নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার নূন্যতম পর্যায়ে নিয়ে আসার অঙ্গিকার রয়েছে। তবে বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, সিগারেটের বিক্রি ও ব্যবহারকারী ক্রমেই বাড়ছে। এভাবে চললে আগামী ১৬ বছরে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না।
মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘সিগারেটে কার্যকর করারোপ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কর্মশালা’য় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে এই কর্মশালায় অংশ নেন দেশের একুশটি মিডিয়া হাউজের প্রতিনিধিরা। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কামাল আহমেদ।
এসময় কামাল আহমেদ আরও বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে শুধু করের মাধ্যমে সমাধান খুঁজলে সমাধান পাওয়া যাবে না। অন্য আরও দিক রয়েছে। সেগুলোও মাথায় রাখতে হবে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লেও প্রকৃত আয় কমেছে। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। তাই কর হতে হবে মুদ্রাস্ফীতির বেশি। মানুষ অভ্যাসের কারণে কষ্ট করে হলেও সিগারেট কিনে খায়। তাই একে ক্রিমিনালাইজেশন করতে হবে। আইন আছে, কিন্ত তা কার্যকর করার সামর্থ্য পুলিশের নেই। তারা তাদের অন্য দায়িত্বগুলো পালন করতে হিমশিম খাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে নিরুৎসাহী করার কাজ করতে হবে।
সর্বশেষ পাঁচ অর্থবছরে গড় মূলস্ফ্যীতি ৩২ শতাংশ হলেও এ সময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ৬ থেকে ২২ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতির তুলনায় সিগারেটের দামবৃদ্ধি কম হওয়ায় জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক এই পণ্যটি ক্রমেই সহজলভ্য হয়েছে। ফলে দেশে ধূমপানের হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সকল স্তরের সিগারেটের দামবৃদ্ধির হার অন্তত চলতি বছরের গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি হওয়া দরকার বলে মনে করেন দেশের গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
কর্মশালায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী। তিনি বলেন যে, সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে সেই বর্ধিত দামের ওপর কার্যকর হারে করারোপ করা হচ্ছে না। ফলে একদিকে- সিগারেটের ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমানো যাচ্ছে না, অন্যদিকে- সিগারেট বিক্রি থেকে প্রাপ্য রাজস্ব থেকেও সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়কালে সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করার ফলে প্রতি বছর গড়ে ৬,৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে বলে জানান তিনি। অংশগ্রহণকারিদের প্রশ্নের উত্তরে কামাল আহমেদ বলেন- সিগারেটের দাম বাড়িয়ে এগুলোকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া- এই ক্ষতিকারক পণ্যটির ব্যবহার কমিয়ে আনার একটি খুবই কার্যকর পদ্ধতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যেই এই পদ্ধতির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশেও তাই সিগারেটের দাম প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে তার ওপর কার্যকর করারোপ করা একান্ত জরুরি বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি আগামী অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ নিশ্চিত করতে গণামধ্যমগুলোকে এখন থেকেই সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন- ডেইলি স্টার, ডেইলি সান, দি এশিয়ান এইজ, দি ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, দি এশিয়ান এইজ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, দৈনিক কালবেলা, দৈনিক ইত্তেফাক, জাগো নিউজ, দৈনিক আমাদের সময়, বাংলা ভিশন, নিউজ ২৪, এটিএন বাংলা, এখন টিভি, সময় টিভি, ভিউজ বাংলা, ঢাকা মেইল, ভোরের কাগজ, সময় জার্নাল এবং দৈনিক গণমুক্তির সাংবাদিকবৃন্দ।
উন্নয়ন সমন্বয়ের সিনিয়র প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর এবং ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব জাহিদ রহমান কর্মশালা সঞ্চালনা করেন। জনস্বার্থ বিষয়ে সংবেদনশীল গণমাধ্যমগুলোকে সিগারেটে কার্যকর করারোপ বিষয়ে তথ্য ও গবেষণা সহায়তা দিয়ে যেতে উন্নয়ন সমন্বয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান তিনি।
এমআই