বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

অর্থনীতির শ্বেতপত্র: আওয়ামী লীগ আমলে বছরে পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার

রোববার, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
অর্থনীতির শ্বেতপত্র: আওয়ামী লীগ আমলে বছরে পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্র হস্তান্তর করেছেন এটি প্রস্তুতে গঠিত কমিটির সদস্যরা। রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে। ছবি: সৌজন্যে

দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলের গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত কমিটি তিন মাসের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

আজ রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছেন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

কমিটি জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন এবং ভয়ংকর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র রিপোর্টে পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। 

নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর ফাঁকি, কর অব্যাহতির অপব্যবহার ও সরকারি তহবিলের দুর্বল ব্যবস্থাপনার ফলে রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, ব্যাহত হয়েছে উন্নয়ন। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে, যা কিনা এই সময়ের বার্ষিক প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ও প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগের দ্বিগুণেরও বেশি। এছাড়া যেসব কর অব্যাহতির সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো অর্ধেক কমানো গেলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্রে।        

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ভুল ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেওয়ায় লাখ লাখ মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের ৭৩ শতাংশ দরিদ্র-নন বলে চিহ্নিত করা হয়, ২০১৬ সালে যাদের হার ছিল ৬৬ শতাংশ। এদিকে মাত্র দুই দিন কাজ না করলে দারিদ্রে নিপতিত হবেন দেশে এমন মানুষের সংখ্যা ২ কোটির বেশি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম এ ধরনের বৈষম্যকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তীব্র করে তুলেছে।

বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির নেতৃত্ব দেন। কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আজ তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্বেতপত্র হস্তান্তর করেন। 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এই যুগান্তকারী কাজের জন্য কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত।'

'এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর যে অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি– তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। জাতি এই নথি থেকে উপকৃত হবে,' বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, 'আমাদের গরীব মানুষের রক্ত পানি করা টাকা যেভাবে তারা লুণ্ঠন করেছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। দুঃখের বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে এই লুটপাট চালিয়েছে। আমাদের বেশিরভাগ অংশই এর মোকাবিলা করার সাহস করতে পারেনি। পতিত স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ের রাজত্ব এতটাই ছিল যে বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোও এই লুণ্ঠনের ঘটনায় অনেকাংশে নীরব ছিল।'

সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে বলে জানান কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, 'সমস্যাটি আমরা যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও গভীর। এই ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে – কীভাবে (ক্রনি ক্যাপিটালিজম) চামচা পুঁজিবাদ অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে।'

কমিটির সদস্য ড. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন– প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে, ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

তিনি বলেন, ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। 

অর্থপাচারে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে বিচারকাজ শুরুর পরামর্শও দেন তিনি।
 

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল