শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

হাবিপ্রবিতে জোরপূর্বক মাঠ দখল-টুর্নামেন্ট বন্ধ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৮, ২০২৪
হাবিপ্রবিতে জোরপূর্বক মাঠ দখল-টুর্নামেন্ট বন্ধ

মুরাদ হোসেন, হাবিপ্রবি দিনাজপুর: 

১৬ জুলাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে খেলতে না দেওয়ায় অন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের মাঠ দখল করে খেলা বন্ধ করেছে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এমনই অভিযোগ করেছেন খেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীরা জানায়, গত ২৬ নভেম্বর টুর্নামেন্টের বিজনেস স্টাডিজ বনাম সোশ্যাল সাইন্স এন্ড হিউম্যানিটিজ ম্যাচে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের খেলোয়াড়রা ম্যাচে অংশ গ্রহণ না করলে সোশ্যাল সাইন্স এন্ড হিউম্যানিটিজ দলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

ফিক্সচার অনুযায়ী পরবর্তী ম্যাচ ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ বনাম ফিশারিজ অনুষদ এর খেলায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের টিম ও শিক্ষার্থীরা জোর পূর্বক খেলার মাঠ দখল করে খেলা বন্ধ করে দেয়।

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালকসহ সহকারী প্রক্টর ও সহকারী পরিচালকবৃন্দ এসে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের শিক্ষার্থীদের মাঠ থেকে উঠাতে ব্যর্থ হয়। এরপর খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শারিরীক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক মাহাবুব উল হাসান বলেন, আমরা নিয়ম ও সময়সূচি অনুযায়ী খেলার আয়োজন করেছিলাম। বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম ম্যানেজার ও কোচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত খেলোয়াড়ের নাম কেটে আমাদের খেলোয়াড় তালিকা দেয়।

আমরা সে অনুযায়ী খেলা শুরু করলে এবং খেলোয়াড়রা মাঠে না নামলে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের টিম ম্যানেজার ও কোচ ম্যাচ থেকে নাম তুলে নিয়ে ওয়াক ওভার ঘোষণা করে। ওয়াক ওভারের নিয়ম অনুযায়ী জয়ী হয় সোশ্যাল সাইন্স এন্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদ।

পরবর্তী ম্যাচ শুরুর সময় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের দল ও শিক্ষার্থীরা খেলার মাঠ দখল করে এবং খেলায় বাধা প্রদান করে। আমরা সহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের মাঠ থেকে উঠানোর চেষ্টা করলেও তারা উঠে নি। যার ফলে সেদিনের ম্যাচগুলো স্থগিত করা হয়। টুর্নামেন্টের ব্যাপারে নির্ধারিত কমিটির সাথে মিটিং করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাতে পারবো।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজনেস স্টাডিজ টিমের একজন খেলোয়াড় জানায়, খেলোয়াড়রা মাঠ দখল করে নি। মাঠ দখল করেছে বিএস ফ্যাকাল্টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি হামলাকারী প্রমান না হওয়া সত্ত্বেও সে কেনো খেলতে পারবে না। আর হামলাকারী দায় অনেকজনর উপরে থাকলেও অনেকে বিভিন্ন অনুষদের টিমে খেলেছে। এই বিষয়ে যোক্তিক সমাধান প্রশাসন কেন নিচ্ছে না তার উত্তর জানতে চাই এবং পূর্ণাঙ্গ হামলাকারীর নাম প্রকাশ করে তাঁদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ফুটবল দলের কোচ মার্কেটিং বিভাগের লেকচারার কাজী মো. ইউসুফ বলেন, আমাদের ফুটবল টিমে একজন খেলোয়াড় এর বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা তাকে বাদ দিয়ে টিম ঘোষণা করি।

সে অনুযায়ী খেলোয়াড়দের জানানো হয় এবং প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু খেলার সময় মাঠে খেলোয়াড়রা খেলতে অস্বীকৃতি জানালে আমরা ওয়াক ওভার ঘোষণা করি এবং নিয়ম অনুযায়ী প্রতিপক্ষ দল বিজয়ী হয়। এতক্ষণ পর্যন্ত সুষ্ঠ ভাবেই সব সম্পন্ন হয়েছিল পরর্বতীতে আমরা চলে আসি। এর পরে খবর পাই তারা মাঠ দখল করে পরবর্তী ম্যাচ খেলতে বাধা দেয়। আমি যেহেতু কোচের দায়িত্বে ছিলাম আমার দায়িত্ব শুধু খেলা চলে কালীন সময় পর্যন্ত। আর আমি শুনেছি এই অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও মাঠ দখল করে খেলায় বাধা প্রদানে অংশ নেয়।

এ বিষয়ে জানার জন্য টিমের ম্যানেজার একাউন্টিং বিভাগের লেকচারার ফজলে রাব্বি কে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেন নি।

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর মামুনার রশিদ বলেন, শিক্ষার্থীরা খেলতে না চাইলে তো আমরা জোর করে খেলাতে পারি না। তারা খেলতে চাই নি আমাদের কোচ ম্যানেজার ওয়াক ওভার দিয়ে ম্যাচ শেষ করে চলে আসছে এরপরের ঘটনা সব শিক্ষার্থীদের ওপর। শারীরিক শিক্ষা বিভাগ যদি আমাদের কাছে বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীরা অন্য কোনো দলকে খেলতে না দেয় এ নিয়ে অভিযোগ করে তাহলে আমরা ফ্যাকাল্টির নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. শামসুজ্জোহা বলেন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের শিক্ষার্থীরা যেটা করেছে সেটা অবশ্যই গর্হিত কাজ এবং আইনের লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে আমরা অনুষদের ডিন, প্রো ভিসি এবং ভিসি স্যারকে জানিয়েছি। সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটা ফ্যাকাল্টির সমস্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো টুর্নামেন্ট বন্ধ হতে পারে না। আমরা টুর্নামেন্ট চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত খেলোয়াড় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. শাওন। সে বিজনেস স্টাডিজ ফুটবল টিমের অধিনায়ক হিসেবে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে।

অভিযোগকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা জানায়, শাওন ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিল এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সময় সেও সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে তার উপস্থিতির সত্যতা পাওয়া যায়। ঐদিনের একটা ছবিতে তাকে ভেটেরিনারি অনুষদ ভবনের ছাদ থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর ঢিল ছুড়তে দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত ২৪ তারিখ ৩য় অন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. এনামউল্যা। পরে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপাচার্য বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো শিক্ষার্থীকে টুর্নামেন্টে না খেলানোর নির্দেশনা প্রদান করে।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল