জাহিদুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি :
বিএনপির বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন 'বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী ৩০ লক্ষ মানুষ অকাতরে জীবন দিতে পারে পাকিস্তানের সেই প্রশিক্ষিত বাহিনীর বিরুদ্ধে। তারা কি আরেকটা পরাশক্তির কাছে নিজের মাথা নত দাবি করবে? পিন্ডির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিল্লির কাছেই নিজের মাথাকে নুইয়ে দিবে? পিন্ডির কাছে মাথা নত না করা জাতি, দিল্লির কাছেও করবে না। '
বৃহস্পতিবার ( ২৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবি চত্বরে শাখা ছাত্রদল কতৃক আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের জিয়াউর রহমান গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেয়েছি ১৯৭১ সালে। কিন্তু তখন ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেলেও নাগরিক স্বাধীনতা ছিলো না, ছিলো না কথা বলার স্বাধীনতা। আর এই না থাকার মধ্যে কুড়াল নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিতা গণতন্ত্রের বৃক্ষকে কেটে টুকরো টুকরো করে একদল গঠন করলেন তার নাম বাকশাল। সেই বাকশালের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে সেদিন ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিপাহী আর বাড়ি বাড়ি থেকে জনতা একত্রিত হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ল। ৭ই নভেম্বরের চেতনা ছিল সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আর গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা। যে দেশটাকে পরাধীন রাখতে চায় কোন পরাশক্তি এর বিরুদ্ধেই জেগে ওঠা ৭ই নভেম্বর। সার্বভৌমত্বকে অটুটভাবে শক্তিশালী করাই ৭ই নভেম্বর। সেই জাগরিত চেতনা হচ্ছে ৭ই নভেম্বর। যারা আমাদেরকে পরাধীন রাখতে চেয়েছিল, যারা আমাদেরকে মনে করেছিল তাদের পররাষ্ট্রনীতির অনুকরণ করতে হবে, অর্থনীতির অনুকরণ করতে হবে, সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হতে হবে আমাদেরকে।
ইসকন নেতা চিন্ময়ের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, চিন্ময় গ্রেপ্তার হয়েছে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী। হঠাৎ করে ইসকন নামের একটি সংগঠনের তৎপরতা দেখা গেল। সেই তৎপরতার মধ্যে এই দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য যত রকম পদ্ধতি নেওয়া দরকার সেটা করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। মুগ্ধর মত একটি তারুণ্য দীপ্ত ছেলে তার এক সতীর্থ গুলি খাচ্ছে, তার মধ্যে বলছে পানি লাগবে পানি। আপনি সেই মুগ্ধকে হত্যা করতে পারেন, রংপুরের আবু সাঈদের বুকে পুলিশ দিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করতে পারেন, নাফিসের মতো ছাত্রকে হত্যা করতে পারেন। আর আজকে চিন্ময় গ্রেফতার হয়েছে বলে আপনি কুমিরের কান্না কাঁদছেন। 'ক্রোকোডাইলস টিয়ারস' আপনার চোখ দিয়ে পড়ছে। এইটার জন্য আপনি কি পুরস্কার পাবেন ভারতের কাছ থেকে?
ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতি সম্পর্কে রিজভি বলেন, তিনি বলেন, আজকে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর চিন্ময় কে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিবৃতি দিচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরকে আমি বলি শেখ হাসিনার পোষ্য সন্তান যুবলীগ- ছাত্রলীগ যখন কিশোর বিশ্বজিৎকে হত্যা করল। কই সেদিন তো ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে কোন স্টেটমেন্ট আমরা দেখলাম না। তখন ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর নিশ্চুপ থাকল কেন? যখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদীর বান ছেড়ে দিয়ে বন্যা হলো। তখন তো শুধু মুসলমানদের ঘর ভেসে যায়নি, হিন্দুদেরও ঘর ভেসে গেছিল। সেই দিন তো ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মায়া দয়া তো দেখলাম না। আপনারা কি করছেন সেটা বাংলাদেশের জনগণ বোঝে।গত আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার শিশু, তরুণ কিশোরকে নির্বিচারে হত্যা করল যেই শেখ হাসিনা। তাকে আপনারা সেখানে আশ্রয় দিলেন। আজকে সার্জিস হাসনাত বলছে তাদের দুর্ঘটনার পেছনে ইসকনের হাত রয়েছে। এই ১৮ কোটি মানুষের দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে আপনারা কিছু করতে পারবেন না।
কেন্দীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর বিদেশে বসে দেশকে অস্তিশীল সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরবর্তী দেশকে বিশৃঙ্খলা করার জন্য যারা ষড়যন্ত্র করছিল ঠিক তেমনি ৫ আগষ্টের পরে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি দেশকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্রদল দীর্ঘ ৫ দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে সে সংগ্রামকে তরান্বিত করতে ৫ আগষ্টের ছাত্র - জনতার গণঅভুত্থানে ১০০ এর বেশি ছাত্রদলের নেতা- কর্মী শহীদ হয়েছেন। ২ হাজারের অধিক নেতাকর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এবং জুলাই - আগষ্ট আন্দোলনে ৫ হাজারের অধিক নেতাকর্মী ফ্যাসিস্ট হাসিনার মামলায় জেলে গিয়েছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আহবায়ক সুলতান আহমেদ রাহী। এসময় আরো বক্তব্য দেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম রফিকুল ইসলাম,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল আলিম, জিয়া পরিষদের সভাপতি এনামুল হক এবং নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হাছানাত আলী।
এমআই