সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
প্রবাদ আছে, ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। যার ভাবার্থ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়া। তবে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সেই প্রবাদ বেশ বিবর্তিত হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন ভুল থেকে শিক্ষা নিতে নারাজ। ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা নিয়ে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে বারবার ‘বেল ফাটলেও’ হুঁশ হয়নি কর্তৃপক্ষের। এই নিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে আলোচিত ঘটনার প্রেক্ষিতেও সংশ্লিষ্টরা সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতো পারেনি। প্রতিবারই হয়তো ক্যামেরা নষ্ট নয়তো হার্ডডিস্ক বা মনিটর নষ্ট দেখা যায়। নিরাপত্তার সার্থে স্থাপন করা এসব ক্যামেরাই যেন কার্যত অনিরাপদ। বিভিন্ন সময় ক্যামেরা ছিঁড়ে পড়ে যাওয়া এবং হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাও দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরে কক্ষের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এর রেশ না কাটতেই ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের দ্বারা উপাচার্যের একান্ত সচিবের (পিএস) কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়। এসব সহ ক্যাম্পাসে আলোচিত র্যাগিংয়ের ঘটনার পর কোনো ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে এক দপ্তরকে অন্য দপ্তরের উপর দায় চাপাতে দেখা গেছে। এদিকে এই বছরের ১১ জানুয়ারী ক্যাম্পাসে ককটেল উদ্ধার, ৫ আগস্টের পর রেজিস্ট্রার, প্রকৌশলী, হিসাব পরিচালকের দপ্তরের নামফলক ভাঙচুরের ঘটনাতেও ফুটেজ উদ্ধারে সক্ষম হয়নি কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে আবাসিক হল, কেন্দ্রীয় মসজিদে চুরি, মারামারি সহ বিভিন্ন ছোট-বড় ঘটনার ফুটেজ পাওয়া যায়নি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সিসিক্যামেরা স্থাপন ও দেখভালের জন্য বহুবার দাবি জানালেও সেটা আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন মনোভাব দেখিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষ। সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ে বারবার এমন অভিজ্ঞতার ফলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে ঢিলেমি প্রদর্শন করে এসেছে। সতর্কতাসরূপ নিরাপত্তা জোরদারতো হয়ইনি বরং যত সময় গড়িয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তত নড়বড়ে হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, ডায়না চত্ত্বর, জিয়া মোড় ও ডরমেটরি সংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মোট ২০টি সিসি ক্যামেরা চালু করে তৎকালীন প্রশাসন। যেগুলো প্রক্টর অফিস ও আইসিটি সেল থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১টি ক্যামেরা সক্রিয় রয়েছে। টিএসসিসি, চিকিৎসা কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকার কোন ক্যামেরাই সচল নেই।
সিসিটিভি ক্যামেরার এমন বেহাল দশার সুযোগ নিয়ে ক্যাম্পাসে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বলে অভিমত সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তাই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অচল ক্যামেরাগুলো মেরামত করা এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে দ্রুত ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
টিএসসিসির পরিচালক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, টিএসসিসির সিসি ক্যামরার বিষয়টি আমাদের তদারকির মধ্যে রয়েছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রশাসনকে নোট দিব।
আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলী বলেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি মূলত প্রক্টরিয়াল বডির কাজ। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদেরকে প্রযুক্তিগতভাবে সহায়তা করা। এ বিষয়ে প্রক্টরের সাথে কথা বলেছি। তারা একটি জরিপ করেছেন আশা করি দ্রুত ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ক্যাম্পাসের যেসব পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা ছিল সেগুলো বেশিরভাগই অকেজো। সেগুলো সংস্কার ও নতুন করে লাগানো হবে। এমনকি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো খুঁজে বের করে সেখানেও সিসি ক্যামরো লাগানো হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, প্রক্টরের সাথে কথা হয়েছে। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তানহা আজমী