জাহিদুল ইসলাম,রাবি প্রতিনিধি:
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ক্রিয়াশীল সংগঠন। আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে এই সমাবেশ করেন তাঁরা।
এর আগে বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলো। এরপর মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে এসে শেষ হয়।
প্রতিবাদ মিছিলে তাঁরা 'ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও', 'ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান', 'সাম্প্রদায়িক বিভাজন, রুখে দাও জনগণ', 'সাম্রাজ্যবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান', 'সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, এই রাষ্ট্রের ব্যর্থতা', 'ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ, ধ্বংস হোক নিপাত যাক' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন আহ্বায়ক জান্নাতুল নাঈম বলেন, 'আমাদের পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রে ধর্মীয় বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে একটি সরকার দীর্ঘদিন টিকে আছে। এ থেকে বোঝা যায় কারা কী করতে চাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতা চিন্ময় দাসকে যখন গ্রেপ্তার করা হলো তখন ভারত থেকে একটা বিবৃতি দিয়ে নিন্দা প্রকাশ করা হলো। বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র যার নিজস্ব আইন আছে। এই আইনের আওতায় দেশের কাউকে গ্রেপ্তার করতেই পারে। কিন্তু তাতে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে দেয় এটা কাদের চক্রান্ত এবং কিসের চক্রান্ত। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ধর্মীয় দাঙ্গা সৃষ্টি করে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য একটি চক্রান্তকারী দল আমাদের পিছু লেগেছে। এই বিভাজন আমরা মানি না। এতদিন হিন্দু মুসলিম যেভাবে বাস করেছি। সেভাবেই বাস করে যাবে।'
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, 'মাত্র তিন মাস আগে আমরা কাধে কাধ মিলিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়েছি। কিন্তু তিন মাস যেতেই আজকে দেশের কী অবস্থা! আমরা প্রত্যেকে দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। রাস্তায় আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এত কিছুর পরেও দেশের অন্তবর্তী সরকার এবং ঢাকার সমন্বয়েরা মানুষের মধ্যে সংহতি বজায় রাখার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'এর আগে আওয়ামীলীগের পতনের পরে যখন কয়েক জায়গায় হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনা দেখা দিয়েছিল। তখন ইউনুস সরকার বলেছিল হিন্দুদের উপর কোনো আক্রমণ হচ্ছে না, এই আক্রমণ আওয়ামীলীগের উপর হয়েছে। এভাবে ড. ইউনুস একটা সম্প্রদায়কে আলাদা করে দিয়ে আওয়ামীলীগ ট্যাগ দিয়ে তাদের মধ্যের সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে। সব মুসলমান যেমন মৌলবাদী না তেমনি সব হিন্দুও মৌলবাদী না। আপনারা সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি ধরে রাখেন। আর চট্টগ্রামে আমার ভাইকে যারাই খুন করে থাকুক। দ্রুত সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।'
এ সময় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক শাহারিয়ার আলিফ বলেন, 'এই যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা এবং চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা সবই দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা। এর মাধ্যমে ভারতের মৌলবাদী গোষ্ঠী উপকৃত হবে, উপকৃত হবে বাংলাদেশের কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসররা। দ্রুতই এই অবস্থার উত্তরণে অন্তবর্তী সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। চট্টগ্রামে যে আইনজীবীকে হত্যা হয়েছে এর দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। রাষ্ট্রকে এর সঠিক তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।'
প্রতিবাদ সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য সজিব আলী। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন ছাত্র যুব আন্দোলনের সভাপতি তারেক হোসেন ও ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার।
তানহা আজমী