নিজস্ব প্রতিবেদক:
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.তৌহিদ হোসেন বিশেষ করে কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বক্তব্যকে ‘অপপ্রচার’ অভিহিত করে বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি গতকাল সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে এক কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
ব্রিফিংয়ের পর উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিডিয়ার একটি অংশ, বিশেষ করে ভারতের গণমাধ্যম এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করেছি যে বাংলাদেশ এমন একটি সমাজব্যবস্থা, যেখানে সর্বদা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে।’ তিনি ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য বজায় রাখার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
উপদেষ্টা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা স্বীকার করেন। তবে জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো সামাজিক আদর্শের প্রতিফলন নয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ ধরনের ঘটনা একেবারে অস্বীকার করছি না। তবে সেগুলো বিচ্ছিন্ন এবং বিভিন্ন আমলেই বিক্ষিপ্তভাবে ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কেউ এটিকে ব্যাহত করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ব্রিফিংকালে তৌহিদ বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করে চাঞ্চল্য সৃষ্টির পরিবর্তে গঠনমূলক সমালোচনার আহ্বান জানান। তিনি কূটনীতিকদের সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের অটল অঙ্গীকারের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত। সরকার এটা বজায় রাখতে এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
সংবেদনশীল বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেদনের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা ঐক্য ও অন্তর্ভুক্তির প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার প্রতিফলিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, সরকার কূটনীতিকদের জানিয়ে দিয়েছে যে ধর্মীয় সম্প্রীতি সমাজের অংশ এবং সরকার তা বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে এমন ধারণা দেওয়ার জন্য দেশে এবং বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং মিডিয়ার একটি অংশ, বিশেষত ভারত এই প্রচারে যুক্ত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দ্বারা বিশ্বব্যাপী (সরকারের বিরুদ্ধে) প্রচারণা চলছে।’
তিনি বলেন, কেউ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সরকার তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তাঁরা কূটনীতিকদের কাছে ভারত সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি। তবে মিডিয়ার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধিও ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কোন পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তা কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড বরদাশত করবে না এবং সরকার সব নাগরিককে সমান চোখে দেখেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে কোনো সমস্যা নেই, আমরা এমনটা বলছি না। সমস্যা আছে এবং আমরা সেই সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করছি। সরকার অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে সফল হয়েছে।’ তিনি ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তবে ভারতের সঙ্গে নির্ধারিত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) এই মাসে অনুষ্ঠিত হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটি অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে ভারতের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা আমাদের লক্ষ্য।’
ভারত সরকারকে বাংলাদেশে একটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন তৌহিদ। তিনি বলেন, ‘এগুলো মমতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক মন্তব্য। আমি এ ধরনের পরামর্শের কোনো ভিত্তি দেখি না।’তথ্য সূত্র:বাসস
তানহা আজমী