবতীয় কাজ করেন। এরই সুবাধে ক্ষমতার দাপটে ঘুষ বানিজ্যে গড়েছেন প্রায় কোটি টাকার সম্পদ।

শহীদ মিয়া দৈনিক ৬০ টাকা বেতনের নৈশপ্রহরীর চলাফেরা দেখলে মনে হবে সে কোন বড় কর্মকর্তা। সেবাপ্রার্থীরাও তাই ভাবে। যদিও তার দায়িত্ব রাতে কিন্তু তাকে দেখা যায় এজলাস চলাকালিন সময়ে সাব-রেজিষ্ট্রারের আশে পাশেই বলা চলে সব কিছু সেই নিয়ন্ত্রণ করে। দলিল সম্পাদন, বালাম বহির অনাধিকার চর্চা আর তল্লাশী প্রতিবেদনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দাবিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে নৈশপ্রহরী মোঃ শহিদের বিরুদ্ধে। তার কথাবার্তায় মনে হয় দাপ্তরিক কার্যক্রম যেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এমন একটি ভিডিও ক্লিপও পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যায়, শহীদ বিভিন্ন কাগজপত্র এজলাস থেকে খাস কামরায় নেওয়া আসা করেন হরহামেশাই ।যদিও নির্দেশনা নেই অফিস চলাকালিন এই বালাম বহি পর্যবেক্ষণের। এছাড়া দলিল সম্পাদনের আগে কর্মচারী না হয়েও সাব-রেজিস্ট্রার গণের পক্ষে মহুরীদের থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন। দীর্ঘ দিনের সম্পর্কে অফিসের বড় কর্তার আস্থাভাজন হওয়ায় মোঃ শহিদের মাধ্যমে সকল লেনদেন করা হয়। সে থেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান তিনি ।  

শুরু করেছেন ৩ তালা ফাউন্ডেশনের বিলাসবহুল বাড়ির কাজ, কিনেছেন জমি। রয়েছ ব্যাংক ব্যালেন্সও। যার সবই দুর্নীতির মাধ্যমে রোজগার করা টাকার।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নকল নবিশ বলেন, অফিস চালায়ই শহীদ। তাকে স্যার ডাকতে হয়। রেকর্ড রুম ছাড়া সকল চাবি থাকে তার কাছে। দিনের বেলায় অনেক সময় রেকর্ড রুমের চাবিও তার নিকট থাকে। এক-চতুর্থাংশ নকল বিতরণ হয় মোঃ শহিদের মাধ্যমে। এ কাজে সাব-রেজিস্ট্রার ও প্রধান সহকারীর সহযোগিতা রয়েছে।

সরেজমিনে পৌরসভার দক্ষিণ আদিপৈত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ আদিপৈত রাস্তায় সাথে প্রায় ১০ শতাংশ জমির উপর তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। এ নিয়ে নানান আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে এলাকাজুড়ে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, শহীদ মিয়া এত টাকা কোথায় পেলেন? তিনি রাজকীয় জীবনযাপন করেন। যেন এলাকার ছোটখাট একজন জমিদার। অথচ ১৯৯৪ সালে চাকুরী পাওয়ার আগে তাদের ছিল ভাঙ্গা ছনের ঘর। তার পিতা হতদরিদ্র কালু মুন্সী বেপারী  শহীদ সংসারের হাল ধরতে মাঝে মাঝে মাছ বিক্রি করতেন। তবে ছেলে শহীদ  সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে চাকুরি পাওয়ার পর আলাদীনের চেরাগের মতোই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। 

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের এক স্টাফ বলেন, শহীদের মূল বেতন ১৮০০ টাকা মাত্র। এই টাকা দিয়ে প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। পরিবার চালানো সম্ভব না। নিজের পকেট খরচ চলে না। আমি জানি শহীদের মোবাইল খরচ, চা, পান, সিগারেট সব মিলে মাসে খরচ প্রায় ৩০০০ টাকা। সেখানে প্রায় কোটি টাকার বাড়ির কাজ শুরু করা অসম্ভব। এটা অসৎ পথ অবলম্বন না করলে মোটেও সম্ভব না।

স্থানীয় লোকজনেরা বলছেন, শহীদের নুন আনতে পান্তা ফুরাত। শহীদ গরিব ঘরের সন্তান, তার আগে কিছুই ছিল না, চাকুরি হওয়ার পর ঘর বাড়ি, টাকা পয়সা, জমা জমি সব করেছে। তার বর্তমানে কোন কিছুই অভাব নেই।

এ বিষয়ে শহীদের বক্তব্য নিতে গেলে শহীদের চাচাতো ভাই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের পিয়ন ওমর আলী বলেন, জমি জামালপুর না ময়মনসিংহ কিনছে, ঢাকায় কিনছে।

এসব বিষয়ে নৈশ্যপ্রহরী মোঃ শহীদ মিয়া বলেন, অনেক দিন থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে থাকি। আপনাদের কাজ করেই যা ইনকাম হয়েছে। তা দিয়েই সব কিছু করেছি।

এ ব্যাপারে সাব রেজিস্ট্রার পলাশ তালুকদার বলেন, শহীদ আমার অফিসের মাষ্টাররোলের নৈশপ্রহরী। অফিসের দাপ্তরিক কাজে সহায়তার জন্য দিনের বেলায় তাকে দিয়ে কাজ করানো হয়। তার বিষয়ে কোন জানার থাকলে তার সাথে কথা খোঁজ নিন।

এ বিষয়ে জামালপুর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মলয় কুমার সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা কমিশনে পাঠাবো, কমিশন অনুমতি দিলে এ বিষয়ে অবশ্যই অনুসন্ধান করবো।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল