জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
বাল্য বিবাহ বাংলাদেশের একটি জটিল সামাজিক সমস্যা, যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত। এটি শুধুমাত্র একটি কুসংস্কারপূর্ণ প্রথা নয় বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্বাস্থ্যগত সমস্যা, শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং দারিদ্র্যের চক্রে আবদ্ধ হওয়ার মতো ভয়াবহ পরিণতি।
হাতে প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন ,কন্ঠে স্লোগান,বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে ফুলবাড়ী উপজেলার এক সংগ্রামী তরুনি মিষ্টি খাতুন । সে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার শাহবাজার ফাজিল মাদ্রাসার কামিল ২য় বষের ছাত্রী এবং বড়ভিটা ইউনিয়নের পশ্চিম ধনীরাম গ্রাামের নবির উদ্দিনের কন্যা। নবির উদ্দিন পেশায় একজন দিনমজুর,সম্পদ বলতে শুধু বাড়িভিটা। শ্রম বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই চালাতে হয় পাচ সদস্যের সংসার। দারিদ্র্যতার কাছে হেরে গিয়ে তার দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অল্প বয়সেই,যাকে বলে বাল্য বিবাহ।
একই পথে ছোট মেয়ে মিষ্টি খাতুন কেও বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো অসহায় শ্রমিক পিতা নবির উদ্দিন কিন্তু,মিষ্টি খাতুন তার দুই বোনের বাল্য্বিবাহের পরবর্তী দূর্বিষহ জীবন দেখে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন হয়েছিলো। সে দেখেছিলো বাল্য বিবাহের কারনে তার দুই বোনের সংসারেই অভাব অনটন,অসুস্থ্যতা,কলহ,বিশৃঙ্খলা।সে কোনো ভাবেই তার পিতার প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিলো না।সে রুখে দাঁড়ায় তার পরিবারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।
মিষ্টি খাতুনের অনড় অবস্থানের কাছে হার মানে তার পিতা নবির উদ্দিন।দুশ্চিন্তা তার কপালে ভাজ ফেলে দেয়। মেয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে অঙ্গীকারবদ্ধ। যেখানে সংসার চালানোই বড় কঠিন সেখানে মেয়ের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা তাকে ফেলেছিলো বিপাকে।মিষ্টি খাতুনের এই সংগ্রামের সহযোদ্ধা হিসেবে তার পাশে কেউ না থাকলেও সে একা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলো।
মিষ্টি খাতুনের এই সংগ্রামের কথা জানতে পারেন মহিদেব যুব সমাজকল্যান সমিতি সিএনবি প্রকল্পের ফুলবাড়ী উপজেলার ফিল্ড ফ্যাসিলেটর মো: জাহিদুল ইসলাম।তিনি এগিয়ে আসেন মিষ্টি খাতুনের বাল্য বিবাহ রোধে সংগ্রামের সহযোগী হিসেবে।তিনি মিষ্টি খাতুন কে তার গ্রুপের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন ও তাকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।মিষ্টি খাতুন নতুন উদ্যমে অনুপ্রানিত হয়ে গ্রামের মেয়েদের নিয়ে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে বাড়ি বাড়ি প্রচারণা শুর করেন,সেই সাথে সে বিভিন্ন রকম প্ল্যাকার্ড,ফেষ্টুন,ব্যানার নিয়ে গণ সংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।তার এই উদ্যোগে অনেক মেয়েই বাল্য বিবাহের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা বাংলাদেশের দরিদ্রতম জেলা।সংগত কারনেই এই জেলার বাল্য বিবাহের হার অনেক বেশী।বাল্য বিবাহের ফলে- মেয়েদের শিক্ষার অধিকার হরণ করা হয়।সে ভবিষ্যতে একজন সেবিকা হয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রের উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে চায়।
মহিদেব যুব সমাজকল্যান সমিতি সিএনবি প্রকল্পের ফুলবাড়ী উপজেলার ফিল্ড ফ্যাসিলেটর মো: জাহিদুল ইসলাম জানান,অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় মেয়েরা শিক্ষাজীবন অসম্পূর্ণ রেখে সংসার জীবনে প্রবেশ করে। ফলে তারা আর্থিক স্বাধীনতা ও সামাজিক ক্ষমতায়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।কম বয়সে গর্ভধারণের কারণে মেয়েদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুর ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।এছাড়াও বাল্য বিবাহের ফলে মেয়েরা কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারে না। এতে পরিবার এবং সমাজ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
মহিদেব যুব সমাজকল্যান সমিতি সিএনবি প্রকল্পের ফুলবাড়ী উপজেলার ইয়থ গ্রুপ লিড এর টেকনিক্যাল অফিসার মো: ইলিয়াস আালী জানান,বিষয়টি জানার পর মিষ্টি খাতুনকে বড়ভিটা যুব সংগঠন প্রকল্পের সই গ্রুপের সদস্য করা হয় এবং অথনৈতিক ভাবে ক্ষমতায়িত করার লক্ষে প্রকল্প থেকে ১৭০০০ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়।তিনি আরো জানান,মিষ্টি খাতুনকে প্রকল্পের মাধ্যমে যাবতীয় সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
সময় জার্নাল/এলআর